পাবনার চাটমোহর উপজেলার চক উথুলী শাহ চেতন (রহ.) মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মওলানা মোঃ হুজ্জাতুল্লাহর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এনিয়ে মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে বিরোধ ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
অভিযোগে জানা গেছে,এই মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী নেই বললেই চলে। এবতেদায়ী ও দাখিল শাখা মিলে খাতা-কলমে ২৩০ জন শিক্ষার্থীর নাম থাকলেও,বাস্তবে অর্ধশত শিক্ষার্থীর দেখা মিলেছে। এ যেন কাজীর গরু কেতাবে আছে,গোয়ালে নেই।
বুধবার (২৪ মে) দুপুরের দিকে সরেজমিনে মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা গেল,এবতেদায়ী ১ম থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত ১০জন শিশু শিক্ষার্থীকে একটি কক্ষে বসিয়ে মাদ্রাসার ক্বারী শিক্ষক মোঃ রেজাউল করিম পাঠদান করাচ্ছেন। এক কক্ষে ৫টি শ্রেণীর শিক্ষার্থীকে কী পড়ানো হচ্ছে,জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। অবিশ্বাস্য ঘটনা এটি।
দাখিল ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রীদের উপস্থিতি ছিল ৪০ জনের মতো। কোন শ্রেণী ৬ জন আবার কোন শ্রেণীতে ১০জন। মাদ্রাসার মোট শিক্ষকের সংখ্যা ১৬ জন আর কর্মচারী ৪জন। প্রতিমাসে এই মাদ্রাসার বেতন হিসেবে সরকার ব্যয় করছেন ৪ লাখ ৪ হাজার ২৫৩ টাকা।
মাদ্রাসার সভাপতি মোঃ সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ করেন,মাদ্রাসার সুপার মওলানা মোঃ হুজ্জাতুল্লাহ মাদ্রাসার বই বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সভাপতি হিসেবে তাকে মানেন না সুপার। ১ম থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থী নেই। ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতিদিন ১৫/২০ জন হাজির থাকেন। সুপারের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে মাদ্রাসাটি আজ ধ্বংসের মুখে। শিক্ষকদের মধ্যে বিরোধ সুপারের কারণেই। সুপারের স্ত্রীও এই মাদ্রাসায় চাকুরি করেন।
মাদ্রাসার অফিস সহকারী আঃ মান্নান বলেন,সুপার নিজের ইচ্ছেমতোই সবকিছু করেন। কাউকে মানেন না। বই বিক্রি করে টাকা পকেটে তুলেছেন। শিক্ষার্থীর তুলানায় প্রতি বছর বেশি বইয়ের চাহিদা দিয়ে,পরে তা বিক্রি করে দেন। মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন,সুপার কমিটি মানেন না। কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি মঞ্জুর রহমান অভিযোগ করেন,সুপার শিক্ষকদের মধ্যে বিরোধ তৈরি করেছেন। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ফায়দা লুটছেন। তিনি মাদ্রাসার সুপারসহ ৩জনের বিরুদ্ধে মারপিটের অভিযোগ এনে গত মাসে থানায় একটি জিডি করেছেন বলে জানান।
মাদ্রসার নিরাপত্তা কর্মী সালাহ উদ্দিন বই বিক্রির কথা উল্লেখ করে বলেন,সুপার বই বিক্রি করেছেন,এটা সত্য। মাদ্রাসার সুপার,সহ-সুপার মহিতুন নেসা ও বিএসসি শিক্ষক জায়দুল ইসলাম পরস্পর যোগসাজসে নানা অনিয়ম করে চলেছেন। সহ-সুপার মহিতুন নেসা বলেন,সুপারের বিরুদ্ধে কয়েকজন শিক্ষক অবস্থান নিয়েছেন। এবতেদায়ী শাখায় শিক্ষার্থী কম,এটা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জানেন,তিনি বলেছেন,কোন অসুবিধা নেই।
মাদ্রাসার সুপার মওলানা মোঃ হুজ্জাতুল্লাহ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বরৈন,আমি কোনদিন কখনও বই বিক্রি করিনি। মাদ্রাসার অফিস সহকারী আঃ মান্নান নিয়মিত মাদ্রাসায় আসেন না। এটা বলার কারণেই আমার বিরুদ্ধে এ ধরণের মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছে। সহকারী শিক্ষক মঞ্জুর রহমানকে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি তার জানা নেই। তার কাছে কোন অভিযোগ না করে তিনি থানায় অভিযোগ করেছেন। এবতেদায়ী শাখার শিক্ষার্থী কম বলে তিনি দাবি করে জানান,প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপণ্ডবৃত্তি দেওয়া হয়। মাদ্রাসায় দেওয়া হয়না,তাই শিক্ষার্থী পাওয়া যায়না। দাখিল শাখায় যথেষ্ট শিক্ষার্থী আছে বলে তার দাবি।
এলাকাবাসী,অভিভাবক ও মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুপারের অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানিয়েছেন।