সারা দেশে নির্বিঘ্নে চলছে পরিবেশ বিধ্বংসী ইটভাটা। বর্তমানে দেশে ইটভাটা, শিল্পায়ন, নগর উন্নয়নের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে শতভাগ আবাদযোগ্য কৃষিজমি। প্রতিবছরই বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১ শতাংশ হারে আবাদযোগ্য জমি কমে যাচ্ছে, অপর দিকে ১ শতাংশ হারে জনসংখ্যা বাড়ছে। ওই হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও আবাদি জমির অবক্ষয় চলতে থাকলে আগামী ৭০ বছর পরে বাংলাদেশে কোনো কৃষিজমি অবশিষ্ট থাকবে না। ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তাকে রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। এর জন্য প্রয়োজন সবার আন্তরিক সহযোগিতা এবং সব পক্ষের সমন্বয় ও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা। এ প্ররিস্থিতিতে ইটের বিকল্প পরিবেশবান্ধন কংক্রিট ব্লকে ঘর বানানোর চর্চা বাড়ালে হয়তো দেশে ইটভাটার কারণে পরিবেশের ক্ষতি বন্ধ করা সম্ভব হতে পারে। কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি দিয়ে বানানো ইট পোড়াতে কয়লা ও গাছ ব্যবহার করায় পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে। তাই গত কয়েক দশক ধরে প্রচলিত ইটের বিকল্প নির্মাণ সামগ্রী উদ্ভাবনে গবেষণা করে চলেছেন। এ পর্যন্ত বিকল্প নির্মাণ সামগ্রী হিসেবে ৩০ ধরনের কংক্রিট ব্লক উদ্ভাবন করা হয়েছে। এগুলো পরিবেশবান্ধব, মূল্যসাশ্রয়ী, ওজনে হালকা, ভূমিকম্প, আগুন ও লবণাক্ততা প্রতিরোধী, অতি উষ্ণ বা অতি শীতল আবহাওয়ার বিপরীতে নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশ দিবে। হবে দীর্ঘস্থায়ী ও ব্যয়সাশ্রয়ী। এসব ব্লক তৈরিতে কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহারের পরিবর্তে নদীর তলদেশের মোটা বালু ও সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়। অথবা কখনো ফ্লাই অ্যাশ, পাথরের ধুলো ও অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করা হয়। দেশে বর্তমানে ৭ হাজার ২০০ ইটভাটায় বছরে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি ইট পোড়ানো হয়, এতে টপ সয়েল ব্যবহারের পরিমাণ প্রায় ১৩ কোটি টন, যা ৬৫ হাজার হেক্টর কৃষিজমির ওপরের স্তরের মাটির সমান। তা ছাড়া নানা কাজে আরও ১৫ হাজার হেক্টর আবাদযোগ্য জমিও অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। ওই হিসাবে বছরে মোট উর্বর জমি হারানোর পরিমাণ প্রায় ৮০ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর।পশ্চিমা দেশগুলোর পাশাপাশি চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, জাপান, কোরিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়াসহ ইট উৎপাদনে কৃষিজমির মাটির ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ। চীন ৫০ বছর আগে মাটি পোড়ানো ইট উৎপাদন নিষিদ্ধ করেছে। ভিয়েতনামে রাষ্ট্রীয়ভাবে নির্মিত ভবনে ৮০ শতাংশ ব্লক ইট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব দুই শতাধিক ব্লক ইট তৈরির কারখানা রয়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় ব্লক ইটের কারখানা সংখ্যা খুবই কম। তাই সরকারের উচিত নতুন করে কোনো ইটভাটা স্থাপনের অনুমতি প্রদান না করে সব ইটভাটাকে নিরুৎসাহিত করে পরিবেশবান্ধব ব্লক ইট কারখানা স্থাপনকে অগ্রাধিকার দেওয়া। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ব্লক ইট ব্যবহারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, সব উন্নয়নকাজে ব্লক ইট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা। পাশাপাশি ইটভাটার মালিকদের ব্যাংকঋণ দিয়ে সহায়তা প্রদান করা। এতে ব্লকের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় কৃষিজমি ও পাহাড়গুলো যেমন রক্ষা পাবে তেমনিভাবে পরিবেশও সুরক্ষা পাবে।