ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার সাফদারপুর দারুল উলুম আলীম মাদ্রাসার ৫তলা ভিত বিশিষ্ট ৪তলা ভবনটির নির্মাণ কাজ নির্দ্ধারিত সময় সম্পন্ন তো হয়নি বরং অতিরিক্ত আরো দুই বছর ধরে পড়ে আছে নির্মাণাধীন ভবনটির কাজ। ফলে বাধ্য হয়ে মাদ্রাসার জরাজীর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও খোলা নির্মাণাধীন ভবনের ২য় তলায় ঝুঁকি নিয়ে কমলমতি ছাত্র ছাত্রদের ক্লাস নিচ্ছে শিক্ষকরা।
উপজেলার সাফদারপুর দারুল উলুম আলীম মাদ্রাসায় প্রায় ৬ শতাধীক ছাত্র ছাত্রী লেখা পড়া করছে। ছাত্র ছাত্রীদের ক্লাস রুম ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন “নির্বাচিত মাদ্রাসা সমূহে উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় (দ্বিতীয় পর্যায়ের) মাদ্রাসাটিতে টে-ারের মাধ্যমে গত ২৩ ফেরুয়ারী ২০২০ সালে ২ কোটি ৯৩ লক্ষ ৪৪ হাজার ৯ শত ৬১ টাকা ব্যয়ে ৫তলা ভিত বিশিষ্ট ৪তলা ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কাজটি ৫৪০ দিনের প্রকল্প। কাজটি পান কুষ্টিয়ার এমডি আনিচুর রহমান, সরকারী ঠিকাদার ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। কাজটি যথা সময়ে শুরু করেন ঠিকাদার। তারা ৩য় তলার ছাদের সেণ্টারিং ও কিছু রডের কাজ করেন দুই বছর আগে। কাজটি ওই পর্যন্তই ফেলে রেখে ঠিকাদারসহ তার লোকজন হাওয়া হয়ে গেছে। সেই থেকে ওই অবস্থায় পড়ে আছে দুই বছর ধরে। এমন অভিযোগে সরেজমিনে বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদক ওই মাদ্রাসায় গেলে দেখতে পান জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস করছে ছাত্র ছাত্রীরা। এমনকি খোলা নির্মাণাধীন ভবনের ২য় তলায় ঝুঁকি নিয়ে ছোট ছোট শিশুরা ক্লাস করছে। বিষয়টি নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ জাকির হুসাইন এ প্রতিকেদককে বলেন- ক্লাস রুমের অভাবে বড় ঝুঁকি নিয়ে ছাত্র ছাত্রীদের ক্লাস নিতে হচ্ছে। কিছুদিন আগে দুই শিশু ক্লাস শেষে খেলতে যেয়ে নির্মানাধীন ভবনের ছাঁদ থেকে নিচে পড়ে যায়। নিচে বালুর স্তুুপ থাকায় শিশু দুটি সামান্য আঘাত পায়। তারপরও সতর্কতার সাথে নির্মানাধীন ভবনেই ক্লাস নিতে হচ্ছে। তিনি বলেন- সংশ্লিষ্ট ঝিনাইদহ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মৌখিক অভিযোগ করে কোন কাজ হয়নি। আর ঠিকাদার তো আমার ফোনই ধরেন না। নির্মাণাধীন ভবনের জায়গায় আগে টিনের সেট-এ শিশুদের ক্লাস নেয়া হতো। সেটা ভেঙ্গে দিয়ে এখন চার তলা ভবণ নির্মাণ হচ্ছে। তাও ভবনটির কাজের এ অবস্থা। যে কারণে ক্লাশরুম সংকটে ঝুঁকি নিয়েই আমাদের মাদ্রাসা চালাতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে কথা হয় এ কাজের ঠিকাদার এমডি আনিচুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন- আমি শারীরিক ভাবে অসুস্থ থাকায় কাজটি করতে দিয়েছিলাম ঝিনাইদহের ঠিকাদার শাহিন খানকে। তিনি কাজটি করতে করতে বন্ধ রেখেছেন। এ কাজ বন্ধ থাকায় ইতি মধ্যেই সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে আমাকে চিঠি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন- হয়তো কাজের উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় কাজটিতে প্রচুর টাকা লস হওয়ার আশংকায় ওই ঠিকাদার কাজে গড়িমসি করছেন। আমি আজই দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদার শাহিন খানকে বলবো।
দেড় বছরের (৫৪০ দিন) কাজ সাড়ে তিন বছরেও শেষ না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ঝিনাইদহ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হিমেল বলেন - কাজটি অনেক আগেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কাজটি বারবার বলার পরও শেষ না করায় আমি ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে যা যা ব্যবস্থা নেয়ার তা আমি নিয়েছি। তিনি বলেন, গত রবিবারে (০৪.০৬.২০২৩) আমি ঝিনাইদহ থেকে অন্যত্র বদলি হয়ে গেছি। এখন ঠিকাদার কাজ না করলে তিনিই ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের ঠিকাদার শাহিন খান বলেন- কাজটি তার কেনা। কাজটি করতে একটু দেরি হয়েছে, তবে চলমান ছিল। গত এসএসসি পরীক্ষার কারণে ৩ তলার ছাদটি ঢালাই দিতে পারিনি। আগামী সপ্তাহে ছাদটি ঢালাই দেয়া হবে।