আসন্ন ঈদ-উল আজহায় বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের ঘরমুখী মানুষের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রীয় সড়ক, নৌ ও আকাশ পরিবহন সংস্থাগুলোর নিস্ক্রিয়তার কারণে বেসরকারি পরিবহন বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর এবার পোয়াবারো। যেকারণে চরম ভোগান্তিতে পরতে যাচ্ছেন ঘরমুখী মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক ক্ষেত্রেই বেসরকারি পরিবহন মালিকদের খামখেয়ালীর কাছে জিম্মি হয়ে পরছে ঘরমুখী মানুষ। বিগত ঈদ-উল ফিতরের আগে রাষ্ট্রীয় নৌ-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান বিআইডব্লিউটিসি মাত্র দুইদিন ঢাকার সাথে বরিশাল ও বাগেরহাটের সন্যাশী হয়ে পিরোজপুরের বড় মাছুয়া পর্যন্ত স্টিমার সার্ভিস পরিচালনা করলেও ঈদ-উল আজহায় সম্পূর্ণ হাত গুটিয়ে বসে আছে। রাষ্ট্রীয় আকাশ পরিবহন সংস্থা-বিমান একইভাবে ঈদের আগে বিশেষ ফ্লাইটতো দূরের কথা, নিয়মিত ফ্লাইটেও যাত্রী পরিবহন করছে না। ফলে বেসরকারি ‘ইউএস বাংলা এয়ার’ দেশের স্বল্পতম বরিশাল সেক্টরের আকাশ পথে সাড়ে ১১ হাজার টাকায়ও টিকেট বিক্রি করছে। যা ঢাকা-কোলাকাতা রুটের ভাড়ার প্রায় সমান। অথচ রোববার নিয়মিত ফ্লাইটের পর বৃহস্পতিবারে ঈদের আগে আর কোন ফ্লাইট পরিচালনা করছে না বিমান। এমনকি রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি’ও দেশের সবচেয়ে লাভজনক বরিশাল বাস ডিপো থেকে কোন রুটেই বিশেষ বাস সার্ভিস পরিচালনা করছে না।
সূত্রমতে, পদ্মা সেতু চালু হবার একবছর পরেও বরিশাল অঞ্চলের নৌ-পথে যাত্রীদের ফিরিয়ে আনতে পারেনি সরকারি ও বেসরকারি নৌ-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে শুধু বরিশাল-ঢাকা নৌপথে রুট পারমিটধারী প্রায় ২৫টি বেসরকারি যাত্রীবাহী নৌযানের এখন ১০/১২টির বেশী যাত্রী পরিবহনে নেই। আগে স্বাভাবিক সময়ে যেখানে বরিশাল নৌ বন্দর থেকেই প্রতিদিন ৭/৮টি নৌযান যাত্রী বোঝাই করে ঢাকায় যেতো, সেখানে এখন গড়ে দুইটির বেশী নৌযান চলছে না। তবে এর পেছনেও নৌযান মালিকদের সিন্ডিকেট বাণিজ্য রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সূত্রের দাবি, সীমিত নৌযানে বেশী যাত্রী বহনে অধিক মুনাফার প্রবনতায় যাত্রী হয়রানী বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে নৌপথের ওপর আরো বিরক্ত হয়ে স্বল্প সময়ে সড়ক পথে ঢাকা যাবার প্রবনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে সাধারণ মানুষের মাঝে।
এমনকি আসন্ন ঈদ-উল আজহায় ঘরমুখী জন¯্রােত সামাল দিতে ঢাকা-বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য নৌপথে এবার পর্যাপ্ত নৌযান থাকছে না। ঈদের দুইদিন আগে সর্বোচ্চ সাতটি করে বেসরকারি নৌযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে বেসরকারি নৌযান মালিক সমিতি। ফলে ডেক থেকে শুরু করে প্রথম শ্রেণী ও ভিআইপি শ্রেণীর টিকেট ইতোমধ্যে সোনার হরিন হয়ে উঠেছে।
আর রাষ্ট্রীয় নৌ বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান বিআইডিব্লিউটিসি’র চারটি প্যাডেল হুইল ও তিনটি স্ক্রু-হুইল নৌযান ঢাকায় অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থাতেই পরে রয়েছে। এরমধ্যে একটি প্যাডেল ও একটি স্ক্রু-হুইল যাত্রীবাহী নৌযান বিনা দরপত্রে বেসরকারি দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছে দীর্ঘ মেয়াদে লীজ প্রদান করা হলেও তা যাত্রী পরিবহন করছে না।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আসন্ন ঈদ-উল আজহার আগে ও পরে সংস্থাটি রাজধানী থেকে বরিশাল বিভাগীয় সদরসহ দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণস্থানেও যাত্রী পরিবহনে সম্পূর্ণ উদাসীন। ফলে বাধ্য হয়েই মানুষ সড়কপথমুখী হলেও সেখানে রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থাটির সীমাহীন উদাসীনতার অভিযোগ রয়েছে। সংস্থাটির বরিশাল বাস ডিপোতে বর্তমানে ৭০টি নতুন ও পুরনো বাসের মধ্যে গড়ে চালু থাকছে ৪০টি। এরমধ্যে এসি ও ননএসি মিলিয়ে নতুন গাড়ীর সংখ্যা মাত্র ২০টির মতো। এসব বাস নিয়মিত রুটে চলাচল করতেই হিমশিম খাচ্ছ। ফলে ঈদ স্পেশাল বাস সার্ভিস পরিচালন শুধু দুরূহই নয়, তা রীতিমত অসম্ভব বলেও জানিয়েছে বিআরটিসি’র বরিশাল ডিপোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। রাষ্ট্রীয় সড়ক, নৌ ও আকাশ পরিবহন সংস্থাগুলোর বরিশালের কর্মরত দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা এসব বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি।