জমি বিক্রির নাম করে প্রায় ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারনা ও খাস জমি অবৈধভাবে দখলের অভিযোগ উঠেছে নওগাঁ সদর উপজেলার চকবিরাম গ্রামের আজিজুল হক ও আবদুল মান্নান নামে দুই সহোদরের বিরুদ্ধে। অবৈধ দখলদারদের মারমুখি আচরনের কারণে বাধ্য হয়ে খাস জমি উদ্ধার করতে পারেনি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রফিকুল ইসলাম।এদিকে প্রতারনার শিকার নওগাঁ মডেল টাউন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ¦ মো: আবদুল কুদ্দুস প্রতিকার চেয়ে মঙ্গলবার শহরের একটি রেষ্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনে ওই সহোদর ভাইয়ের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, নওগাঁ শহরের চকপাথুরিয়া ও চকবিরাম মৌজায় কিছু নিচু জমি নিয়ে ২০১৬ সাল থেকে আধুনিক মানের আবাসন গড়ে তোলার কাজ করছে নওগাঁ মডেল টাউন। ইতোমধ্যেই ৭৫টি প্লটে মাটি ভরাট ও উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ৬৮ টি প্লট বিক্রি হয়েছে। কয়েক জন বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছেন।
প্রকল্পের দক্ষিণ প্রান্তে বাস টার্মিনাল ও নওগাঁ-মহাদেবপুর সড়কের সংঙ্গে আবাসনে চলাচলের জন্য ৪০ ফুট প্রশস্ত রাস্তা সংযুক্ত আছে। কিন্তু ২০১৭ সালে চকবিরাম মহল্লার আজিজুল হক ও তার ভাই আবদুল মান্নান সেই রাস্তার মালিকানা দাবি করেন। পরবর্তীতে তারা জমির ৮০ খতিয়ানের ২৮৪ দাগের কাগজমূলে প্রকল্পের রাস্তা বরাবররে তাদের জমি রয়েছে বলে তারা দাবি করেন। দাবির প্রেক্ষিতে প্রায় ৬ বছর আগে ২ কাঠা জমি বিক্রির শর্তে একটি চুক্তিনামার মাধ্যমে ২৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকা তারা গ্রহন করেন। কিন্তু প্রায় ৬ বছর অতিবাহিত হলেও ওই জমি রেজিষ্ট্রী করে দেন নাই তারা। এখন টাকা ফেরত চাইতে গেলে বিভিন্ন ওজর-আপত্তি, তালবাহানা ও কালক্ষেপনসহ প্রতারণার আশ্রয় নেয় আজিজুল ও আবদুল মান্নান। তারা একাধিকবার মধ্যরাতে মডেল টাউনের প্রবেশ পথে অবৈধভাবে ইটের প্রাচীর নির্মাণ করার চেষ্টা করে প্রকল্পের সুনাম ক্ষুন্ন করার অপতৎপরতা চালায়। টাকা ফেরত না দিয়ে সামাজিকভাবে হেয় করার মানসে দুষ্কৃতকারীদের ছত্রছায়ায় তারা নানা তৎপরতা চালায় বলে অভিযোগ করেন তিনি। খাস জমি দখলকারী ও প্রতারকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন পরবর্তিতে জমির কাগজপত্র পর্যালোচনা করে জানতে পারি যে, চুক্তিনামা অনুযায়ী জমির ৮০ নম্বর খতিয়ানের ২৮৪ নম্বর দাগের দালিলিক কাগজপত্র মূলে তাদের দাবিকৃত ২ কাঠা জমির কোন মালিকানা নেই। যৎসামান্য জমি যা ছিল সেটাও ভূমি অফিস ইতোমধ্যেই তার খারিজ বাতিল করেছেন।
এছাড়া ২০২২ সালের শেষের দিকে আমরা জানতে পারি যে, ওই ২৮৪ নং দাগে সরকারের ১৪ শতক খাস সম্পত্তি রয়েছে। সেই জমি বেআইনীভাবে দখলে নিয়ে আজিজুল ও মান্নান নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে। বর্তমান বিষয়টি জানাজানি হলে নিজেদের অপরাধ আড়াল করতে তারা নওগাঁ মডেল টাউন প্রকল্পের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার ছড়াচ্ছে। এমতাবস্থায় তাদের কাছ থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা উদ্ধারে আমি দিশেহারা।
এদিকে এলাকাবাসীর মধ্যে আবদুল হান্নান,আশরাফুল ইসলাম স্বপন ও শেরেকুল ইসলাম জানান ওই দাগের জমির কাগজে মাত্র ১৮ শতক জমি উল্লেখ রয়েছে। পরবর্তীতে জমি মাপতে গিয়ে একই দাগে আরো ১৪ শতক জমি বেশী হয়। এই অতিরিক্ত ১৪শতক জমি খাস করা হয়েছে। আবার ওই দাগে
মাত্র সোয়া (১.২৫ )শতক জমির মালিক চকবিরাম গ্রামের আজিজুল ও আবদুল মান্নান। বর্তমানে সেই জমিরও খারিজ বাতিল করা হয়েছে। তারা বলেন, ২৮৪ দাগে বিদ্যমান ১৮ শতক জমিতে মামলা বা অভিযোগ থাকলেও ওই দাগের খাসভুক্ত ১৪ শতক জমি নিয়ে কারো কোন অভিযোগ নেই।
গত ২৩ মে নওগাঁ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রফিকুল ইসলাম সংশ্লিষ্ট দাগের অন্যান্য মালিকদের ধারাবাহিক নোটিসের মাধ্যমে খাসভুক্ত ১৪ শতক জমি উদ্ধার করতে ঘটনাস্থলে গেলে অবৈধ দখলকারী আজিজুল ও মান্নানের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহিনী বিশৃংখলার সৃষ্টি করে এ্যাসি ল্যান্ডের উপর চড়াও হয়। বাধ্য হয়ে এ্যাসি ল্যান্ড জমি উদ্ধার না করেই ফিরে যান।
এ বিষয়ে মো: আজিজুল ইসলাম বলেন ক্রয় সূত্রে আমরা ওই জমি ভোগ দখল করে আসছি। কোন খাস জমি আমরা দখল করছি না। জমির খারিজ সংক্রান্ত জটিলতা ও পারিবারিক সম্পত্তির বিষয়ে বাটোয়ারা মামলা থাকায় চুক্তিপত্র অনুযায়ী ক্রেতাকে জমি রেজিষ্ট্রী করে দিতে পারছি না।
এবিষয়ে নওগাঁ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রফিকুল ইসলাম বলেন ৮০ নম্বর খতিয়ানের ২৮৪ দাগে ১৮ শতক জমি উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সেখানে জমি রয়েছে ৩২ শতক। এই ৩২ শতকের মধ্যে ১৪ শতক জমি খাস খতিয়ানভুক্ত। এই অবস্থায় গত ২৩ মে জমি উদ্ধার করতে গিয়ে অবৈধ দখলকারীদের মারমুখী আচরনের কারণে বাধ্য হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। এ ছাড়া এসব জমি নিয়ে ওই এলাকায় একাধিক মামলা চলমান রয়েছে এবং ১৯টি দলিল সৃজন করা হয়েছে। ওইসব দলিলের ইতিমধ্যেই খারিজ বাতিল করা হয়েছে এবং দলিল বাতিলের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।