খুলনার পাইকগাছায় চাঁদখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাজাদা মো. আবু ইলিয়াসের বিরুদ্ধে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, নিজস্ব বাহিনী গড়ে তুলে তাদের দিয়ে ইউপির বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা ও ইউপি সদস্যদের লাঞ্ছিত করাসহ সরকারি মালামাল টাকার বিনিময়ে বণ্টনের অভিযোগ এনে রাষ্ট্রের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন সংরক্ষিত (৪, ৫, ৬নং ওয়ার্ডের) নারী সদস্য ফাতিমা তুজ জোহুরা (রূপা)। অপরদিকে এই নারী সদস্যের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার পাল্টা অভিযোগ এনে ইউএনও দপ্তরে অভিযোগ করেছেন চেয়ারম্যান। বৃহস্পতিবার ইউপি পরিষদে চেয়ারম্যানের রুমে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে সদস্যের সকল অভিযোগ মিথ্যা বলে জানান চেয়ারম্যান। এ সময় অন্য সকল ইউপি সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন, প্যানেল চেয়ারম্যান মো. আব্দুল্যাহ আল মামুন, ইউপি সদস্য আনিছুর রহমান সানা, মো. কায়ুম হোসেন, মোছাঃ এস্নেয়ারা বেগম ও জুলেখা খাতুন। চেয়ারম্যান পাল্টাপাল্টি এই অভিযোগের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। গত ১৪ জুন সংরক্ষিত ইউপি সদস্য ফাতিমা তুজ জোহুরা (রূপা) স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগপত্র প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে দাখিল করেছেন। লিখিত অভিযোগে এই সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য উল্লেখ করেন- ‘ইউপি চেয়ারম্যান শাহাজাদা আমেরিকা প্রবাসী। তিনি নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন এবং নৌকা প্রতীক পোড়ানো মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি (যার নং-জিআর ২৫০/২১)। তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নানা অনিয়ম, অনাচার ও স্বেচ্ছাচারিতা করে আসছেন। তিনি ওয়ার্ড সদস্যদের মূল্যায়ন না করে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। পরিষদের নির্ধারিত বাজেটের চিঠিপত্র দেখান না। প্রতি মাসে মাসিক মিটিং করার কথা থাকলেও তিনি তা না করে ৩-৪ মাস পরে হঠাৎ করে সদস্যদের ডেকে মাসিক সভা করে সদস্যদের কাছ থেকে স্বাক্ষর করে নেন। এতে কখন কী পরিমাণ বরাদ্দ আসে তা সদস্যদের জানানো হয় না।’ অভিযোগে আরও বলা হয়, ‘স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন-২০০৯ এর নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পরিষদের সদস্যদের মধ্যে তার মনোনীত ৭নং ও ৯নং ইউপি সদস্য আর ইউপি সচিবকে সস্পৃক্ত করে নিজের ইচ্ছামাফিক বিভিন্ন কার্যক্রম করে থাকেন। প্রায় ২ বছর ধরে চেয়ারম্যান শাহাজাদা আবু ইলিয়াস স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন-২০০৯ এর ৪৭ এর উপধারা (৩) নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন টিআর, কাবিখা ও থোকসহ অন্য সব প্রকল্পের বরাদ্দ অর্থ বণ্টন এবং পরিষদের সিংহভাগ কাজ একক সিদ্ধান্তে বাস্তবায়ন করে আসছেন। ইউপি সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা না করে ইচ্ছামতো প্রকল্পের অর্থ বণ্টন করেন। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন-২০০৯ অনুযায়ী সংরক্ষিত ইউপি সদস্য হিসেবে রেশিও অনুযায়ী ভাগের স্লিপের মাল, রেশন কার্ড, গর্ভকালীন ভাতা, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, ভিজিডি কার্ড, ভিজিএফ কার্ডসহ অন্য সরকারি সব বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত করে চেয়ারম্যানের গড়ে তোলা নিজস্ব বাহিনী ও একান্ত লোকদের দেওয়ার কারণে প্রকৃত দাবিদাররা বঞ্চিত হচ্ছেন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চেয়ারম্যান ৭ ও ৯নং ইউপি সদস্য আর সচিবকে দিয়ে অফিস মেইনটেইন করেন এবং রেশন কার্ড, ভিজিডি কার্ড, ভিজিএফ কার্ড, গর্ভকালীন ভাতা, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা ও পানির ট্যাংকির জন্য টাকা নেন। টাকার বিনিময়ে সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে একই ব্যক্তিকে বারবার সরকারি সুবিধা দেওয়াসহ ইতঃপূর্বে কোনো ইউপি সদস্যকে না জানিয়ে চেয়ারম্যানের মনমতো করা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকা, টিসিবি বিতরণে চেয়ারম্যানের সাঙ্গপাঙ্গের খবরদারিসহ নানা অনিয়মের প্রতিবাদ করায় চেয়ারম্যান তার গঠিত বাহিনী দিয়ে প্রথমে ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে ১, ২, ৩নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সদস্যকে লাঞ্ছিত করে এবং চাঁদখালী বাজারে প্রকাশ্যে ৬নং ইউপি সদস্যকে মারধর করে জখম করে। এ ঘটনায় পাইকগাছা থানায় পৃথক জিডি ও মামলা হয় (জিডি নং-৭২০, তাং-১৫/১১/২২; মামলা নং-১৮, তাং-১৮/১১/২২)। অপরদিকে গত ২০ মে এই সংরক্ষিত নারী সদস্যের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিশেষ সুবিধা না পাওয়ায় পরিষদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচারের অভিযোগ এনে ইউএনও বরাবর অভিযোগ করেছেন চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন সদস্য। এ ছাড়াও এই নারী সদস্যের নামে সরকারি সুবিধা ভোগীর কার্ড থাকার কথা জানিয়েছেন চেয়ারম্যান। অপরদিকে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর ছাড়া যেখানে কোনো কার্ড হয় না সেখানে ইউপি সদস্যের নামে কার্ড প্রদানে তিনি কেন স্বাক্ষর করলেন এমন প্রশ্নে চেয়ারম্যান বলেন বিষয়টি দৃষ্টি গোচর হলে কার্ড চিজ করে নিয়েছি।