ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের শাহজাদাপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে সকাল ১১টায় ঝুলছে তালা। স্থানীয় গরীব অসহায় নারী পুরূষরা ঘুরছেন সেবার আশায়। সোমবার অজপাড়া গাঁয়ের ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এমন অনিয়ম ধরা পড়ে। সাথে সাথে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শোকজ করেছেন এমএলএসএস প্রাণেষ চক্রবর্তীক। আগামী তিন কর্ম দিবসের মধ্যে শোকজরে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেবা গ্রহীতারা জানতে চান বন্ধ এই কেন্দ্রের সরকারি বরাদ্ধের ওষুধ গুলি যায় কোথায়?
সরজমিনে স্থানীয় লোকজন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, দীর্ঘ দিন ধরে চিকিৎসক, ফার্মাসিষ্ট, সেকমো, নাইটগার্ডসহ গুরূত্বপূর্ণ পদ গুলোতে কোন লোক নেই। শুধুমাত্র প্রণষ কুমার নামের একজন এমএলএসএস দিয়েই চলছে কেন্দ্রটি। ফলে চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছে গ্রামের লোকজন। এই কেন্দ্রে বসেন পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের একজন এফডব্লিউসি। সপ্তাহের অধিকাংশ সময় কেন্দ্রটি বন্ধ থাকার অভিযোগ করেছেন স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা। মাঝে মধ্যে দেখা মিলে প্রণষ কুমার নামের এক ব্যক্তির। তিনি আসলেও ২/১ ঘন্টা বসে চলে যান। হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন পুরো সপ্তাহের। ওষুধ বিতরণও দেখান ভূঁয়া। সরকার ওষুধ দিলে কি হবে? আমরা তো আর ঠিকমত পায় না। একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, এমএলএসএস ভূঁয়া বিতরণ দেখিয়ে সরকারি ওষুধ গায়েব করছেন নিয়মিত। হাজিরা রেজিষ্ট্রার ও ওষুধ বিতরণ রেজিষ্ট্রার খতিয়ে দেখলে অনিয়মের সত্যতা বেরিয়ে আসবে। লোকবল শুন্য এই কেন্দ্রে প্রতি তিন মাস পর সরকারি ঔষধের বরাদ্ধ আসছে। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানতে চান, নিয়মিত বন্ধ থাকা ওই কেন্দ্রের জন্য বরাদ্ধকৃত প্যারাসিটামল, এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেট, আয়রণ, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, কৃমিনাশক সিরাপ, কৃমিনাশক ট্রাবলেট ও বিভিন্ন অয়েনমেন্ট গুলো কোথায় বিতরণ হয়? শাহজাদাপুর গ্রামের বাসিন্দা জহরলাল ভৌমিক ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আজহার মিয়া বলেন, এক বছরেরও অধিক সময় ধরে এই কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা নেই। প্রাণেষ নামের এক লোক মাঝেমধ্যে আসেন। বেশীর ভাগ সময় বন্ধই থাকে। এভাবে একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র চলতে পারে না। চিকিৎসক না দিলে কর্তৃপক্ষ এটিকে ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করে দেওয়াই ভাল। আরেকটি সূত্র জানায়, তার প্রকৃত নাম ছিল আশিষ চক্রবর্তী। অষ্টম শ্রেণি পাস দেখিয়ে সরকারি নেয়ার জন্য কিছু কাগজপত্রে পরিবর্তন করে প্রাণেষ চক্রবর্তী করা হয়েছে। গ্রামবাসী তাকে প্রাণেষ নয় আশিষ নামেই চিনেন। অভিযুক্ত প্রাণেষ চক্রবর্তী বলেন, সকল অভিযোগ সত্য নয়। কেন্দ্রটির দরজা জানালা ভাঙ্গা। ভেতরের অবস্থা ভাল না। চিকিৎসকসহ লোকবল নেই। আমি একা পারি না। এ গুলো বলতে ১২টার দিকে সরাইল হাসপাতালে এসেছি। প্রতি তিন মাস পরে কত ওষুধ দেয় তালিকা দেখলেই বুঝতে পারবেন। সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো. নোমান মিয়া প্রাণেষের অনিয়মের বিষয়টি জানার কথা স্বীকার করে বলেন, তাকে সঙ্গে সঙ্গে শোকজ করেছি। আগামী তিন কর্ম দিবসের মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে। বেতনও বন্ধ করে দেওয়া হবে।