আসন্ন ঈদযাত্রায় ভয়াবহ যানজট, অস্বাভাবিক যাত্রী হয়রানি ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য কমানো এবং সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কমাতে পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি আগামী ২৭ জুন একদিনের সরকারি ছুটি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘ঈদযাত্রায় অসহনীয় যানজট, পথে পথে যাত্রী হয়রানি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও সড়ক দুর্ঘটনা’ বন্ধের দাবিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ দাবি জানান। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তের এসময়ে এবারের ঈদে ঢাকা থেকে প্রায় ৮০ লাখ মানুষ গ্রামের বাড়ি যাবে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে, এবারের ঈদে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ আশপাশের অঞ্চল থেকে ১ কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করবে। এছাড়াও এক জেলা থেকে অন্য জেলায় আরও প্রায় ৪ কোটি মানুষ যেতে পারে। এতে ২২ জুন থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত ঈদবাজার, গ্রামের বাড়ি যাতায়াতসহ নানান কারণে দেশের বিভিন্ন শ্রেণির পরিববহনে বাড়তি প্রায় ৮০ কোটি ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হতে পারে। ২২ জুন থেকে ঈদ যাত্রা শুরু হলেও প্রধানত ২৬ জুন বেতন-বোনাস পাওয়ার পর ২৬-২৭ জুন থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ হারে মানুষ রাজধানী ছাড়বে। কিন্তু আমাদের গণপরিবহনে সড়কপথে ৮ থেকে ১০ লাখ, নৌপথে ৮ থেকে ১০ লাখ, রেলপথে দেড় লাখ যাত্রী ওভারলোড হয়ে যাতায়াত করার সক্ষমতা আছে, বলেন মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, ২৭ জুন অফিস খোলা থাকায় ঈদের আগে মাত্র একদিন ঈদের ছুটি থাকায় বাধ্যতামূলক কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনেকেই আটকে যাচ্ছেন। ফলে ২৮ তারিখ সারাদেশের সব শ্রেণির গণপরিবহনে একসাথে সব যাত্রী রাস্তায় নামলে যাতায়াত পরিস্থিতি কোমায় চলে যেতে পারে। এ কারণে ২৭ জুন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হলে যাত্রীর চাপ কিছুটা কমতে পারে। তিনি বলেন, দেশে সড়ক পথের গণপরিবহনে ভয়াবহ সংকট চলছে। এ পরিস্থিতিতে মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রার সুযোগ দিলে বিগত ঈদুল ফিতরের ন্যায় এবারও রাজধানীর ৮ থেকে ১০ লাখ বাইকার দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেতে পারেন। এতে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হলেও সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ভয়াবহভাবে বেড়ে যাবে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব আরও বলেন, এবারের ঈদযাত্রায় পশুবাহী ট্রাক ও রাস্তার ওপর গড়ে ওঠা পশুর হাটের কারণে রাজধানীতে তীব্র যানজটে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়বে ঘরমুখো মানুষ। তাই এই মূহুর্ত থেকে রাজধানীর সব পথের ফুটপাত, রাস্তার হকার ও অবৈধ পার্কিং মুক্ত ও পশুরহাট রাস্তা থেকে অপসারণ করতে হবে। রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতের প্রবেশদ্বারগুলো পরিষ্কার রাখা ও ছোট যানবাহন, বিশেষ করে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক প্রধান সড়কে চলাচল বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তিনি। তা না করা হলে আগামী ২৭ জুন থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত রাজধানী অচল হয়ে যাবে বলে সতর্ক করেন তিনি। এই দুর্ভোগ নিয়ে ঈদযাত্রায় বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পেতে পরিবারের সদস্যদের ২২ জুন থেকে ধাপে ধাপে আগেই বাড়ি পাঠানোর পরামর্শও দেন তিনি। এ সময় বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির একটি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে ২০২২ সালে ঈদুল আজহায় ৩১৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৯৮ জন নিহত ও ৭৭৪ জন আহত হয়েছিল। এবারও ঈদযাত্রার বহরে মোটরসাইকেল যুক্ত থাকায় সড়ক দুর্ঘটনা ভয়াবহ হারে বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহ-সভাপতি তাওহিদুল হক লিটন, যুগ্ম মহাসচিব এম. মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, মো. আমজাদ হোসেন প্রমুখ।