রাত পোয়ালে কোরবানি ঈদ। তাই খুলনার পাইকগাছায় শেষ মূহুর্তে ছন্দে-ছন্দে হাতুড়ির টুং-টাং শব্দে কামারশালা মুখরিত হয়ে উঠেছে। একই সাথে চললে হাঁপর, পুড়ছে কয়লা, জ¦লছে লোহা। কর্মব্যস্ত কামার শিল্পীরা। সারাদিন তপ্ত লোহা ও ইস্পাত গলিয়ে চলছে, দাঁ, চাপাতি, বটি, ছুরি তৈরি করছে। ঈদের ২ সপ্তাহ আগে থেকে কাঁকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে তাদের মাংস প্রস্তুতের সরঞ্জাম তৈরী। মূল কারিগরের সাথে একজন ভারী হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছেন আগুনরাঙ্গা লোহার দন্ড। কেউ দা ও ছুরিতে দিচ্ছেন শান। ম্যাশিনের সাহায্যে কেউবা হাঁপর টেনে বাতাস দিচ্ছেন। দিন-রাত সমান তালে লোহার টুং-টাং শব্দ আর হাফরের ফুঁসফাঁস শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে উপজেলার প্রতিটি কামারশালা। হারিয়ে যেতে বসা বাংলার প্রাচীন কামারশিল্প ঈদ এলে যেন ফিরে পায় প্রাণ। আর রাত পোয়ালে ঈদ-উল আযহা। উপজেলা পৌর সদর, নতুন বাজার, গদাইপুর, আগড়ঘাটা, গোলাবাটি, কপিলমুনি, বাঁকা, চাঁদখালী, কাটিপাড়া, বোয়ালিয়ার মোড়সহ বিভিন্ন হাট-বাজার এবং কামারশালায় কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পশু জবাইয়ের ছোরা, চাপাতি, চাকু, দা, বটি, কুড়াল সহ বিভিন্ন সরজ্ঞাম তৈরি করেছে। সারা বছর কাজ কম থাকলেও কোরবানির ঈদের সময় কামারশালা মুখরিত হয়ে ওঠে। গোলাবাটি মোড়ে কামারশালা রয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ সময় দোকানে পুরাতন ও নতুন ধারালো অস্ত্র বানানো ও মেরামত করার ভীড় শুরু হয়। ঈদের আগের দিন র্পযন্ত এই ব্যস্ততা থাকে। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে কামার শিল্পে। বৈদ্যুতিক সান দিয়ে বিভিন্ন সরঞ্জাম সান দেওয়া হয় ও হাফর বা জাঁতা দিয়ে বাতাস দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে মোটর। উপজেলার গদাইপুর গ্রামের সন্তোস কর্মকার, রজ্ঞন কর্মকার ও আগড়ঘাটার বিশ্ব কর্মকার জানান, কোরবানি ঈদে তারা প্রতিবছর দাঁ, ছুরি, চাপাতিসহ কোরবানি বিভিন্ন উপকরণ তৈরি ও মেরামত করেন। বোয়ালিয়া মোড়ে অবস্থিত কামারশালার শিল্পী বিমল কর্মকার ও সুপম কর্মকার বলেন, লোহা ও কয়লার দাম বেড়ে গেছে। সাধারণ লোহা ৫০ টাকা থেকে ৭০ টাকা ও গাড়ীর পাতি ৮০ টাকা দরে প্রতি কেজি ক্রয় করতে হয়। পশু জবাই করার ছোট-বড় বিভিন্ন সরজ্ঞাম সাইজের উপর দাম নির্ভর করে। গদাইপুরের সন্তোষ কর্মকার বলেন, অর্ডার দিয়ে তৈরী করা নতুন চাপাতি তৈরীর মুজুরী ৫শ টাকা থেকে ৭শ টাকা, জবাই করা ছোরা ৩শ টাকা। আর তৈরী করা ছোট চাপাতি ৫শত টাকা, বড় চাপাতি ৭ শত থেকে ৮ শত, বড় ছোরা ৩ শত থেকে সাড়ে ৩ শতটাকা, চাকু ৫০ টাকা থেকে দেড় শত টাকা, বটি আড়াই শত থেকে ৩ শত টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। হরি গোপাল কর্মকার জানান, বর্তমান দ্রব্যমূল্য বেশী হলেও সেই অনুযায়ী দাম পাই না। ফলে সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হয়। সারা বছর তেমন কাজ না থাকায় অনেকেই বাধ্য হয়ে পৈতৃক এই পেশা পরিবর্তন করছে বলে জানান। উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, দাঁ, ছুরি, চাপাতি, চাকু ও বটির বেচাকেনা বেড়েছে। কপিলমুনি বাজারে পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম কিনতে আসা কয়েকজন ক্রেতা জানান, অন্য বছরের চেয়ে এবার ছুরি, চাকু, বটির দাম একটু বেশি। কোরবানি ঈদের একদিন বাকি। তাই আগেই পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম কেনার জন্য এসেছি। লোহা ও কয়লার দাম অনেক বেড়েছে। সে তুলনায় কামার শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়েনি। কামার শিল্পীদের আশা, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার।