উদ্ধোধনের পরদিন থেকে প্রথম বছরে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়েছে ৫৬ লাখ ৭৫ হাজার ২০৫টি যানবাহান। এসময়ে টোল আদায় হয়েছে ৭৯৮ কোটি ২৩ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫০ টাকা। রোববার পদ্মা সেতু সাইট অফিসের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আমিরুল হায়দার চৌধুরী এ তথ্য জানিয়েছেন। তবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও এসএসএফ তাদের যানবাহন পারাপারে প্রতিমাসে মোট টোল একসঙ্গে দেওয়ায় চলতি মাস শেষে তাদের টোল পাওয়া যাবে। এতে প্রথম বছরের টোলের পরিমাণ আরও কিছুটা বাড়বে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। সেতু বিভাগের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতিদিন গড়ে পাড়ি দিয়েছে সাড়ে ১৫ হাজারের কিছু বেশি যানবাহন। আর দৈনিক গড়ে আদায় হয়েছে ২ কোটি ১০ লাখ টাকার বেশি টোল। গত ২০ এপ্রিল সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার পর বেড়েছে যানবাহনের সংখ্যা। আদায় হচ্ছে বাড়তি টোল। এদিকে, উদ্ধোধনের পর এক মুহূর্তের জন্যও পদ্মা সেতুতে বন্ধ ছিল না যানচলাচল। এ সেতু দিয়ে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ গন্তব্যের পথে ছুটে চলেছেন অবিরাম গতিতে। স্বপ্নের সেতু দিয়ে চলাচল করতে পেরে উচ্ছ্বসিত এই পথের যাত্রী, চালকসহ সংশ্লিষ্টরা। ভোগান্তির দৃশ্যপট পরিবর্তন করে স্বস্তির যাত্রা তৈরির জন্য তারা ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। কয়েকজন যাত্রী জানান, এক বছর পূর্তির এই দিনটি এ পথে যাত্রীদের জন্য স্মরণীয়। কারণ ঠিক এক বছর আগেই এই পথে যাতায়াতে ভোগান্তি মুক্ত হয়েছিল কোটি মানুষ। দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় ঘটেছিলো নতুন বিপ্লব। দিনে কিংবা রাতে এখন সমান গতিতে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে সাধারণ মানুষ। সবই সম্ভব হয়েছে হয়েছে ছয় কিলোমিটারের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কারণে। ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দ্বিতল পদ্মা সেতু গত বছর ২৫ জুন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই দিন প্রধানমন্ত্রী নিজে মাওয়া প্রান্ত দিয়ে টোল দিয়ে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুতে আরোহণ করেন। পরদিন সকাল থেকে সেতু যানচলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। প্রথমে সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল করলেও কয়েকদিনের মধ্যে তা বন্ধ করা হয়। তবে দুই মাসের বেশি সময় ধরে পদ্মা সেতু দিয়ে শর্তসাপেক্ষে মোটরসাইকেল পারাপার হচ্ছে। গড়ে প্রতিদিন পার হচ্ছে সাড়ে ৪ হাজারের অধিক দুই চাকার এই যান। ফলে মানুষের যাতায়াত সহজ তো হয়েছেই, বাড়ছে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ। যান চলাচলে বিশৃঙ্খলা এড়াতে বন্ধ হলেও বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা আর চালকদের সচেতনতায় পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গেছে। নিয়ম মেনেই অধিকাংশ চালক সেতু পার হচ্ছেন। এতে একদিকে এসব যানে সহজেই যাতায়াত করতে পারছেন তারা, অন্যদিকে আদায়কৃত টোলে বাড়ছে রাজস্ব আয়। সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, মোটরসাইকেল চলাচলের জন্য সেতু উন্মুক্তের পর গত ২০ এপ্রিল থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত সেতু পার হয়েছে ২ লাখ ৯৩ হাজার ২৮২টি মোটরসাইকেল। আর এতে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৯৩ লাখ ২৮ হাজার ২০০ টাকা। দেখা যায়, পদ্মা সেতুর উত্তর থানা মোড় থেকে মোটসাইকেল চলার সড়ক হয়ে নির্ধারিত ডেডিকেটেড লেন দিয়ে সেতুতে উঠছে মোটরসাইকেল। গত ২০ এপ্রিল মোটরসাইকেল চলার জন্য সেতু খুলে দেওয়ার পর সেতু আলাদা করে লেন করা হয়েছিল রশি দিয়ে। বর্তমানে রশি দিয়ে পৃথক লেন না থাকলেও নির্ধারিত স্থানের পাশ দিয়ে সেতু পার হচ্ছে এই যান। পদ্মা সেতুর উত্তর থানার মোড় থেকেই চালকদের শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে ট্রাফিক পুলিশ। স্বপ্নের সেতু হয়ে সহজে ফিরতে পারায় খুশি মোটরসাইকেল আরোহীরা। ঢাকা থেকে শরীয়তপুরগামী মোটরসাইকেল আরোহী আহতাব হোসেন বলেন, ঢাকায় বড় ভাইয়ের ব্যবসার সঙ্গে সহযোগী হিসাবে কাজ করি। বিভিন্ন প্রয়োজনেই সপ্তাহে দু-একবার বাড়িতে যেতে হয়। সেতু দিয়ে সহজেই যখন তখন যেতে পারি। আমরা চেষ্টা করি নিয়ম মেনেই নির্ধারিত গতিতে গাড়ি চালানোর জন্য। সবাই সবাইকে উৎসাহ দেই নিয়ম মানার জন্য। যেন আর কখনও সেতুতে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ না হয়। একই কথা জানান, আরেক আরোহী মো. শিমুল। তিনি বলেন, মোটরসাইকেল চলতে দেওয়ায় এখন নিয়মিত ঢাকায় যাতায়াত করি। ছোট-খাটো প্রয়োজনেও যাতায়াত করি, কারণ এখন ভোগান্তি নেই। আর মোটরসাইকেল চালানো সাশ্রয়ী, যাতায়াতও সহজ হয়েছে। শৃঙ্খলা রক্ষায় ট্রাফিক পুলিশের ব্যাপক তৎপরতাও চোখে পড়ে। পদ্মা সেতুতে শৃঙ্খলা রক্ষায় ট্রাফিক পুলিশ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এতে সেতুতে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হচ্ছে। নির্ধারিত লেন ও গতি মেনে চলতে নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে কাজ করছে তারা। সেতুতে স্পিডগান দিয়ে গতি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশ বলছে, বর্তমানে ৮০ থেকে ৯০ ভাগ চালক পুরোপুরি নিয়ম মেনে চলছেন। মাওয়া ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ বজলুর রহমান জানান, শৃঙ্খলা রক্ষায় আমাদের সার্বক্ষণিক তৎপরতা থাকছে। বিশৃঙ্খলার প্রবণতা কমে এসেছে।এরপরও আমাদের অভিযান চলছে। গত ২১ এপ্রিল থেকে ২২ জুন পর্যন্ত দুই মাসে নিয়ম অমান্য করায় ২৬৫ জন মোটরসাইকেল চালককে জরিমানা করা হয়েছে। নির্ধারিত লেন অতিক্রম ও অতিরিক্ত গতিতে মোটরসাইকেল চালানোই তাদের জরিমানা করা হয়। তিনি আরও বলেন, বিশৃঙ্খলা এড়াতে চালকদের আরও সতর্ক হতে হবে এবং নিয়ম মানতে হবে। বিশৃঙ্খলার কারণে পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর পরদিনই নিষিদ্ধ করা হয়েছিল মোটরসাইকেলে পারাপার। ১০ মাস বন্ধ থাকার পর শর্তসাপেক্ষে মোটরসাইকেলে পারাপারের জন্য খুলে দেওয়া হয় সেতুর দ্বার।