দেশে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির অভিযানে গত এক বছরে সাত হাজার ৪১৭টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। বিষয়টি রীতিমতো উদ্বেগজনক। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বিরোধ, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা এবং অন্যান্য অপরাধমূলক ঘটনায় প্রকাশ্যে ও আড়ালে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এক প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বাসার সামনে সশস্ত্র মহড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে যাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে, তাদের পরিচয় উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। সেসব অবৈধ অস্ত্রও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। দেশে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের প্রাপ্যতা অনেক বেড়েছে। গ্রামাঞ্চলেও পৌঁছে গেছে এসব অস্ত্র। টাকা দিতে পারলে এসব পাওয়া কোনো সমস্যা নয়। মাঝেমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে। তবে বেশির ভাগই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হাতেও প্রচুর অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। যশোরের বেনাপোল, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা, সাতক্ষীরার শাঁকারা, মেহেরপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লা, কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়াসহ প্রায় ৫৭টি সীমান্ত রুট দিয়ে নিয়মিত বিপুলসংখ্যক অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দেশে ঢুকছে। সাগরপথেও আসছে। র্যাবের তদন্তে উঠে এসেছে, অস্ত্রের বড় চালানগুলো দেশে ঢোকে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্ত দিয়ে। পুলিশ-র্যাব-বিজিবির হাতে প্রায়ই অস্ত্রের চোরাচালান ধরা পড়ে। এর পরও অস্ত্রের চোরাচালান বন্ধ হচ্ছে না। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, সীমান্ত এলাকার প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি অস্ত্রের চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত। রাজনৈতিক খুঁটির জোরও আছে তাদের। ফলে কখনো চালানসহ বাহক ধরা পড়লেও মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়। উদ্ধার করা অস্ত্রের বেশির ভাগ বিদেশি। সামনে জাতীয় নির্বাচন। অবৈধ অস্ত্র জঙ্গি-সন্ত্রাসী বা রাজনৈতিক ক্যাডারদের হাতে থেকে গেলে বড় বিপত্তির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। এসব উদ্ধার করা জরুরি। সীমান্ত রুটগুলো অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের সদিচ্ছা খুব দরকার। তারা সদিচ্ছা পোষণ না করলে গডফাদারদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। সব অবৈধ অস্ত্র যদি উদ্ধার করা না যায়, অস্ত্র চোরাচালান যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক করা যাবে না। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে কঠোর অভিযান পরিচালনা করতে হবে। অবৈধ অস্ত্রের প্রভাবে সমাজেও এক ধরনের অস্থিতিশীলতা প্রকাশ পাঁচ্ছে। তাই এটি বন্ধ করতে না পারলে তা রাষ্ট্রের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনবে।