ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকা থেকে গ্রামে ফেরা মানুষদের যাত্রা শুরু হয়েছে শনিবার থেকে। বাসে ও ট্রেনে এই যাত্রার প্রথমদিনে তেমন চাপ দেখা যায়নি। এ সময় টিকিট সোনার হরিণ হয়ে যায় কিন্তু শনিবার রাজধানী থেকে বিভিন্ন রুটের অনেক বাস খালি সিট নিয়েও যাত্রা করেছে বলে জানা গেছে। কোরবানির ঈদের আগে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে তেমন যাত্রী নেই। এমন পরিস্থিতিতে অনেক বাস মালিক কাউন্টার বন্ধ রেখেছে। এর মধ্যে অল্প সংখ্যক এলে সহজেই যেমন মিলছে টিকিট, তেমনি যথাসময়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে বাসগুলো। শনিবার গাবতলী বাস টার্মিনলে এমন চিত্র দেখা গেছে। বাসকাউন্টার থেকে জানানো হয়, নানা কারণে যাত্রী সংকট গাবতলীতে। কেউ পদ্মা সেতু হয়ে চলাচল করছে। অনেকের হাতে টাকা পয়সা নেইসহ নানা কারণে যাত্রী সংকট। দিগন্ত পরিবহনের ব্যবস্থাপক মো. মমিন বলেন, গাবতলী টার্মিনালে যাত্রী নেই, এমন চিত্র কখনো দেখিনি। সিট খালি রেখেই আমরা বাস ছাড়ছি, এতে তেলের দাম উঠছে না। যাত্রী এখন গাবতলী আসে না, পদ্মাসেতু হয়ে বাড়ি যাচ্ছে। এ ছাড়া এবার ঈদের আমেজও কম, মানুষের হাতে পয়সা কড়ি নাই। হাতে টাকা পয়সা না থাকার ঈদের সেই আনন্দে ভাঁটা পড়েছে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা সাতক্ষীরাগামী দ্রুতি পরিবহনের ব্যবস্থাপক কাজী তরিকুল ইসলাম বলেন, যাত্রীর অভাবে বাস ছাড়তে পারছি না। মানুষের হাতে টাকা কম। ঈদের সেই আনন্দ দেখছি না। গাবতলীতে হাতে টিকিট নিয়ে ঘুরছেন কাউন্টার মাস্টাররা। যাত্রীর জন্য হাঁকডাক করছেন। দু-একজন যাত্রী গাবতলীতে প্রবেশ করলেই ছুটে যাচ্ছেন। গাবতলী টার্মিনালে আসা যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিরপুর এলাকায় বসবাস করা মানুষ এ কাউন্টারে আসছেন। বাড়ির পাশে গাবতলী হওয়ায় তারা এ কাউন্টার থেকে টিকিট নিয়ে গ্রামে ফিরছেন। মাগুরা, রাজবাড়ীর অনেক যাত্রী আবার ভেঙে ভেঙে বাড়ি যাচ্ছেন। তবে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদ ব্যক্ত করছেন ২৬ ও ২৭ জুন সরকারি ছুটি ঘোষণা হওয়ার ফলে কিছুটা যাত্রীর চাপ বাড়তে পারে।
এদিকে শনিবার থেকে শুরু হয়েছে ট্রেনে ঈদযাত্রা। যেসব যাত্রী অনলাইনে টিকিট কাটতে পারেননি তাদের জন্য ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট রাখা হয়েছে। তবে যাত্রা শুরুর দিনে স্ট্যান্ডিং টিকিট কাটায় বাড়তি চাপ দেখা যায়নি। শনিবার সকালে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে এমন চিত্রই দেখা গেছে। ঈদযাত্রায় ভোগান্তি এড়াতে অনেকেই ট্রেন যাত্রাকে বেছে নেন। এ বছর ঈদুল আজহার ট্রেনের শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়েছে। ঈদযাত্রা শুরুর দিনে স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্যে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে পারছেন যাত্রীরা। অনলাইনে যেসব যাত্রী টিকেট পেয়েছেন তারা আগেই স্টেশনে প্রবেশ করছেন। আর যেসব যাত্রীরা অনলাইনে আগে টিকিট কাটেননি তারা স্টেশনে এসে স্ট্যান্ডিং টিকিট কাটছেন। তবে স্ট্যান্ডিং টিকিট কাটায় নেই তেমন ভোগান্তি। কমলাপুরে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ১ থেকে ৬ নং কাউন্টার থেকে দেওয়া হচ্ছে ট্রেনের স্ট্যান্ডিং টিকিট। কাউন্টারগুলোতে নেই তেমন লাইন। ফলে সকাল থেকে যারাই টিকেট কাটতে আসছেন তারা ২৫ ভাগ স্ট্যান্ডিং টিকিট পাঁচ্ছেন। স্টেশনে টিকিট বিক্রির বিষয়ে কমলাপুরে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, আমরা ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট কাউন্টার থেকে দিচ্ছি। অনলাইনে যারা টিকিট কেটেছেন তাদের স্টেশনে প্রবেশে যেন কোন অসুবিধা না হয়, সেজন্য এবার আমরা অন্য পাশে ১ থেকে ৬ নং কাউন্টার থেকে এই টিকিটগুলো দিচ্ছি। সকাল থেকে স্ট্যান্ডিং টিকিটের চাপ কিছুটা কমই দেখা যাচ্ছে। এবারও নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে নেওয়া হয়েছে বাড়তি উদ্যোগ। প্রতিটি যাত্রীকে অনলাইন মাধ্যমে কাটা টিকিট দেখিয়ে স্টেশনের ভেতরে প্রবেশ করতে হচ্ছে। একই সঙ্গে এনআইডি বা জাতীয় পরিচয়পত্রও সঙ্গে রাখতে হচ্ছে। টিকিটবিহীন কোনো যাত্রীকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। যাত্রীদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে রেলওয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী বা আরএনবি রয়েছে। যাত্রীদের তথ্য দিতে বসানো হয়েছে হেল্প ডেস্ক। সেখান থেকে জানা যাচ্ছে কোন ট্রেন কত নম্বর প্ল্যাটফর্মে রয়েছে বা কখন আসবে। যদিও ডিজিটাল স্ক্রিনের মাধ্যমে ট্রেনের প্ল্যাটফর্ম ছাড়ার সময় দেওয়া আছে। এর আগে গত ১৪ জুন থেকে আন্তঃনগর ট্রেনের ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। রেলওয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৪ জুন দেওয়া হয় ২৪ জুনের টিকিট। একইভাবে ১৫ জুন দেওয়া হয় ২৫ জুনের, ১৬ জুন ২৬ জুনের, ১৭ জুন ২৭ জুনের এবং ১৮ জুন দেওয়া হয় ২৮ জুনের অগ্রিম টিকিট। একইভাবে ঈদযাত্রার ট্রেনের ফিরতি অগ্রিম টিকিট দেওয়া শুরু হয় ২২ জুন থেকে। সেই হিসাবে ২২ জুন দেওয়া হয় ২ জুলাইয়ের টিকিট। যথাক্রমে ২৩ জুন ৩ জুলাইয়ের, ২৪ জুন ৪ জুলাইয়ের, ২৫ জুন ৫ জুলাইয়ের ও ২৬ জুন ৬ জুলাইয়ের টিকিট দেওয়া হবে ফিরতি ট্রেনের টিকিট। এবার ট্রেনের অগ্রিম টিকিট শতভাগ অনলাইনে দেওয়া হলেও টিকিট বিক্রিতে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়। অনলাইনে দুই ভাগে দেওয়া হয় অগ্রিম টিকিট। ঈদযাত্রায় পশ্চিমাঞ্চলে চলাচল করা সব আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট অনলাইনে পাওয়া যায় সকাল ৮টা থেকে। আর দুপুর ১২টা থেকে পূর্বাঞ্চলে চলাচল করা ট্রেনের টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়। ঈদুল আজহায় এবার বিভিন্ন রুটে মোট আট জোড়া বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করবে রেল কর্তৃপক্ষ।