বাজারের ইজারার নামে শহরে শহরে বাজারে বাজারে চলছে খোল্লাম খোল্লা চাঁদাবাজি। বাজারে ঢুকতে চাঁদা বাহির হতে চাঁদা, স্ট্যান্ডে দাঁড়ালে চাঁদা, যাত্রি তুললে চাঁদা ইত্যাদি নানা চাঁদাবাজিতে সাধারন মানুষের জনজীবন অতীষ্ট করে তুলেছে এক শ্রেনীর চাঁদাবাজরা। দিন-দুপুরে সবার সামনেই লুটে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। কারো কোনো কিছু বলার কোনো ক্ষমতা নাই। কারণ এমপি-মন্ত্রী-পুলিশ-প্রশাসন-সন্ত্রাসি আর প্রভাবশালীদের যোগসাজসে এই চাঁদাবাজি এখন একটি কর্পোরেট কালচারে পরিনত হয়েছে।
অবৈধ জায়গায় ফুটপাতে দোকান বসিয়ে দিয়ে হাপ্তা উসলি, দিন উসলি চলছে প্রশাসনের চোখের সামনেই। রেল লাইনের দুপাশে উপরে অবৈধ দোকানের কোনো অভাব নাই। যেদিকে তাকানো যায়, সেদিকেই অবৈধ দোকানে ঠাঁসাঠাসি। মানুষের হাঁটার জায়গা নাই, বসার জায়গা নাই, নিঃশ্বাস ফেলার জায়গা নাই। এতটুকু খালি জায়গা খালি রাখেনা চাঁদাবাজরা। তারপরেও কেউ কিছুই বলছেনা। কারন, ভাগের টাকা যায় সবার ঘরেই। সরেজমিনে দেখা যায়, কোনো রেট চার্ট বা টিকেট ছাড়াই চাঁদা তোলা হচ্ছে। আর যে টিকেটগুলো দেওয়া হচ্ছে সেগুলো ছাপাখানা থেকে বানিয়ে আনা রিসিট। যার সাথে সরকারি নথি-পত্রের কোন সংযোগ নাই। কোনো নিয়ম-কানুনের বালাই নাই। যার যা খুশি তাই দাবি করে বসছে, নিয়ে নিচ্ছে যাত্রির পকেট থেকে, গাড়ি চলাকের পকেট থেকে। প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হয়না। প্রশাসনের সামনে এ অনিয়ম চলছে। আবার অদৃশ্য অপশক্তির কারণে কেউ ভয়ে জোরালো প্রতিবাদ করতে চান না। সিএনজি স্ট্যান্ড, বাস স্ট্যান্ড, রিকশা স্ট্যান্ড সহ সব জায়গায় চলছে চাঁদাবাজি।
রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চিহ্নিত অস্ত্রবাজ, চাঁদাবাজ, চোর, ছিনতাইকারী, মাদক ব্যবসায়ীর দৌরাত্বে নিম্ম মধ্যবিত্ত, নিম্মবিত্ত মানুষের আবস্থার চিত্র দিনে দিনে করুণ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে জেলা উপজেলা শহরগুলোতে এদের দৌরাত্ব দিনেদিনে বেপোরোয়া হতে চলেছে। এছাড়াও প্রভাবশালীদের মদদে শহরে শহরে চলছে রমরমা অবৈধ মদ, গাঁজা, ইয়াবা, ফেন্সিডিল সহ নানা মাদক ব্যবসা। অবৈধ মাদকের নীল ছোঁয়ায় নষ্ট হতে চলেছে দেশের তরুণ সমাজ।
বিশেষ বিশেষ দিনে বা উপলক্ষে চাঁদাবাজরা আরো বেপোরোয়া হয়ে ওঠে। ঈদ, পূজা সহ বিভিন্ন উৎসবের পূর্বে চাঁদাবাজদের হুমকি-ধামকিতে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে সাধারন খেটে খাওয়া মানুষ। প্রতিবাদ করলেই বন্ধ করে দেওয়া হয় দোকান, কেড়ে নেওয়া হয় গাড়ি। এসব চাঁদাবাজদের ধরতে পুলিশকে মাঝেমধ্যেই মাঠে নামতে দেখা যায়। কিন্তু ফলাফল শুন্য। পুলিশ জানে এলাকায় কারা চাঁদাবাজি করে, কারা মাদক ব্যবসায়ী। পুলিশের কাছে আছে তালিকা। তারপরেও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় সবাই।
সাধারন মানুষকে জিম্মী করে এ ধরনের বাজার ইজারা দিয়ে খোল্লাম খোল্লা চাঁদাবাজির লাইসেন্স দেওয়া কতটা আইন সম্মত তা হয়ত আইন বিশেষজ্ঞরাই ভালো জানবেন। কিন্তু দেশের সাধারন খেটে খাওয়া মানুষের শ্রমের টাকা এভাবে ইজারার নামে লুটে নেওয়া কোনভাবেই সঠিক নয়। প্রয়োজনে ভতুর্কি দিয়ে এই ইজারার নামে চাঁদাবাজি বন্ধ করা উচিত।
কুমিল্লার মুরাদনগরে চাঁদাবাজি ঠেকাতে বৃহত্তর কোম্পানীগঞ্জ বাজারকে নিজস্ব অর্থায়নে ২০ লাখ টাকা ভর্তুকি দিয়ে আগামী এক বছরের জন্য ইজারা মুক্ত করেছেন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক, এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন এফসিএ। গত ১৬ মার্চ বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ বাজারে উন্নয়ন ও পানি নিস্কাশন, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, যানজট নিরসন সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাজারকে ইজারামুক্ত করার ঘোষণা দেন তিনি।
এ সময় তিনি বলেন, ‘কিছু লোক ইজারার নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন উপায়ে বহুদিন ধরে চাঁদাবাজি করে আসছে। ওই সব লোকদের কে চিহ্নিত করতে ২০ লাখ টাকা ভর্তুকি দিয়ে আজ থেকে এই বাজারকে ইজারা মুক্ত করা হলো। যদি ইজারার নামে আপনাদের কাছ থেকে কেউ টাকা নিতে আসে তাকে ধরে পুলিশে খবর দিবেন।’ সভায় তিনি আরো বলেন, ‘আগামী এক বছর আপনাদের কাউকে ইজারার টাকা দিতে হবে না। এই বাজার কে চাঁদাবাজ মুক্ত করতে যদি প্রতি বছর ভর্তুকি দিতে হয় প্রয়োজনে তাই করবো।’ এক সময় রাজনীতি ছিল রাজারা নীতি। রাজারা দেশের গরীব দরীদ্র সাধারণ।