শেষ দিনের রোমাঞ্চকর লড়াই আর শেষ সময়ের স্নায়ুক্ষয়ী উত্তেজনার পর ম্যাচের শুরুর দিনকে মনে হতে পারে সুদূর অতীত। তবে এই ম্যাচের বাস্তবতাই এমন যে, প্রথম দিনের শেষ বিকেলে ফিরে যেতেই হচ্ছে। তখন যদি বেন স্টোকস আচমকা ইনিংস ঘোষণা না করতেন, তাহলে তার দল কি হারত? তুমুল বিতর্ক চলছে ইংল্যান্ডে। তবে পেছনে ফিরে আক্ষেপে পোড়ার লোক নন স্টোকস। সিদ্ধান্তটি নিয়ে নিজের কাছে একদম পরিষ্কার ইংলিশ অধিনায়ক। এজবাস্টনে জয় প্রায় মুঠোয় পেয়েও হারিয়ে ফেলেন স্টোকসরা। ২৮১ রান তাড়ায় অস্ট্রেলিয়ার ৮ উইকেট পড়ে যায় ২২৭ রানে। তবে নবম উইকেটে ৫৫ রানের অসাধারণ অবিচ্ছিন্ন জুটিতে তাদেরকে জয় এনে দেন দুই বোলার প্যাট কামিন্স ও ন্যাথান লায়ন। যে এজবাস্টনে ২০০৫ অ্যাশেজে ২ রানের যন্ত্রণাময় হারের স্বাদ পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, সেখানেই এবার তারা পায় ২ উইকেটের স্মরণীয় জয়। কাছে গিয়েও জিততে না পারার কারণ অনুসন্ধানে সবার আগেই উঠে আসছে প্রথম দিনের সেই ঘটনা। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ইংল্যান্ড এগিয়ে যাচ্ছিল চারশর দিকে। জো রুট খেলছিলেন তখন ১১৮ রানে। তার সঙ্গী অলি রবিনসনও বেশ জমে গিয়েছিলেন। দিনের খেলার ২০ মিনিট বাকি থাকতে হঠাৎ ইনিংস ঘোষণা করে দেন স্টোকস। গত এক বছরে ‘বাজবল’ ক্রিকেটের জমানায় এরকম ইনিংস ঘোষণা আগেও গিয়েছেন স্টোকস। এবারেরটি তাই বিশাল কোনো বিস্ময় হয়ে আসেনি। তবে অ্যাশেজের প্রথম দিনেই এমনটি করা, যেখানে বিশেষজ্ঞ একজন ব্যাটসম্যান দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করে ক্রিজে আছেন, তার সঙ্গীও সামলে নিচ্ছেন, এই প্রেক্ষাপটে ইনিংস ঘোষণা নিয়ে সেদিন থেকেই চলছে বিতর্ক। ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়কদের বেশ কজনই টেস্ট চলার সময় বলেছেন, তারা নেতৃত্বে থাকলে এরকম কিছু করতেন না। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ম্যাচ শেষে ইংল্যান্ড অধিনায়কের সিদ্ধান্তটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার জোয়ার তীব্র হয়েছে আরও। ২০০৫ অ্যাশেজ জয়ী ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল ভন বিবিসির টেস্ট ম্যাচ স্পেশালে জোর দিয়ে বললেন, পরের টেস্টেই একইরকম পরিস্থিতি থাকলে ইনিংস ঘোষণা করবেন না স্টোকস। “ওই ৩০ বা ৪০ রান এদিন সকালে যদি বেন স্টোকসকে জিজ্ঞেস করা হয় যে, ‘প্রথম দিনে জো (রুট) যদি আর ৩০টি রান করতে পারত, ওই রানগলি যদি পুঁজিতে থাকত, তাহলে কি ভালো লাগত না?’ অবশ্যই তার ভালো লাগত।” “আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, লর্ডসে (পরের টেস্টে) যদি তারা প্রথমে ব্যাট করে এবং ২০ মিনিট বাকি থাকতে স্কোর ৮ উইকেটে ৩৯৩ থাকে, নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি, তারা ব্যাটিং চালিয়ে যাবেৃ জো রুট ১১৮ রানে অপরাজিত থাকা অবস্থায় তো অবশ্যই নয়।” স্টোকসের সিদ্ধান্তের পেছনের ভাবনাটি অনুমান করে নিতে সমস্যা হওয়ার কথা নয় কারও। ম্যাচ শেষে পুরষ্কার বিতরণীতে তিনি বললেন, নিজের আগ্রাসী মানসিকতা থেকে তিনি পিছু হটবেন না। “আমার মনে হয়েছিল, (অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডারে) ছোবল দেওয়ার সুযোগ ছিল সেটি। যেভাবে আমি ক্রিকেট খেলে চলেছি, স্রফে অ্যাশেজ বলেই সেই ধরণ তো পাল্টে ফেলতে পারি না।” “হয়তো সেদিন আমরা বাড়তি আরও ৪০ রান করতে পারতাম.. কিংবা (ইনিংস ঘোষণার পর) ওদের দুটি উইকেট নিতে পারতাম। ‘যদি-কিন্তু’ নিয়ে ভাবনায় প্রভাবিত হওয়ার মতো অধিনায়ক আমি নই। অস্ট্রেলিয়াকে নাড়িয়ে দিয়ে দ্বিতীয় দিনের শুরুটা চূড়ায় থেকে করার সুযোগ হিসেবেই আমরা এটিকে দেখছিলাম।” পরে সংবাদ সম্মেলনেও তিনি পরিষ্কার করলেন, ম্যাচ হেরে গেলেও প্রথম দিনের ওই ইনিংস ঘোষণার গভীরে ডুবে থাকতে চান না তিনি। “যদি একইরকম অবস্থানে থাকি? হ্যাঁ, ২০ মিনিট বাকি থাকতে ৬ উইকেটে ৩৯৮ রান থাকলে ভালোই লাগবে (ইনিংস ঘোষণা করতে), দারুণ লাগবে এটা।” “আমি তো ঘুরে দাঁড়িয়ে এটাও বলতে পারি, ‘যদি আমরা তখন ইনিংস ঘোষণা না করতাম, তাহলে কি পাঁচ দিনের শেষে এরকম রোমাঞ্চ পেতাম?’ আমি শতভাগ নিশ্চিত নই। পেছন ফিরে তাকিয়ে ‘যদি-কিন্তু-তবে’ নিয়ে ভাবার লোক আমি নই। সত্যিটা হলো, শেষ পর্যন্ত আমরা জিততে পারিনি। ব্যস।” স্টোকসের নেতৃত্বর ধরন নিয়ে ধারণা আছে বলে ওই ইনিংস ঘোষণা বড় কোনো বিস্ময় হয়ে আসেনি প্যাট কামিন্সের কাছে। তবে ম্যাচ শেষে অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়কও বুঝিয়ে দিলেন, তিনি নিজে এরকম কোনো সিদ্ধান্ত নিতেন না। “আমি খুব বেশি চমকে যাইনি। তবে উইকেট বেশ ভালো মনে হচ্ছিল। আমার কাছে তাই মনে হয়েছিল, প্রথম ইনিংসে প্রতিটি রান গুরুত্বপূর্ণ।”