বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, তার চিকিৎসা বা রাজনৈতিক সক্রিয়তা ইস্যুতে বিদেশি কোনো রাষ্ট্রের হস্তপেক্ষ যুক্তিসঙ্গত নয় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়ার বিষয়টি আমাদের অভ্যন্তরীণ। অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বাইরের হস্তক্ষেপ যুক্তিসঙ্গত নয়। তার স্বাস্থ্যের চেয়ে তাকে নিয়ে রাজনীতি করাটাই মুখ্য বিএনপির কাছে। বিএনপি রাজনৈতিকভাবে এমন কোনো চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি যে, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তার মুক্তির বিষয়টি আইনমন্ত্রী বলতে পারবেন। বুধবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্প (বিআরএসপি) উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের নামে যা হয়েছে তা আমরা দেখেছি। ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ পর্যন্ত পরাজয় স্বীকার করেননি। সেখানে গণতন্ত্রের ত্রুটি আছে, প্রাতিষ্ঠানিক রূপ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আমাদের গণতন্ত্রও ত্রুটিমুক্ত নয়। নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপির আমলে ‘আজিজ মার্কা’ নির্বাচন কমিশন আমরা দেখেছি। এগুলো দেশের মানুষের মনে আছে। গাজীপুর, বরিশাল ও খুলনা সিটি নির্বাচন হয়েছে। এ ধরনের নির্বাচন হলে কি কারো (বিএনপিকে ইঙ্গিত করে) সন্তুষ্ট হওয়ার কথা। জনপ্রিয়তা প্রমাণে নির্বাচনে আসতে হবে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, খালেদা জিয়ার জেল এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল- এ দুটো আওয়ামী লীগ করেনি। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে বিএনপি একটি ভালো আন্দোলনও করতে পারেনি। এ ব্যর্থতার দায় নিয়ে দলটির নেতাদের টপ টু বটম পদত্যাগ করা উচিত। আগামী জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতের অংশগ্রহণ করা না করার বিষয়ে এক প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, জামায়াতে ইসলামীর বিষয়টি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। জামায়াত তো নিবন্ধিত দল নয়, তারা নির্বাচন কীভাবে করবে? তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রেসক্রিপশনে চলে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, যাবে। প্রত্যেককেই নিজের চেহারা আয়নায় দেখার পরামর্শ। আওয়ামী লীগ কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করে না, করবে না। পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের বড় ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে বলে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিশ্বব্যাংক চাইলে পদ্মা সেতু একা করতে পারবো। এখানে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। যার সঙ্গে আমাদের দেশের কিছু বাঘা বাঘা ব্যক্তি জড়িত ছিল। এজন্য আমি শুধু বিশ্ব ব্যাংককে দোষারোপ করি না। এটা একটি বড় ভুল বোঝাবুঝি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্বব্যাংক যে সম্মান দেখিয়েছে এবং বাজেটে যে সহযোগিতা করেছে, তার জন্য বিশ্বব্যাংককে ধন্যবাদ জানান তিনি। তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় দেশে ৩৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক ক্ষতি হয়। আমাদের ভাবনা অনেক সুদূরপ্রসারী। কিন্তু বাস্তবায়ন খুবই ধীর। কাদের বলেন, আমাদের বাজেট সহায়তায় যে পরিমাণ ফান্ডিং তারা করেছে, আজকে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রোজেক্ট। বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিশেষ করে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে, এটা একটা বিরাট অর্জন। সেতুমন্ত্রী বলেন, আমরা যতই পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস, একদিনে একশো সেতু উদ্বোধন করি, তারপরও যখন দুর্ঘটনার খবর দেখি, তখন মনটা বিষন্ন হয়ে যায়। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনার। আমরা মন্ত্রী হলেও তো মানুষ। এ বিষন্নতার এই দুর্ঘটনা আমাদের মনে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এত মেগা প্রোজেক্ট, এত উন্নয়ন করার পরও স্বস্তি পাঁচ্ছিলাম না, এই দুর্ঘটনার কারণে। কেন হবে? আমরা কি এটা এড়াতে পারি না? আমরা এত কিছু করতে পারি, আমরা আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করতে পারি, এটা কেন পারবো না? তিনি বলেন, এটাই হচ্ছে আজ প্রশ্ন। বিশ্ব ব্যাংক এখানে পাঁচ হাজার কোটি টাকার মধ্যে বেশির ভাগ তারাই ফান্ডিং করছে। কাদের বলেন, আমরা কথা বলি কাজ করি না। নানা ভাবে কাজ বিলম্বিত হয়। কাজেই বিশ্বব্যাংকের যে ফান্ডিং, যে প্রোজেক্টের জন্য, এ কাজটি আমরা শপথ নেই, বাস্তবায়নটা যথা সময়ে না হলে দেশের মানুষ বিরক্ত হবে। আমাদের আর সময় নষ্ট করার মত সময় নেই। আমাদেরকে যত দ্রুত সম্ভব কাজে হাত দিতে হবে। আজকে একটা বাস্তবতা আছে, আমাদের চার পাশে। যুদ্ধ, ক্লাইমেট চেইঞ্জ। আমাদের প্রথম কাজ হবে আমাদের লোজজনকে বলতে হবে, আমাদের পরিবেশ রক্ষা করতে। এই কাজটা আমাদের আগে করতে হবে। যে মানুষগুলোর জন্য আমরা এত কিছু করছি, তাদের তো জীবিকার জন্য রাস্তায় যেতে হবে। সেখানে তাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। এটা গুরুত্বপূর্ণ। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সড়ক বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল (পরিবহন) প্র্যাকটিস ম্যানেজার ফেই ডেং। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সচিব শরিফা খান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রথম অংশে সড়কের নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রথম অংশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন। সড়কের নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা করেন বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (অপরাধ ও অপারেশন) মো. আতিকুল ইসলাম বিপিএম-বার, পিপিএম-বার, সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো. ইসহাক ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কতৃপক্ষ (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার।