বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধী কাছাকাছি প্রার্থীর চেয়ে দ্বিগুন ভোট বেশি পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। তিনি পেয়েছেন ৮৭ হাজার ৮০৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা মার্কার প্রার্থী পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৮২৮ ভোট।
সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন, নির্বাচনে মোট ভোট পড়েছে ৫১.৪৬%। অর্থাৎ ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৭ ভোটের মধ্যে ১ লাখ ৪২ হাজার ১৭৭ ভোট পরেছে। আর প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ৪২১টি ভোট বাতিল হয়েছে। সেই হিসেবে বৈধ ভোটের সংখ্যা ১ লাখ ৪১ হাজার ৭৫৬টি। নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগের চেয়েও কম ভোট পেলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের জামানত বাতিলের বিধান রয়েছে। সে অনুযায়ী মেয়র প্রার্থীদের প্রত্যেককে জামানতের টাকা ফেরত নিতে হলে ১৭ হাজার ৭৭২ টি ভোট পেতে হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ছাড়া আর কোন প্রার্থী এ ভোট পাননি। তাই বাকী পাঁচজন প্রার্থীর জামানত হারাতে হচ্ছে। যে টাকা নির্বাচন কমিশনের আয়ের খাতে চলে যাচ্ছে।
ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, সবচেয়ে কম ৫২৯টি ভোট পেয়েছেন হাতি মার্কার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো. আসাদুজ্জামন। এর ওপরে আছেন হরিণ মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আলী হোসেন হাওলাদার। তিনি পেয়েছেন ২ হাজার ৩৮১ ভোট। জাকের পার্টি মনোনীত গোলাপ ফুল মার্কার মিজানুর রহমান বাচ্চু পেয়েছেন ২ হাজার ৫৪৬ ভোট। জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙল মার্কার প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস পেয়েছেন ৬ হাজার ৬৬৫ ভোট এবং তৃতীয় অবস্থানে থাকা টেবিল ঘড়ি মার্কার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান রূপন পেয়েছেন ৭ হাজার ৯৯৯ ভোট।
সূত্রমতে, পাঁচজন মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি পাঁচ ডজনেরও অধিক কাউন্সিলর প্রার্থীকে জামানত হারাতে হচ্ছে। বরিশালের অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন বলেন, জামানত জব্দের আইন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য একই। তবে মেয়রের ভোটের হিসেব হবে ৩০টি ওয়ার্ডের মোট কাস্টিং ভোটের ওপর। আর কাউন্সিলরদের টা হবে প্রতি ওয়ার্ডের মোট কাস্টিং ভোটের ওপর।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী আর নিয়মানুযায়ী, এবারের নির্বাচনে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডের সাধারণ ওয়ার্ডের ১১৮ জন কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ৪৭ জন এবং ৪১ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ১৫ জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে। জামানত বাজেয়াপ্তের তালিকায় রয়েছেন মোট ৬২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী।
২৯ বছর পর মসনদ হারালেন জাপা প্রার্থী ॥ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২৯ বছর ধরে কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করা জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এ.কে.এম মুরতজা আবেদীন পরাজিত হয়েছেন। জনপ্রিয় নয়, তারপরেও এমন প্রার্থীর সাথে মুরতজার পরাজয়ের বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না তার অনুসারীরা। স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, মুরতজা আবেদীন এমন প্রার্থীর সাথে পরাজয় বরণ করেছেন যিনি কিনা তার ছোট ভাইয়ের ডামি প্রার্থী হিসেবে পরিচিতো ছিলেন।
জানা গেছে, মুরতজা আবেদীন ১৯৯৫ সালে তৎকালীন পৌরসভা নির্বাচনে ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৩ সালে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হলে একই ওয়ার্ডে থেকে টানা চারবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। সে হিসেবে তিনি ২ নম্বর ওয়ার্ডে ২৯ বছর ধরে কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করছেন। এবারের সিটি নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছিলেন বর্তমান পরিষদে কাউন্সিলর মুরতজা আবেদীন। কিন্তু এবারের নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন তরুণ প্রার্থী আরিফুর রহমান মুন্নার কাছে। এর ফলে জাপা প্রার্থীর ২৯ বছরের রাজত্বের অবসান ঘটলো। নব নির্বাচিত মুন্নার ছোট ভাই রইজ আহমেদ মান্না মহানগর ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত হওয়া কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। যিনি (মান্না) নৌকা মার্কার প্রার্থীর কর্মীদের মারধরের অভিযোগে গত ১৫ মে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। কারাগারে থেকেই মান্না ও ডামি প্রার্থী হিসেবে তার বড়ভাই মুন্না কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছিলেন, কিন্তু মান্নার মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় মুন্না প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধীতা করেন।