যশোরের শার্শার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধপথে ভারতীয় গরু প্রবেশে কড়াকড়ির কারণে সীমান্তের পশু খাটালগুলো খাঁ খাঁ করছে। অবৈধপথে গরু আনার পর বেনাপোলের পুটখালী, দৌলতপুর ও শার্শা উপজেলার অগ্রভূলোট এবং গোগা এই চারটি পশু খাটালে গরুগুলো রাখা হতো। এবার কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে ভারতীয় গরু না এলেও খামারিদের পশুতে জমজমাট হয়ে উঠেছে দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ যশোরের শার্শার বাগআঁচড়া ‘সাতমাইল পশুহাট’। দেশীয় গরু ছাগলে জমজমাট এসব হাট। খামারিরা বলছেন, ভারতীয় গরু না আসলে এ বছর তারা ভালো দাম পাবেন। তবে ঈদকে ঘিরে গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। দাম কিছুটা বেশি হলেও দেশি গরু কিনতে পেরে খুশি ক্রেতারা। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় তদারকি থাকায় এবার পুষ্টিমান সম্পন্ন পশু পাওয়া যাচ্ছে বলে দাবি উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গরু ব্যবসার সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেনাপোল থেকে শার্শার রুদ্রপুর পর্যন্ত সীমান্তের ইছামতি নদীর অংশটুকু বাদে বেশিরভাগ স্থানজুড়ে কাঁটাতারের বেড়া। পাশাপাশি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে রয়েছে বিজিবি-বিএসএফের যৌথ নজরদারি। বিজিবি‘র পক্ষ থেকে সীমান্তে মতবিনিময় সভা করে ভারতীয় গরু না আনার আহবান জানানো হয়েছে। ফলে এই সীমান্ত দিয়ে গরু নিয়ে আসা এখন কঠিন ব্যাপার।
সাতমাইল গরুর হাটে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন জাতের গরুর ব্যাপক সমাগম ঘটেছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তায় হাট ইজারাদার তাদের নিজস্ব লোকজন প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন। এবারের ঈদের হাটগুলোতে ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা থাকলেও বড় গরুর দাম ভালো নেই বলে জানিয়েছেন খামারিরা।
গত শনিবার (২৪ জুন) সকাল থেকে শুরু হয়েছে কোরবানির পশু কেনাবেচা। চলবে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত। দেশি, শাহীওয়াল, ফ্রিজিয়ানসহ বিভিন্ন জাতের গরুর পাশাপাশি ছাগলও বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহে সাধারণত দুইদিন শনিবার ও মঙ্গলবার এখানে হাট বসলে এবার ঈদের আগের দিন পর্যন্ত হাট চলবে বলে জানিয়েছেন ইজারাদার।
সাতমাইল পশু হাট থেকে গরু কিনে নিয়ে যান ঢাকা, রংপুর, চট্রগ্রাম, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা।
বেনাপোল পোর্ট থানার বড় আঁচড়া গ্রামের খামারি আবু তাহের ভারত বলেন, গো খাদ্যের দাম বেশি। কিন্তু ক্রেতারা যে দাম বলছেন, তাতে করে প্রতি গরুতে দেখা যাচ্ছে ২০ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।
গরু ব্যবসায়ী সাহেব আলী জানান, উপজেলার এ হাটে এবার বিভিন্ন এলাকা থেকে বেশি পশু আসছে। হাটে গরুর আমদানিও যথেষ্ট। এ হাটে গত কয়েক হাটের তুলনায় বিক্রিও অনেক বেশি। মাঝারি সাইজের গরুর চাহিদা বেশি।
পশু বিক্রি না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে আরেক খামারি বলেন, হাটে হাজার হাজার কোরবানির পশু রয়েছে। হাজার হাজার ক্রেতাও রয়েছে। কিন্তু তারপরও পশু বিক্রি হচ্ছে না।
একাধিক ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত সময়ের চেয়ে এই বছর গরুর দাম বেশি। তবে বিক্রেতাদের দাবি গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় পশুপালনে খরচ বেড়েছে। ফলে হাটে পশুর যে দাম উঠেছে তাতে লোকসানের সংখ্যা দেখছেন তারা।
সাতমাইল গরু হাট ইজারাদার আবু তালেব হতাশা প্রকাশ করে বলেন, হাটের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ক্রেতা ও বিক্রেতারা যাতে প্রতারিত না হন, সে জন্য মাইকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ঈদের আগে আর দুটি হাট আছে। বিক্রি না বাড়লে বড় ধরনের লোকসানের শিকার হতে হবে বলে তিনি জানান।
শার্শা উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিনয় কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, এ বছর উপজেলায় কোরবানি জন্য এ পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী ৯ হাজার ৮৭৩ টি পশু প্রস্তুুত করা হয়েছে। হিসাব চলমান থাকায় সংখ্যা আরো বাড়বে বলে জানা যায়। প্রস্তুুতকৃত কোরবানির পশুর মধ্যে ষাঁড়, বলদ ও গাভি মিলে ৩ হাজার ৩৯৬ টি, মহিষ ৩ টা, ছাগল ৬ হাজার ৩৫০ টি এবং ভেড়া রয়েছে ১২৪টি। এর মধ্যে ১২ জন বাণিজ্যিক খামারির খামারে প্রস্তুুত করা হয়েছে এক হাজার গরু। বাকি বিভিন্ন ধরনের পশু গুলো পারিবারিক ভাবে ২-১০ টি পর্যন্ত প্রান্তিক লালন-পালনকারিরা প্রস্তুুত করেছেন। চলতি বছর উপজেলায় কোরবানি পশুর চাহিদা রয়েছে ৯ হাজার ১২০টি। চাহিদার থেকে প্রস্তুুতকৃত ৭৫৩টি কোরবানির পশু উদ্বৃত্ত হিসাবে থাকছে। যা বাইরের জেলাতে সরবরাহ করা যাবে।
সাতমাইল ও নাভারণ পশু হাটে কোরবানির পশু বেচা কেনার সময়ে মেডিকেল টিম কাজ করছে। কোন পশু রোগাক্রান্ত হলে তা শনাক্তে কাজ করছে মেডিকেল টিম। একই সাথে হাটে থাকবে ক্যাশলেস ব্যবস্থা। ক্রেতারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পশু কিনতে পারবেন বলে তিনি জানান।
পশু হাটের সাধারন সম্পাদক বাগআঁচড়া ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল খালেক জানান, বাগআঁচড়া সাতমাইল পশুহাটটি বর্তমানে পকেট মার, দালাল ও ছিনতাইকারীমুক্ত। ভারতীয় গরু না আসায় এ বছর দেশীয় খামারীরা অনেকটা লাভের মুখ দেখবে। আমাদের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক বাজার মনিটরিং অব্যাহত আছে।