ড্রেজার গিলে খাচ্ছে সরাইলের ফসলি জমি। কাটছে ফসলি জমি ভরাট করছে পুকুর। বর্ষার কারণে ধর্মতীর্থ এলাকার আকাশি হাওরের ফসলি জমির মাটি কাটা আপাতত বন্ধ। ক্ষুধার্ত মালিক ও ড্রেজারের নজর এখন ওজানের দিকে। উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নের পর বর্তমানে সরাইল সদর, চুন্টা ও নোয়াগাঁও ইউনিয়নের ফসলি জমি একের পর এক গিলে খাচ্ছে এখন ড্রেজার। আইন না থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন সেক্টরকে কৌশলে ম্যানেজ করেই দাপুটে এগিয়ে যাচ্ছে ড্রেজার। ফলে প্রতিদিনই কমছে ফসলি জমি। মোটা অংকের মাইনা কামাই করছে এক শ্রেণির স্থানীয় প্রভাবশালীরা। জমি ও ফসল হারানোর আতঙ্কে চোখের পানি ছাড়ছেন নিরীহ কৃষকরা। কারণ প্রভাবশালীদের শক্তির কাছে পরাজিত ওরা।
সরজমিন অনুসন্ধান ও ভুক্তভোগি কৃষকদের সাথে কথা বলে যায়, সরাইলে গত দেড়/দুই বছর ধরে চলছে ড্রেজারের দাপুট। এক শ্রেণির স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজন এই ব্যবসায় জড়িত। নিরীহ অসহায় কৃষকদের ফুঁসলিয়ে ফসলি জমির মাটি ক্রয় করে। ৩ ফুট গভীরের কথা মুখে বলে। কাটেন ৪-৫ ফুট। ড্রেজার দিয়ে মাটি কেটে ২-৩-৪ কিলোমিটার দূরে পুকুর ভরাটের কাজ চলছে দেদারছে। আবার কখনো যাচ্ছে ইটভাটায়। প্রতিফুট মাটির মূল্য ১০/১২/১৫ টাকা। অথচ দুটো কাজই বিধিবহির্র্ভূত। যে জমির মাটি কাটছে তার চার পাশের জমিগুলো পড়ছে ভাংগনের হুমকিতে। কখনো কৌশলে। কখনো বল প্রয়োগ করে অনেক অসহায় কৃষককে মাটি বিক্রিতে বাধ্য করা হচ্ছে। বাঁধা দিলে কৃষকদের দেয়া হয় হুমকি ধমকি। দেখানো হয় নানা ধরণের ভয়ভীতি। মুখ খোলার সাহস পায় না কৃষকরা। তথ্য দিতে গিয়ে জনৈক কৃষক চোখের জল ছেড়ে দিয়ে বলেন, আমাদেরকে বাঁচাবে কে? চুন্টা ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের খোকন মিয়া বড়াইল গ্রামের পূর্ব পাশের ফসলি জমি কেটে ক্ষতি করেছেন অনেক কৃষকের। কৌশলে মিনিমাইজও করেছেন। এখনো ড্রেজারে মাটি কাটছেন তিনি। সেখানে ভাঙ্গনের হুমকিতে আছেন হাজী রহমত আলী, ওবায়েদ উল্লাহ ও এড. আবদুল হামিদসহ অনেকেই। বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা সভায় আলোচনাও হয়েছে। তাপরও চলছে। সরাইল সদরের উচালিয়াপাড়া গ্রামের দক্ষিণ পূর্ব দিকের ফসলি মাঠে (মৈনার) ড্রেজারে চলছে জমি কাটা। কাজ করছেন ময়মনসিংহের শরীফুল, রমজান, জসিম ও লিটন নামের চার শ্রমিক। শ্রমিক শরীফুল জানায়, দুটি জমি ৬০ শতাংশ। মাটি বিক্রি করেছেন সেলিম মিয়া। প্রতিফুটের মূল্য ১০ টাকা। ৪০ হাজার ফুট মাটি দেওয়ার চুক্তি হয়েছে। ২/৩ দিন ধরে কাটছি। আরো একমাস কাটতে হবে। এই জমি দুটি পুকুর হবে। একই ভাবে কালীকচ্ছ, নোয়াগাঁও ও শাহজাদাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় কাটা ও ভরাট হচ্ছে ফসলি জমি। ইসলামাবাদ গ্রামের আফতাব মিয়া দীর্ঘদিন ধরে ড্রেজারে মাটি কাটার ব্যবসা করছেন। চরম বেকায়দায় আছেন নিরীহ কৃষকরা। উচালিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা প্রবাসী ব্যবসায়ি এম কামাল বলেন, আমার জমির সীমানায় ড্রেজার দিয়ে মাটি কেটে গভীর করা হচ্ছে। বৃষ্টি হলেই আমার জমি ভেঙ্গে পাশের জমিতে চলে যাবে। এমন অরাজকতা চলতে পারে না। ড্রেজার ও জমির মালিকদের বক্তব্য, সংশ্লিষ্ট সকলকে ম্যানেজ করেই ব্যবসা করছি। মো. সেলিম মিয়া জমি থেকে মাটি কাটার কথা স্বীকার করে বলেন, ড্রেজার আমার। মাটি মুদাচ্ছিরের। নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইউপি চেয়ারম্যান কারো কাছ থেকে অনুমতি নেয়নি। পরে মালিক ভরাট করে ফেলবেন। চুন্টার (রসুলপুর গ্রামের) ড্রেজার মালিক মো. খোকন মিয়া ১০-১২ দিন ফসলি জমির মাটি কাটার কথা স্বীকার করেন। অনুমতির কথা জিজ্ঞেস করতেই তিনি থেমে যান। কিছুক্ষণ পর বলেন, কোথাও থেকে অনুমতি নেয়নি। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীন বলেন, ফসলি জমির টপসয়েল কাটা সম্পূর্ণ আইন পরিপন্থী। আমি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তার মাধ্যমে মাটি কাটা বন্ধের ব্যবস্থা নিচ্ছি। প্রয়োজনে আবারও খুঁজখবর নিয়ে দেখছি।