মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কামার পল্লীতে চলছে কর্ম ব্যস্ততা। দিন রাত পরিবারের সদস্যরা পরিশ্রম করে তৈরী করছে পশু জবাইয়ের লোহার তৈরী অস্ত্র। বেচাকেনা তেমন না থাকলেও ঈদের সামনে বেচাকেনা হবে এমনটাই আশা করছেন তারা। তবে কয়লার দাম বেশি হওয়ায় এবার দ্যা ছুড়ি, বটি, চাপাতি ও চামড়া তোলার চাক্কু দাম আগের তুলনায় অনেক বেশি।
সাটুরিয়ার দরগ্রাম বাজারে গিয়ে দেখা যায়, দিনেশ দাস ও রামদাস কয়লা পুড়িয়ে লোহা গরম করে তৈরী করছেন কোরবানির পশু জবাই করার লোহার অস্ত্র। এ সময় কামার পল্লীতে লোহা পেটানোর টুংটাং শব্দে মুখরিত। পাশেই বসে কেউ চাপাতি দ্যা ও ছুড়িতে শান দিচ্ছে আবার কেউ লোহা আগুনে পুড়িয়ে লাল করে পানিতে ভিজিয়ে রেখে তৈরী করছে পশু জবাইয়ের অস্ত্র। পরিবারের মহিলা সদস্যরা হাপর টানছে এবং কয়লায় বাতাস দিয়ে আগুন জলন্ত করছে। এদিকে ক্রেতারা পুরানো মরিচা ধরা পশু জবাইয়ের যন্ত্রপাতি চাপাতি বটি ও ছুরিতে শান দেওয়ার জন্য কামারের দোকানে ভিড় করছে। কামাররা এসব লোহার ধাতব আগুনে পুড়িয়ে লাল করে তৈরী করছেন কোরকানি পশু জবাইয়ের অস্ত্র।
দরগ্রাম বাজারের দিনেশ দাস বলেন, লোহা ও কয়লার দাম বেশি হওয়ায় এবার পশু জবাইয়ের যন্ত্রপাতির দামও বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, একটি ছোট চাক্কু দাম এবার ২০০ টাকায় কিনতে হবে। একটি বটির দাম ৪০০ টাকা, মাঝারি ছুড়ির দাম ৩০০ টাকা ও একটি চাপাতির দাম হবে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। গত বছর এর দাম ছিল অর্ধেকে। এবার সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় পশু জবাইয়ের যন্ত্রপাতির দাম বেড়ে গেছে।
রামদাস বলেন, এলাকার মানুষের পুরানো যন্ত্রপাতি দ্যা কাচি, ছুড়ি বটি ও চাপাতি আগুনে পুড়ে পানি দিয়ে শান দেওয়া হয়। এতে সংসার চালানো দুস্কর হয়ে পরে। একটি কাঁচি শান বা ধার দিলে ২০ টাকা পাই। একটি চাপাতি শান দিলে ১০০ টাকা, বটি ছুড়ি শান দিলে ৫০ টাকা নিয়ে থাকি। দ্রব্যমূল্যের দাম যেভাবে বেড়ে গেছে তা দিয়ে সংসার চলে না। তাই কোরবানি ঈদের সময় পশু জবাইয়ের নতুন যন্ত্রপাতি তৈরী করে বড় একটা আয় হয়। ওই আয়ের টাকা ও সারা বছরে টুকটাক কাজ করে চলি। বছরের অন্যন্য সময়ে বেশি কাজ না থাকলেও ঈদের সময় ব্যস্ত সময় পার করি।
দিনেশ দাসের দোকানে আসা ক্রেতা মো. লুৎফর রহমান বলেন, পশুর চামড়া ছাড়ানোর চাক্কু গতবার কিনে ছিলাম ৫০ টাকা দিয়ে। এবার সেই চক্কু কিনলাম ২০০ টাকা দিয়ে। একটি চাপাতি কিনেছিলাম ৬০০ টাকা দিয়ে। এবার সে চাপাতির দাম ১ হাজার টাকা চাচ্ছে। আরেক ক্রেতা জসিম উদ্দিন বলেন, গতবার মাংস কাটার জন্য একটি বটি কিনেছিলাম ১৫০ টাকায়। এবার সে বটির দাম হয়েছে ৪০০ টাকা। তিনি মনে করেন ঈদ উপলক্ষে অনেকটাই দাম বেড়ে গেছে।