বাংলাদেশে সমসাময়িক কালে তরুণ প্রজন্মের অপরাধের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। বিষয়টি অত্যন্ত দুশ্চিন্তার ও দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের পথে হুমকিস্বরূপ। এর মধ্যে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় তরুণদের সম্পৃক্ততা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তাই তরুণ প্রজন্মের অপরাধপ্রবণতা থেকে উত্তরণে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ গ্রহণ করা উচিত। বর্তমানে প্রতিদিনই কোনো না কোনো নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। যদিও আমাদের সমাজ ধর্ষণের জন্য নারীদের পোশাক, চালচলনকেই দায়ী করে। কিন্তু ধর্ষককে কোনো প্রকার দোষারোপ করে না। বরং ধর্ষিতা নারীর পরিবারকেও নানা ধরনের কটূক্তির শিকার হতে হয়। ফলে ধর্ষিতা নারীরা আইনের পদক্ষেপ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে না। ফলে অপরাধ আইনের সম্মুখে আসতে পারে না তাই অপরাধ প্রবণতা বেড়েই যাচ্ছে এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনা অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এর ফলে মূলত কিশোর অপরাধ বৃদ্ধি পাঁচ্ছে। কেননা দেশে অপরাধগুলোর মধ্যে যৌনতাকেন্দ্রিক অপরাধের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, সেই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত শিশু-কিশোর ও তরুণদের সংখ্যাও তেমন বাড়ছে। প্রতিদিন খবরে যেসব অপরাধের কাহিনি উঠে আসছে, এর প্রায় প্রতিটির সঙ্গে কিশোর-কিশোরী, তারুণ্য, যৌনতা, পর্নোগ্রাফি, ইন্টারনেটভিত্তিক যৌনবিষয়ক অপরাধী গ্রুপ ও মাদক জড়িত। এ সবই ঘটছে কিশোর-কিশোরীদের অস্বাভাবিক যৌন আচরণ বা টিন অ্যাবনরমাল সেক্সুয়াল আচরণের কারণে। যৌনক্রিয়ায় কোনটি স্বাভাবিক আর কোনটি অস্বাভাবিক-এই বোধ ঠিকমতো তৈরি হচ্ছে না কিশোর-কিশোরীর মধ্যে। কারণ, সুস্থ যৌনক্রিয়া কী, সেই শিক্ষা পাওয়ার আগেই পর্নোগ্রাফি ও বন্ধুবান্ধবের মাধ্যমে তারা পেয়ে যাচ্ছে বেপরোয়া ও অস্বাভাবিক যৌনক্রিয়ার শিক্ষা। স্কুল বা কলেজের সহপাঠীদের কাছ থেকেও তারা এসব লিংকের খবর পায় এবং নিজেরা সেই তথ্য আদান-প্রদান করে। পর্নোগ্রাফির জগৎটা অনেক বড়। এর ডালপালাও মাকড়সার জালের মতো চারদিকে বিস্তৃত। কাজেই এই মাকড়সার জালে কখন, কোনো শিশু, কীভাবে ধরা পড়বে, তা অভিভাবকদের জন্য বোঝা রীতিমতো চ্যালেঞ্জিং। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এই জগতের দুয়ার যতটা খোলা বা যতটা নাগালের মধ্যে, শিশুদের জন্য ঠিক ততটাই খোলা বা নাগালের মধ্যে। বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারে সন্তানের চেয়ে দক্ষতায় পিছিয়ে আছেন অভিভাবকেরা। সেই সুযোগে সন্তানেরা মা-বাবাকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে। তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে ছেলেমেয়েদের স্পষ্ট ধারণা, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক বিস্তার ও পর্নোগ্রাফির সহজ প্রবেশগম্যতা এবং বয়ঃসন্ধিকালের স্বাভাবিক আগ্রহই শিশু-কিশোরদের এই পথে চালিত করছে। যেহেতু যৌন জীবন ও প্রজনন স্বাস্থ্য আমাদের সমাজে এখনো ট্যাবু, তাই কিশোর-কিশোরীরা যেকোনোভাবে ভুল তথ্য নিয়ে, ভুল পথে যেতে পারে। তাই তাদের সঠিক পথে চালানোর জন্য শুধু নীতি পুলিশিং না করে, বয়ঃসন্ধিকালের প্রজনন স্বাস্থ্য ও যৌন স্বাস্থ্য নিয়ে সঠিক শিক্ষা দিতে হবে। তাহলে সব ধরনের ছেলে-মেয়েদের কাছে যৌনতা বিষয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক, বাস্তবসম্মত ও সমালোচনার ঊর্ধ্বে উঠে তথ্য পৌঁছানো সহজ হবে। এ ক্ষেত্রে তারা কীভাবে বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণ করবে, সে বিষয়েও সঠিক শিক্ষা দিতে হবে। এখন সাইবার অপরাধের ধরনে বদল দেখা দিয়েছে, সারা দেশে ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপ সক্রিয় হয়ে উঠছে। তাই এ ব্যাপারে সমাজের সবার সচেতনতা বাড়াতে হবে।