আগামী ২১জুন রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচন। ফলে নির্বাচনী প্রচারণার জন্য এখন একেবারেই শেষ মুহূর্ত। কিন্তু মেয়র পদে প্রতিদন্দ্বীতার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত ও ১৪ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন শুধুমাত্র ব্যক্তিগত গ্রহনযোগ্যতায় যে ভোট পাবেন তার কাছাকাছি তুলনা করার মত কোন নাম নেই বলেও মনে করছেন নগরবাসী। মহানগরীর অফিস-আদালত ছাড়াও চায়ের দোকান, হাট-বাজারসহ রিক্সা বা যে কোন পরিবহনেও চলছে এমন আলোচনা। ফলে রাজশাহীর নগর পিতা কে হবেন তা নিয়ে যেন মানুষের মধ্যে কোন কৌতূহল নেই। তারপরেও প্রতিদন্দ্বীদের নূন্যতম দূর্বল ভাবছেন না রাসিকের সাবেক মেয়র লিটন ও তার স্ত্রী রেনী। যে কারণে মেয়রের চেয়ারে পুনরায় আসীন হতে নির্বাচনের ডামাডোলের আগে থেকে প্রচারণার কাজে ব্যস্ততায় কাটিয়েছেন এবং এখন পর্যন্ত তার ধারাবাহিকতা রেখেছেন আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য লিটন ও তাঁর স্ত্রী বিশিষ্ট সমাজসেবী শাহীন আকতার রেনী। শুধু নগরবাসী নয়, রাজশাহী নগরীতে বসবাসরত ছাড়াও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা রাজশাহীর জনগণ একত্র হয়ে বিভিন্ন গ্রুপ ভিত্তিক আওয়ামী লীগের এই অন্যতম নেতার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা করে যাচ্ছেন। যে বিষয়টি কমলাপুর রেলস্টেশন, বিমান বন্দর ও গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে শুরু করে রাজধানী ঢাকার জনসমাগম এলাকায় চলাচলরতরা দেখেছেন ও বুঝেছেন রাজশাহীর প্রিয় নগর পিতা কাকে বানাতে হবে। আর একই ইস্যুতে লিটনের পক্ষে প্রচারণা চালানোর বিষয়টি রাজশাহীর আশেপাশের সকল জেলাতে চলাচলরত সর্বস্তরের ব্যক্তিরাও প্রতিনিয়তই দেখেছেন এবং দেখছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লিটনের এমন অসংখ্য ব্যক্তি বা গৌষ্টি একত্র হয়ে বিভিন্ন গ্রুপ ভিত্তিক আসন্ন রাসিক নির্বাচনের নৌকার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। যে কারণে প্রচারণা কাজে জড়িতরা ছাড়াও সর্বস্তরের কাছে লিটনের বিকল্প হিসেবে কাউকে কল্পনাও করছেন না। গত কয়েকদিন সরেজমিন পর্যবেক্ষনে রাজশাহী মহানগরী ছাড়াও নাটোর, নওগাঁ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের এমন চিত্র পাওয়া গেছে। যেই প্রাপ্ত চিত্রে রাসিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগেই রাজশাহীর বাইরের মানুষরা নগর পিতার নাম ঘোষণা করে ফেলেছেন যা উল্লেখ না করলেই যেন নয়।
রাসিক নির্বাচনের সার্বিক পর্যবেক্ষণকালে দেখা গেছে, মেয়র পদের হিসেব ছেড়ে এখন সবাই নিজ নিজ ওয়ার্ডে পছন্দের কাউন্সিলর নির্বাচিত করতে পুরো ব্যস্ত সময় পার করছেন। ফলে সকল জায়গাতে এ নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুললেই মেয়রের হিসেব ছেড়ে নিজ নিজ এলাকার সম্ভাব্য কাউন্সিলরের নাম জানতে উৎসাহিত হচ্ছেন। প্রচারণার শেষ সময়ে রাসিকের সকল এলাকাতেই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছেন কাউন্সিলরের নাম। চলছে আলোচনা-সমালোচনাও। যার ফলশ্রুতিতে শনিবার (১৭ জুন) বিকেলে নগরীর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও আসন্ন নির্বাচনের প্রার্থী মতিউর রহমান মতির প্রচার মিছিলে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কাউন্সিলর প্রার্থী মতির অভিযোগ, তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জহিরুল ইসলাম রুবেলের সমর্থকরা এ হামলা চালিয়েছে। এ হামলায় মতির কয়েকজন কর্মী-সমর্থক আহত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে বলেও দাবি করে মতি সাংবাদিকদের জানান, শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে আমার নেতৃত্বে একটি নির্বাচনী প্রচার মিছিল ভাটাপাড়া থেকে শুরু করে শ্রীরামপুরের দিকে যাওয়ার সময় চন্ডিপুর এলাকায় পৌছলে অপর প্রার্থী রুবেলের লোকজন অতর্কিত ককটেল হামলা করে। এ সময় মিছিলে অংশ নেওয়া আমার কর্মী-সমর্থকরা ছোটাছুটি শুরু করলে তাদেরকে লাঠি-সোঁটা দিয়ে রুবেলের লোকজন পেটায়। এমন ঘটনায় রাজপাড়া থানায় দুটি সাধারণ ডায়েরি করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে রুবেল আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে বলেও অভিযোগ মতির।
এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, নির্বাচন ঘিরে প্রশসনের পক্ষ থেকে পক্ষপাতিত্বের কোন সুযোগ নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, শেষ সময়ের প্রচারনায় রোববার (১৮ জুন) নগরীর লক্ষীপুর, বাইপাস, ডিঙ্গাডোবাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় রিক্সাযোগে মেয়র পদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া অপর দুই প্রার্থী জাতীয় পার্টির প্রার্থী লাঙ্গল ও জাকের পার্টির গোলাপ ফুল প্রতিকের প্রচারণা দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, এদিন হঠাৎ করেই এসব প্রার্থীদের পোষ্টার নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় দেখা মিলেছে। যেন রাতারাতি মেয়র পদে অংশ নেওয়া অপর এই দুই প্রার্থীর পোষ্টারে যেন ছেয়ে যাচ্ছে নগরী। যা নগরীর লক্ষীপুর, সাহেব বাজার ও নগর ভবনসহ পুরো নির্বাচনী এলাকা যেন এক পোষ্টারের শহরে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও এদিন সন্ধ্যা ৭টায় প্রতিবেদন লেখা অবস্থায় এই দুই প্রার্থীদের পক্ষে ভ্রাম্যমান প্রচার মাইক দিয়ে চালানো হচ্ছিল জোর প্রচারণা। এই দুই প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা কাজে অংশ নেওয়া বাহন থেকে ভেসে আসছিল বিভিন্ন প্রতিশ্রুতিও।
উল্লেখ্য, রাসিকের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২১ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মোট ১৫২টি ভোট কেন্দ্রের এক হাজার ১৭৩টি কক্ষে ওইদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইভিএম-এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। রাসিক নির্বাচনে এবার ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫২ হাজার ১৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ১৮৫ এবং নারী ১ লাখ ৮০ হাজার ৯৭২। আর এবারই প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ৩০ হাজার ১৫৭ ভোটার। রাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে চারজন, ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৪৬ নারী কাউন্সিলর এবং ২৯টি ওয়ার্ডে ১১১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নাম রয়েছে। তবে ২০ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে একক প্রার্থী থাকায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে রবিউল ইসলামকে।