ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুলপরী খাতুন নামে এক শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতনের ঘটনায় আত্মপক্ষ সমর্থন সুযোগ পেয়েছেন ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ পাঁচ অভিযুক্তরা। সোমবার (১২ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে উপাঁচার্যের কার্যালয়ে তাঁদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে চূড়ান্ত বক্তব্য শুনলেন প্রশাসন। এ ছাড়া লিখিত প্রতিবেদনের বাহিরে অতিরিক্ত কোন আত্মসমর্থকমূলক কথা থাকলে সেইটা উপস্থাপনের সুযোগ দিয়েছে প্রশাসন। বেলা ১১ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত প্রায় ১ ঘণ্টা বক্তব্য শুনেছেন কর্তৃপক্ষ।
অভিযুক্তরা হলেন - বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স এ- ব্যাংকিং বিভাগের তাবাচ্ছুম ইসলাম ও মোয়াাবিয়া জাহান, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম ও ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মী।
অভিযুক্তরা আত্মপক্ষ সমর্থনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাঁচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম, উপণ্ডউপাঁচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সেলিনা নাসরিন ও ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা চৌধুরী বলেন, ‘ আমাদের ডাকা হয়েছিল। আমাদের থেকে প্রশাসন পূর্বে কয়েক বার প্রতিবেদন লিখিত নিয়েছে। আজ আবারো জিজ্ঞাসা করছিল কোন নতুন বা অতিরিক্ত তথ্য অ্যাড করতে চাই কিনা। পরে তেমন কোন তথ্য আমি দেয়নি। অন্যরা দিতে পারে তবে আমার চূড়ান্ত লিখিত প্রতিবেদন দেওয়া হয়ে গিয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে নিরাপত্তা পেয়েছিলেন কিনা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘আমি বহুবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর স্যারকে নক দিয়েছি আমাদের অতিরিক্ত নিরাপত্তা প্রদানের জন্য। কিন্তু তারা আমাদের কোন দৃশ্যমান নিরাপত্তা দেয়নি। আমাদেরকে প্রশাসন ভবনের নিচে এনে তারা ছেড়ে দিয়েছে। এত উদাসীনতা দেখে খুবই কষ্ট লেগেছে।’
এ বিষয়ে প্রক্টর শাহাদাৎ হোসেন আজাদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতিতে অভিযুক্ত সকলকে চিঠি পাঠিয়ে আত্মসমর্থনের জন্য সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তারা উপস্থিত হয়ে নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছে। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির সদস্যদের ইনডিভিজুয়াল তদন্ত প্রতিবেদন তৈরী ও জমা দিতে বলেছে প্রশাসন। আমাদের হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে আগামী জুলাই মাসের ১৯ তারিখের মধ্যে এই বিষয়টির ইতি টানতে হবে। এ ছাড়া এ বিষয়ে আগামী ছুটি ৮ জুলাই এর পরে মিটিং করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’
নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা অভিযুক্তরা আসার পূর্বেই খোঁজখবর নিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা নিয়ে কোন সমস্যাই নেই। তারপরো আমাদের সহকারী প্রক্টরেরা তাদের যতটুকু পেরেছে খোঁজখবর রেখেছে। তারা প্রশাসন ভবনের নিচে পর্যন্ত নামিয়ে দিয়ে এসেছে, পরে গাড়ি নিয়ে টহল দিয়েছে। ’
১২ ফেব্রুয়ারি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ফুলপরী খাতুনকে রাতভর আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ ওঠে। ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরার নেতৃত্বে তার অনুসারীরা সেদিন তার খারাপ ভিডিও ধারণ, গালাগাল এবং এ ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ফুলপরী। বিষয়টি নিয়ে হল প্রশাসন, ছাত্রলীগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও উচ্চ আদালতের নির্দেশে জেলা প্রশাসনের তদন্তে নির্যাতনের সত্যতা মিলে। এর প্রেক্ষিতে অভিযুক্তদের হল এবং শাখা ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া গত ০৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদেরকে ছাত্র-শৃঙ্খলা মিটিংয়ে সাময়িক বহিষ্কার আদেশ দেওয়া হয়।