সংবিধান স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়। এ সংবিধান সমগ্র জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার মূর্ত প্রতীক হয়ে বেঁচে থাকবে।’ কিন্তু সংবিধান কার্যকর হওয়ার ৪৮ বছর পরে সংবিধান ও আইন থাকলেও আইনের প্রয়োগ অনেক ক্ষেত্রেই নেই। ফলে দেশে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে নানাবিধ অপরাধ ও নৈরাজ্য। তবে সে আইন যদি প্রয়োগ না করা যায় তাহলে তা নিতান্তই মূল্যহীন। বাংলাদেশে খুনের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড আছে তবুও দেশে হরহামেশা খুন হচ্ছেই। এর কারণ হচ্ছে দেশে যে পরিমাণ খুন হচ্ছে সে পরিমাণ বিচার হচ্ছে না বরং অপরাধীরা বিভিন্ন উপায়ে পার পেয়ে যাচ্ছে। একইভাবে ধর্ষণের শাস্তি যদি মৃত্যুদণ্ড করা হয় আর সেটা যদি কেবলই লিখিত থাকে কিন্তু প্রায়োগিক না হয় তাহলে সে আইনের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। সত্যি বলতে, ধর্ষণকে প্রচলিত আইনেই প্রতিহত করা সম্ভব হতো যদি সেটা জাতিধর্মবর্ণনির্বিশেষে সবার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেত। আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ারও রয়েছে অসংখ্য কারণ। তন্মধ্যে প্রধান কারণ হচ্ছে দুর্নীতি। দুর্নীতির কারণে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ভুক্তভোগীরা বিচারের জন্য আদালত তো অনেক দূরের কথা, থানা পর্যন্তও যেতে পারছে না। অন্যদিকে রাজনৈতিক ও ক্ষমতার প্রভাব অন্যতম কারণ। যখন কোনো অপরাধীর অপকর্ম প্রকাশ হয় তখন আমরা তাকে অপরাধী হিসেবে যতখানি পরিচয় খুঁজি তার চেয়ে বেশি খুঁজি তার রাজনৈতিক পরিচয় যা বিচারকার্য সম্পন্ন করতে বিঘ্ন ঘটায়। এছাড়াও, মামলার তদন্তে অস্বচ্ছতা এবং বিচারিক প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত জনবলের অভাব, পুলিশের অসহযোগিতা, অসাধু আইনজীবীদের পক্ষপাতিত্বও উল্লেখযোগ্য কারণ। আর এসব কারণে আইনের প্রয়োগ কঠিন হয়ে যায় এবং অপরাধীদেরও শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। দেশে যে পরিমাণ নারী নির্যাতন, ইভটিজিং ও ধর্ষণ হচ্ছে সে পরিমাণে অপরাধীদের বিচার হচ্ছে না। ফলে দেশে একের পর এক পৈশাচিক ও বর্বর ধর্ষণ চিত্র দেখতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় দেশের অগ্রযাত্রার গর্বিত অংশীদার নারীদের ধর্ষকের কালো থাবা থেকে রক্ষা করতে আইনের প্রয়োগ জরুরি। অপরাধ যেই করুক তাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করতে হবে। তাছাড়া, বিচারব্যবস্থাকে সমুদ্রের মতো স্বাধীন করতে হবে যেখানে কারো কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না এবং বিচারের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তিবর্গকে নিরপেক্ষ হয়ে বিচার কার্য সম্পন্ন করতে হবে। তাহলেই নারীরা তাদের স্বাধীনতা ফিরে পাবে এবং দেশ ও জাঁতি গড়ায় ঈর্ষণীয় অবদান রাখতে সক্ষম হবে। আমরা চাই আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করুক সরকার। কেননা সারা দেশে এই সমস্যাগুলো ক্রমেই প্রকট হচ্ছে।