সামাজিক বন্ধন যেখানে প্রায় ভঙ্গুর, সেখানেই হোক আমাদের ভঙ্গুরতাকে ভালোবাসায় জুড়ে দিবার এক ঐকান্তিক প্রচেষ্টা। একটি ভালো কাজে হতে পারে সমাজের কল্যাণ সাধন। এরূপ একটি কল্যাণকর কাজ হলো ‘রক্তদান’। তবে এজন্য প্রয়োজন, তার স্বইচ্ছা। ১৯৯৫ সাল থেকে আন্তজাির্তকভাবে সারা পৃথিবীতে প্রতি বছর ১৪-ই জুন ‘রক্তদাতা দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। এই দিবসটি উৎসর্গ করা হয় সেই বীরদের উদ্দেশ্যে যারা স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে তাদের রক্তদান করে থাকেন। ১৪ জুন দিবসটি পালনের আরেকটি তাৎপর্য রয়েছে। এদিনে জন্ম হয়েছিল বিজ্ঞানী কালর্ ল্যান্ডস্টিনার। এই নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেছিলেন রক্তের গ্রুপ: এ, বি, ও, এবং এবি। বর্তমানে হাসপাতালে প্রতিদিন অসংখ্য পরিমাণ মানুষের রক্তের প্রয়োজন হচ্ছে কিন্তু তারা রক্তের অভাবে তাদের চিকিৎসা করাতে পারছেন না। যারা ধনী তারা অন্যত্র থেকে অথের্র বিনিময়ে কিনতে পারছেন কিন্তু গরিবরা মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন, আর আপনার আমার মতো মানুষের দিকে চেয়ে আছেন। তবে আশার বিষয় হলো, রক্তদানে সহায়তা করে এরূপ মানুষের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসছে অসংখ্য সামাজিক সংগঠন। যেমন: সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কাজ করে যাচ্ছে ‘বাঁধন’, এ ছাড়া সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে কাজ করছে ‘সন্ধানী’ সংগঠনটি। তাই আমাদের উচিত একের রক্তে অন্যের জীবন বাঁচিয়ে রাখা। উন্নত দেশে বেশিরভাগ রক্তদাতাই হলেন স্বেচ্ছায় রক্তদাতা, যারা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে রক্তদান করেন। দরিদ্র দেশগুলোয় এ ধরনের প্রতিষ্ঠিত স্বেচ্ছায় রক্তদাতার সংখ্যা বেশ কম, বেশিরভাগ রক্তদাতাই কেবল তাদের পরিচিতজনদের প্রয়োজনে রক্তদান করে থাকে। খুব অল্প কিছু মানুষ পেশাদার রক্তদাতা। তাই প্রিয় জনদের বাঁচাতে ১৯৯৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক রক্তদান দিবস পালন এবং ২০০০ সালে ‘নিরাপদ রক্ত’-এই থিম নিয়ে পালিত বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০০৪ সালে প্রথম পালিত হয়েছিল বিশ্ব রক্তদান দিবস। ২০০৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য অধিবেশনের পর থেকে প্রতিবছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এ দিবস পালনের জন্য তাগিদ দিয়ে আসছে। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়। বাংলাদেশে দিবসটি পালনে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে চার লাখ রক্তদাতার সর্বোচ্চ ডোনার পুল নিয়ে মানবিক সংগঠন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। রক্তদান শুধু মাত্র রোগ থেকে নিজেকে রক্ষা করা নয়, একজন মুমূর্ষ মানুষের পাশে দাঁড়ানো। সাথে সাথে ধর্মীয় দিক থেকেও পবিত্র কাজ। তবে রক্তদানের আগে কিছু বিষয়ে লক্ষ্য রাখাসহ শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হতে হবে। এখনো রক্তের অভাবে প্রতিবছর বহু রোগীর প্রাণ সংকটের মুখে পড়ে। কেননা আমাদের দেশে জনসংখ্যার তুলনায় রক্তদাতার সংখ্যা এখনো নিতান্তই কম। তাই জনগণকে রক্তদানের ব্যাপারে সচেতন, উদ্বুদ্ধ, মানুষের মাঝে সংহতি এবং সামাজিক সম্প্রীতি বাড়াতে রক্তদানের গুরুত্ব প্রচার, রক্তদানের ক্ষেত্রে অমূলক ভয় দূর, নতুন রক্তদাতা তৈরি এবং নিরাপদ রক্ত ব্যবহারে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। রক্তদানের মাধ্যমে জেগে থাকুক পৃথিবীর স্পন্দন।