দেশে খামারশিল্পের প্রসার ঘটেছে, গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে পশুপাখি পালন। গ্রামে অনেকেই পশুপাখি পালন করে বাড়তি আয় করেন। আবার অনেকে বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তুলেছেন বড় খামার। তবে দেশে প্রাণিসম্পদ খাতের সমৃদ্ধি ঘটলেও তাৎক্ষণিক চিকিৎসার অভাবে মারা যায় অনেক পশুপাখি। উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা থাকলেও দূরত্বের কারণে সেবাবঞ্চিত হন অনেক খামারি। তবে এসব সমস্যা নিরসনে পশুর চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতে দেশের ৬১ জেলার ৩৬০টি উপজেলায় চালু হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ প্রাণিচিকিৎসা ক্লিনিক। দেশে দুধ ও মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি, গাভী-ষাঁড়, ছাগল-ভেড়া এবং হাঁস-মুরগির উৎপাদন বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি প্রদর্শনী দ্বারা খামারিদের দক্ষতা উন্নয়ন, দুগ্ধ বিপণনের জন্য বাজার সংযোগ, পণ্য বহুমুখীকরণ, মূল্য সংযোজন, স্থানীয় পর্যায়ে উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রাণিজাত আমিষের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি ফুড সেফটি নিশ্চিতকরণে উৎপাদনকারী, পরিবহনকারী, ব্যবসায়ী, কারিগর, ভোক্তা সব স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে বিশ্বব্যাংক ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন এলডিডিপি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, টিকা ও অন্যান্য ওষুধপত্রসহ ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিকগুলো সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে। এরইমধ্যে ৬১টি ক্লিনিক প্রস্তুত করা হয়েছে। অবশিষ্ট ক্লিনিকগুলোও শিগগির উপজেলাগুলোতে পাঠানো সম্ভব হবে বলে প্রকল্প দপ্তর থেকে জানা গেছে। এটি বাস্তবায়ন হলে খামারিদের পশুপাখির জরুরি চিকিৎসার জন্য কোনো দুশ্চিন্তা থাকবে না। প্রাণিসম্পদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মীদের পক্ষে এ ক্লিনিকের সাহায্যে দ্রুত ও বেশি সংখ্যক পশুপাখি স্বাস্থ্যসেবার আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষিত ‘ওয়ান হেলথ’ অর্থাৎ মানুষ, প্রাণী ও পরিবেশের জন্য একই রকম সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার পথে একধাপ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। তবে চিকিৎসাসেবার জন্য চিকিৎসক যেমন প্রয়োজন, পাশাপাশি কিছু লজিস্টিক সাপোর্ট প্রয়োজন। কারণ প্রাণীর এক্স-রে, আলটাসনোগ্রাম লাগতে পারে। তাই ভ্রাম্যমাণ প্রাণিচিকিৎসা ক্লিনিকগুলোতে থাকতে হবে রোগ নির্ণয়ের চিকিৎসাসামগ্রী। এজন্য খামারিকে যেন কোনো ফি বা অর্থ দিতে না হয়। কেননা নানা ধরনের সমস্যা ও ভোগান্তি নিয়ে এ খাতকে এগিয়ে নিচ্ছেন খামারিরা। পশুর খাবার ও ওষুধের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে তাঁদের দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। এর মধ্যে আরও বেগ পেতে হয় পশুর চিকিৎসা নিয়ে। এর জন্য উপজেলা পর্যায়ে পশু হাসপাতাল থাকলেও সেবা নিয়ে অসন্তুষ্টির কারণে অনেকে সেখানে যেতে চান না। তবে চাইলেই এসব হাসপাতালের পরিস্থিতি বদলে দেওয়া যায়। তাই উপজেলায় সার্বক্ষণিক জরুরি সেবা চালুর উদ্যোগ নেওয়া পয়োজন। সেটি বাস্তবায়িত হলে নিঃসন্দেহে খামারিরা উপকৃত হবেন।