শেরপুরের তৈরি আসবাবপত্রের মানসম্মত কাঠ, বাহারি কারুকাজ ও নিত্য নতুন নকশার কারণে দেশজুড়ে চাহিদা বাড়ছে জেলায় গড়ে উঠেছে ছোট-বড় প্রায় হাজারো কারখানা। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে অন্তত ১০/১২ হাজার মানুষের। ভাগ্য বদলে এখন অনেকেই স্বাবলম্বী ও সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন।
জানা যায়, সদর উপজেলার শেরীপাড়া, মধ্যশেরী, পূর্বশেরী, অষ্টমীতলা, পুরাতন গরুহাটি, বয়রা, মধ্যবয়ড়া ও কুসুমহাটিসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে কাঠের আসবাবপত্র তৈরির কারখানা ও দোকান। এসব কারখানায় খাট, সোফা সেট, ডাইনিং ও ড্রেসিং টেবিল, আলমারি, ওয়ারড্রব, কেবিনেট, আলনা, চেয়ার, টেবিলসহ বিভিন্ন ধরনের কাঠের আসবাবপত্র তৈরি করা হয়।
শেরপুরের তৈরি ওইসব কাঠের আসবাবপত্র রাজধানী ঢাকাসহ, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, টাঙ্গাইল, জামালপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে। মান ও রুচিসম্মত হওয়ায় দূরের জেলা থেকেও অর্ডার আসে। অন্যদিকে ব্যবসা সফলতার সুবাদে ওইসব কারখানাগুলো জেলার অর্থনীতির ভিত শক্ত করতেও রাখছেন ভূমিকা। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই শিল্পের আরও প্রসার ঘটার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।
সরেজমিনে শহরের অষ্টমীতলা এলাকায় আসবাবপত্র তৈরির কারখানা ঘুরে দেখা যায়, কাঠের আসবাবপত্র ও বাহারি নকশার কাজ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। আবার কেউ সেগুলো বার্নিশ করছেন, কেউ বা রোদে শুকাচ্ছেন।
কাঠমিস্ত্রি শহিদুল ইসলাম জানান, একটা সময় এই অঞ্চলের অনেক মানুষ ছিল কর্মহীন। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো। কিন্তু ২০০৭ সালের পর থেকে পাল্টে যেতে শুরু করে সেই চিত্র। ছোট ছোট দোকান দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন তারা। আজ প্রায় প্রতিটি ব্যবসায়ী কয়েকটি কারখানা ও দোকানের মালিক। আর অনেকেই হয়ে উঠেছেন সফল উদ্যোক্তা। যারা নিজেদের পাশাপাশি জেলার অর্থনীতিতে দারুণ ভূমিকা রাখছেন।
কাঠমিস্ত্রি মিসকিন মিয়া বলেন, আমরা কাঠমিস্ত্রিরা দৈনিক মজুরি ৬শ-৭শ টাকা নিই। আবার যারা আমাদের হেলপার, তাদের মজুরি কিছুটা কম। অনেক সময় চুক্তি নিয়েও কাজ করি।
নকশা মিস্ত্রি হামিদ মিয়া বলেন, কাঠের ওপর নকশা ফুটিয়ে তোলা খুব সময়ের ব্যাপার। আস্তে-ধীরে নকশার কাজ করতে হয়। যদিও এখন মেশিনে নকশা করা যায়। তবে মেশিনে নকশার পর ফিনিশিংয়ের জন্য আমাদের হাতে কাজ করতে হয়। কাজের নকশা বুঝে আমরা টাকা নিই।
মেসার্স সাঈদ ফার্নিচার মার্টের স্বত্বাধিকারী চানু মিয়া বলেন, শেরপুর সদর উপজেলায় একসময় হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি আসবাবপত্র বিক্রির দোকান ছিল। সময়ের ব্যবধানে এখন জেলা সদরের আশপাশে শতশত দোকান গড়ে উঠেছে। আমরা ব্যবসায়ীরা দক্ষ কারিগর দিয়ে নতুন নতুন নকশার আসবাব তৈরি করে থাকি। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক নকশার প্রায় সব ধরনের আসবাব তৈরি করি, যা গৃহস্থালিতে মানানসই হয়। আমরা ভালো মানের কাঠ ও নজরকাড়া ডিজাইনে আসবাবপত্র তৈরি করি, তাই দেশজুড়ে এর চাহিদা রয়েছে।
শেরপুর ফার্নিচার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আবদুল হান্নান হীরা বলেন, আমাদের এখানে তৈরি কাঠের আসবাব রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। বাহারি কারুকাজ আর নিত্য নতুন নকশার তৈরি এসব আসবাব আমরা খুব অল্প লাভেই বিক্রি করি। তাই এর চাহিদা বেশি। সরকারের সহযোগিতা পেলে আসবাবপত্র রপ্তানিও করা সম্ভব হবে।
এ ব্যাপারে জেলা বিসিক কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপক বিজয় কুমার দত্ত বলেন, এ অঞ্চলের কাঠের মান ভালো এবং আসবাবপত্রের চাহিদা ব্যাপক। এরমধ্যে অনেকেই ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে তাদের ব্যবসার পরিধি বাড়িয়েছেন। এ শিল্প প্রসারে উদ্যোক্তারা এগিয়ে এলে সরকারি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও পরামর্শ দেয়া হবে।