শিক্ষার নানা কাজে এলোমেলো অবস্থা। এতে মানসম্মত শিক্ষার ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। আর এসবের প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের ওপর। দেশে বর্তমানে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত চার কোটির বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিকে শিক্ষার্থী প্রায় ২ কোটি ৯০ হাজার, মাধ্যমিকে ১ কোটি ও কলেজে ৪৩ লাখের বেশি। বাকিরা শিক্ষার অন্যান্য স্তরে পড়েন। বছরের প্রথম দিন সব শিক্ষার্থীর হাতে বিনা মূল্যে পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হয় ২০১০ সাল থেকে। এই কাজ সরকার অনেকটা রেওয়াজে পরিণত করেছিল। কিন্তু তিন বছর ধরে তাতে ছেদ পড়েছে। ২০২১ সালে করোনার বড় প্রভাব থাকলেও গত দুই বছর শুরুতে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষার্থী সব বই পায়নি। আবার নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে তৈরি পাঠ্যবই নিয়ে গোলমেলে পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে শিক্ষা বিভাগ। শুধু পাঠ্যবই ও নতুন শিক্ষাক্রম নয়, শিক্ষার নানা কাজেই এলোমেলো অবস্থা। এছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ১০টি প্রকল্প পরিচালনা করছে, এসব প্রকল্পই চলছে ধীরগতিতে এবং বারবার প্রকল্পগুলোর মেয়াদ বাড়ানোয় বাড়ছে ব্যয়। এই ১০ প্রকল্পের কোনো কোনোটির অবস্থা একেবারে লেজেগোবরে। মাউশি ২০১৬ সালে ‘আইসিটির মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রচলন, (পর্যায়-২)’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যালয়ে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ করার কথা। তবে এত বছর পরও এই প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে কোনো অগ্রগতি নেই। ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে গড়ে ৩০ শিক্ষার্থীর জন্য ১ জন শিক্ষক থাকার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইসের) তথ্য অনুসারে, মাধ্যমিক গড়ে ৩৮ শিক্ষার্থীর জন্য ১ জন শিক্ষক রয়েছেন। প্রাথমিকেও সংখ্যাটা একই রকম। প্রাথমিকে এখনো শিক্ষকের ৩৮ হাজার পদ শূন্য। করোনাকালে অষ্টম শ্রেণির অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থীর বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে মধ্যম ও উচ্চমাত্রায় শিখনঘাটতি তৈরি হয়েছে। এই ঘাটতি পূরণে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়াসহ বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু অতিরিক্ত ক্লাসের বদলে উল্টো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন করা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে শিক্ষা খাতে পরিকল্পনা করে খুব একটা কাজ হচ্ছে না। তাই এ খাতে সমন্বিত পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়ন করা দরকার। এ ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন করতে হবে। কেননা শিক্ষার উন্নয়ন একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া।