রাজশাহীর তানোর উপজেলার কলমা ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপির) ৮০ বস্তা ভিজিএফ চাল চুরির ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন তানোর সহকারী কমিশনার (ভুমি) আবিদা সিফাত। গত মঙ্গলবার দুপুরে তিনি সরেজমিন কলমা ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে তিনি সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেন। এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তদন্ত শেষ হয়নি। পুনরায় তদন্ত করতে হবে বলেও জানান তিনি।
কলমা ইউপি সচিব মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, গত সোমবার পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অসহায় দরিদ্রদের জন্য ১০ কেজি করে ভিজিএফ চাল বিতরন করা। তিনি বলেন, চাল বিতরন শেষে সন্ধ্যার দিকে বাদল নামের এক ধান ব্যবসায়ীর কাছে খালী বস্তা বিক্রি করা হয়।
দুই ভ্যানে অন্যের ধান ও তার উপরে বস্তা ছিল এটাকেই চাল বলে আনোয়ারা নামের এক সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার মিথ্যা ভূয়া তথ্য গুজব ছড়ান। এর প্রক্ষিতে বিভিন্ন অনলাইনে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের জের ধরেই তানোর সহকারী কমিশনার (ভুমি) আবিদা সিফাত মঙ্গরবার ঘটনার বিষয়ে তদন্তে আসেন।
ইউপি সচিব মোস্তাফিজুর রহমান আরো বলেন, ওই মহিলা মেম্বারের নিজস্ব এক মহিলার মাধ্যমে প্রায় ২৫ জনের চাল একাই নিচ্ছিলেন। এ সময় আমি ও চেয়ারম্যান বাধা দেওয়ার কারনেই এমন মিথ্যা বানোয়াট ভিত্তিহীন খবর ছড়িয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার সহকারি কমিশনার তদন্ত করে কোন প্রমান পায়নি। তদন্তের সময় প্যানেল চেয়ারম্যান মেম্বার জিয়াউর, মেম্বার কালাম, নাজিম ও ওয়েজুল চুরির ঘটনা মিথ্যা বলে স্বাক্ষর করেছেন। শুধু মাত্র ১৮ জন ব্যক্তি চাল নিতে আসেনি, তাদের চাল পরিষদে জমা আছে, সেটার ছবি নিয়ে গেছেন সহকারী কমিশনার ভূমি।
তিনি আরো বলেন, ৫০ কেজির ৮০ বস্তা চাল চুরি করলে বিতরন করলাম কি ভাবে। তাহলে ৪০০ জন ব্যক্তি চাল পেতনা। এসব খবর প্রকাশের আগে তথ্য যাচাই বাছাই করতে হয়।
কলমা ইউপিতে ভিজিএফ চাল পেয়েছেন ১ হাজার ৬১০ জন উপকার ভোগী, তার মধ্যে ১ হাজার ৫৯২ জনের মধ্যে চাল বিতরন হয়েছে, বাকি আছে ১৮ জন।
কলমা ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার ও প্যানেল চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন, আমার তালিকায় প্রায় ৫৫ জন ছিল, তারা সবাই চাল পেয়েছেন। যদি ৮০ বস্তা চাল চুরি করে বিক্রি হত তাহলে কিভাবে চাল পেল এবং তদন্তে চুরির ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমান হয়েছে, সেই প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেছি।
৯ নম্বর ওয়ার্ড কালাম জানান, ৮০ বস্তা চাল চুরির প্রশ্নই আসেনা। মঙ্গলবারে এসিল্যান্ড কোন প্রমান পায়নি। আমার তালিকায় ১২০ জন ছিল তার মধ্যে ১১৮ জন পেয়েছে, ২ জন বাহিরে আছে, তাদের চাল পরিষদে জমা আছে।
৪.৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ফাতেমা জানান, আমার তালিকায় যাদের নাম ছিল সবাই চাল পেয়েছেন। ৮০ বস্তা চাল চুরি হলে তো দিতে পারত না।
আরো বেশকিছু মেম্বারেরা জানান, সবার তালিকা অনুযায়ী চাল দেওয়া হয়েছে।
৮০ বস্তা চাল চুরি করে বিক্রি করলে ৪০০জন উপকার ভোগীরা চেয়ারম্যান, সচিব ও মেম্বারদের বাড়িঘর ভাংচুর করে ফেলত। এটা সচিব চেয়ারম্যানের মান ক্ষুন্ন করতে প্রতিপক্ষরা কাজ করে আসছে দীর্ঘ সময় ধরে। তারই ধারাবাহিকতা এটিও।
কলমা ইউপির চেয়ারম্যান খাদেমুন নবী বাবু চৌধূরী বলেন, ৮০ বস্তা চাল চুরি করে বিক্রি করলে এতোক্ষন সাসপেন্ড ও জেলে যেতে হত। আমার কি জমিজমা নেই যে গরীবের চাল চুরি করতে হবে।
সচিব ৩২২ টি বস্তা ভ্যানে করে বিক্রি করেছে সেটাকে প্রতিপক্ষরা অপপ্রচার করেছে। এদুনিয়াতে বিচার না হলেও মহান আল্লাহ সব দেখছেন, মহান রব এসবের বিচার একদিন করবেন।
আইসিটি ও ট্যাগ অফিসার জাকারিয়ার মোবাইলেও একাধিকবার ফোন দিলেও তিনিও রিসিভ করেননি।
তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার ভূমি আবিদা সিফাতকে মোবাইলে ফোন দেওয়া হলে বিরক্তি প্রকাশ করে তিনি বলেন, অপডেটে ফোন দিয়ে আপনারা প্রচন্ড বিরক্ত করেন, তদন্ত শেষ হয়নি পুনরায় তদন্ত করতে হবে বলেও জানান তিনি।