বিএনপি নির্বাচন করতে দেবে না এমন ঘোষণার পরও মার্কিন ভিসানীতি এখানে কী কাজ করে তাই এখন দেখার বিষয় বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আজ শনিবার দুপুরে গাজীপুরের টঙ্গীতে বিআরটি প্রকল্পের সাড়ে চার কিলোমিটার নির্মাণ কাজ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, মার্কিন ভিসানীতিতে তারা বলছে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনে যারা বাধা দেবে তাদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ হবে ভিসানীতি। এই নীতি এখন অন্ধ, বধির হয়ে থাকবে; না বাস্তববাদী হবে আমরা দেখবো। এ সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ভিসানীতি করুক তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। ভিসানীতি আমাদেরও থাকতে পারে। আমরাও করতে পারি। অপেক্ষায় থাকুন। ওবায়দুল কাদের বলেন, দুর্নীতি আর দুঃশাসনের কথা বললেই বিএনপির নাম উচ্চারণ করতে হয় উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির যারা দুর্নীতি দুঃশাসন করেছেন, তারা এখন এসব কথা বলছেন। তারা কোন মুখে এত বেশি কথা বলছেন, আমরা ঠিক জানিনা। সেতুমন্ত্রী বলেন, তারা (বিএনপি) আগামী নির্বাচন হতে দেবে না। আবার এখন বদরুদ্দিন ওমর সাহেবরাও মাঠে নেমেছেন। নির্বাচন না করতে দেওয়ার বিষয়ে তারা বিএনপিকে পরামর্শও দিচ্ছেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না- এই কথা বলার পর মার্কিন ভিসা নীতির কেনো ধীরগতি। নির্বাচন করতে দেবে না বলে তারা যে কথাটা বলছে, অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন, সেই নির্বাচনে বাধা দেওয়ার পরিষ্কার ঘোষণা করছে বিএনপি। এখানে ভিসা নীতি কি কাজ করে, আমরা সেটাই দেখবো। নির্বাচনকে সামনে রেখেই তো তাদের সব নীতি। ভিসা নীতি এখানে অন্ধ হয়ে থাকবে, নাকি বধির হয়ে থাকবে, নাকি বাস্তবভাবে কোনো পদক্ষেপ নেবে, সেটাই আমরা দেখবো। বিএনপি বলছে, আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারকে বিদায় নিতে হবে, জনগণের আন্দোলনের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটবে। এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই কথা গত ১৪ বছর যাবত শুনে আসছি। সরকার থাকতে পারবে না, সরকারকে বিদায় নিতে হবে, আন্দোলন করে এই সরকারকে বিদায় করা হবে। আসলে, আন্দোলনটা কার বিরুদ্ধে? সরকারের বিরুদ্ধে, আন্দোলনটা কাকে নিয়ে করবে? জনগণ? এই পর্যন্ত তারা তাদের নেত্রীর মুক্তির জন্য দর্শনীয় একটা মিছিল করতে পারে নাই। একটা বিক্ষোভ রাজপথে তারা দেখাতে পারে নাই। আর সরকার হটানোর জন্য দেশে একটা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান ঘটাবে! আগামী ডিসেম্বরের ১০ তারিখ বেগম জিয়া দেশ চালাবেন! ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি একটা কথা বলি, বিদেশে পলাতক কোনো নেতার রিমোট কন্ট্রোল আহ্বানে বাংলাদেশে জনগণের সম্পৃক্ততায় আন্দোলন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তারা বহুবার ট্রাই করে দেখেছে, কাজ হয় নাই। আন্দোলন যাকে বলে, এখন পর্যন্ত তারা তাদের অ্যাকশনে সেটাই প্রমাণ করতে পারে নাই। আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের শতভাগ কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশ্বাস দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, এর মধ্যে তেজগাঁও পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজও এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনের আগেই তেজগাঁও পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেস চালু করা যাবে। বাকি অংশটি নির্বাচনের পরে সম্পন্ন করা হবে। এদিকে, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যেই মেট্রোরেল মতিঝিল পর্যন্ত চালু করা হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রী যেদিন সময় দেবেন আমরা বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত রয়েছি। আপাতত এটুকু পর্যন্ত আমাদের টার্গেট রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ অনেক উন্নয়ন প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন করেছি। কিন্তু সড়ক ও পরিবহনে শৃঙ্খলাটা আমাদের খুব দরকার। নিরাপদ সড়কের যে দাবি সেটা বাস্তবায়ন করা জরুরি। সে কারণে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আমরা একটা রোড সেফটি প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি। এই প্রজেক্টে ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। সার্বিকভাবে আমাদের সবচেয়ে বেশি দরকার রাস্তার শৃঙ্খলা, পরিবহনের শৃঙ্খলা। এটার কার্যক্রম এখনও চলমান রয়েছে। মন্ত্রী বলেন, বিআরটির এই প্রজেক্ট নিয়ে আমি অনেকবার এসেছি, অনেক কথা বলেছি। এই প্রজেক্টটি গাজীপুরবাসীর একটি ভোগান্তির কারণ হয়েছিল। তবে রোজার ঈদের আগে টঙ্গী ফ্লাইওভারটি চালু করে দেওয়া হয়, এতে ভোগান্তি অনেকটা কম ছিল। কোরবানি ঈদের আগে যেটা বেশি ভোগান্তি হতে পারতো সেটা হলো সাড়ে চার কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, যেটা টঙ্গী থেকে চেরাগালি পর্যন্ত। সেটিও ঈদের আগেই খুলে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে স্টেশন রোড সেকশনও রয়েছে। তিনি বলেন, এই ঈদের আগেই ইনশাল্লাহ এলিভেটেড এক্সপ্রেস দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। এটা আমাদের অনেক কাজে আসবে এবং এর সঙ্গে নিচের যেই সড়কগুলো ছিল, সেগুলো খোলা থাকবে। এদিকে বিআরটি প্রকল্পের জসিম উদ্দিন থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত অংশের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েও ঈদের আগেই কাজ শেষ হয়ে যাবে এবং সেটি চালু করে দেওয়া হবে। মন্ত্রী বলেন, আগে এসব জায়গায় অনেক ভোগান্তি হয়েছে, এখন আর মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হবে না। গত রমজানের ঈদে এই স্থানগুলোতে কোনো ভোগান্তি সৃষ্টি হয়নি। তবে এখন বৃষ্টির একটা বিষয় আছে। সড়কের পাশে পশুরহাট, গাড়ি চলাচল এগুলো সব মিলিয়ে কিছুটা ভোগান্তির বিষয়ে আছে। তবে এ বিষয়ে আমরা একটা প্রস্তুতি সভার মাধ্যমে কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। রমজানের ঈদের চেয়ে কোরবানির ঈদ চ্যালেঞ্জিং বলে উল্লেক করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা যেই পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি, সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সবাই যদি একসঙ্গে কাজ করি, তবে এই চ্যালেঞ্জও আমরা মোকাবিলা করতে পারব ইনশাল্লাহ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী একদিনে ১০০ সেতু উদ্বোধন করেছেন। এটি বিরল একটি ঘটনা। আগামীতেও এরকম আরও ১০০ সেতু উদ্বোধন করা হবে। বিআরটি প্রকল্পের এই সড়কে কি বিআরটির বাস চলবে না অন্যান্য গাড়ি চলাচল করতে পারবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, যেখানে ছয় লেন রয়েছে, সেখানে সব ধরনের গাড়ি চলাচল করতে পারবে, বিআরটির বাস চলাচলের জন্য মাঝের লাইনে বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। তিনি বলেন, দুই-একটা প্রকল্প ছাড়া আর কোনো প্রকল্পে সমালোচনামূলক কথাবার্তা আমাকে শুনতে হয়নি। এই প্রজেক্টে আমাকে অনেক সমালোচনামূলক কথাবার্তা শুনতে হয়েছে। তারপরও আমরা এই প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতে আটঘাট বেঁধেই নেমেছি। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ছিল না, কিন্তু আমরা যখন শুরু করেছি তখন এই প্রকল্প শেষ করেই ছাড়বো। সড়কের যানজট ও বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে এবার কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, গতবার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল এবার একই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে কোরবানির ঈদ একটু চ্যালেঞ্জিং, এর জন্য কিছু বাড়তি উদ্যোগ আমাদের নেওয়া হয়েছে। পশুবাহী গাড়ি ধীর গতিতে চলে, সে বিষয়টিও আমরা বিবেচনায় রেখেছি। গার্মেন্টস কর্মীদেরও যাতে এবার ছুটি সময়মতোত দিয়ে দেয়, সে ব্যাপারেও আমাদের তারা (মালিকরা) কথা দিয়ে গেছেন। পশুর হাটকে কেন্দ্র করেও যাতে রাস্তায় কোনো সমস্যা সৃষ্টি না হয়, সে ব্যাপারে আমরা নজদারি করব। ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ হবে, এটা আমাদের মধ্যে অনেকেই আশা করেননি। কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন হয়েছে। কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ হয়েছে। এতগুলো প্রজেক্ট বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করা হবে, এগুলো কেউ চিন্তাও করেননি। কাজ করতে গিয়ে দুই-একটা জায়গায় সমস্যা হতেই পারে। সমস্যাটা কেন হয়, এটা আপনারা ভালো করেই জানেন। আমরা যে বিদেশি কোম্পানিকে দিয়েছি, তাদের যে কার্যক্রম, তাদের ধীরগতি একটা সমস্যা। এদিকে তাদের আবার ফান্ডিংয়েরও প্রবলেম রয়েছে। এসব কিছু মোকাবিলা করতেই দেরি হয়েছে। সামগ্রিকভাবে তিন চাকার গাড়িগুলোর ওপর (ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা) একটি নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে বলে জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। ওবায়দুল কাদের বলেন, বর্তমানে সারা দেশে প্রায় এক কোটির কাছাকাছি তিন চাকার গাড়ি চলাচল করে। এখন এ গাড়ির সঙ্গে বহু লোকের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে। কাজেই এখন এই গাড়িগুলোকে বন্ধ করাই সমাধান নয়। তিনি বলেন, এ গাড়িগুলোর একটি নীতিমালার আওতায় এনে কোথায় চলতে পারে, তাদের আলাদা রাস্তা করা হবে কি না এ বিষয়ে কাজ চলছে। আমাদের সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা কাজ করছে, জানি না কতটুকু কাজ করেছে তবে এ নীতিমালা তৈরির বিষয়ে আর বেশি সময় নেওয়া যাবে না। তবে এক মাস সময়ের বেশি যাতে না যায় সেটি লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ রাজধানী ও সড়ক এলাকায় অনেক ক্ষতি সম্মুখীন হচ্ছে। এ কারণে সব মহাসড়কেও সমস্যা হচ্ছে।