বিভাগের নিয়ন্ত্রণহীন ডায়রিয়ায় গত ছয়মাসে সরকারি হাসপাতালগুলোতেই চিকিৎসা নিয়েছে প্রায় ৪৪ হাজার রোগী। এর বাহিরে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসহ বিভিন্ন চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বারে আরও অসংখ্য রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের মতো চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসেও বরিশালের কোথাও ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি। তবে প্রতিদিনই ডায়রিয়া আক্রন্তের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত দুইমাসেই বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার শুধু সরকারি হাসপাতালগুলোতেই প্রায় ২০ হাজার ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে গত মে মাসে ১২ হাজার ৪৬৪ জন রোগীরস্থলে জুন মাসে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ৭ হাজার ১৯৮ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। সে হিসেবে মে মাসের তুলনায় জুন মাসের সংখ্যাটা প্রায় পাঁচ হাজার কমে আসলেও চিকিৎসকগণ পরিস্থিতি নিবিরভাবে পর্যবেক্ষণ করে সবাইকে স্বাস্থ্য সচেতন থাকার আহবান করেছেন।
সূত্রমতে, গতবছর (২০২২ সালে) মার্চ থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া আক্রান্ত প্রায় ৭২ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। ২০২১ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভাগের সরকারি চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৭০ হাজারেরও বেশী রোগী চিকিৎসা গ্রহন করেছেন। সে সময়ে মৃত্যু হয়েছিল ১২ জনের। তবে চলতি মাসের প্রথম ছয় মাসেই প্রায় ৪৪ হাজার রোগী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহনের ফলে এবার দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যাটা আগের দুই বছরের তুলনায় অনেকটাই বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ।
সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ছয় মাসে ডায়রিয়া আক্রান্তদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বরিশাল বিভাগের একমাত্র দ্বীপজেলা ভোলা। ওই জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রায় ১১ হাজার ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা গ্রহন করেছেন। পিরোজপুর জেলায় প্রায় নয় হাজার। বরিশালে প্রায় আট হাজার, পটুয়াখালীতে প্রায় সাড়ে সাত হাজার, বরগুনায় প্রায় পাঁচ হাজার এবং ঝালকাঠি জেলায় প্রায় চার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে চার হাজার ৩৪৫ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহন করেছেন। ফেব্রুয়ারি মাসে সংখ্যাটা চার হাজার ৬২০ জনে উন্নীত হয় কিন্তু মার্চে বিভাগের ছয় জেলায় ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা এক লাফে বেড়ে ছয় হাজার ৭০৪ জনে পৌঁছে যায়। এপ্রিল মাসে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে। সরকারি হাসপাতালসমূহে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা নয় হাজার ৬৮২ জনে উন্নীত হয়। মে মাসে চলতি বছরের সর্বাধিক ১২ হাজার ৪৬৪ জন ডায়রিয়া রোগী বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা গ্রহন করে। পরে জুন মাসে সংখ্যাটা সাত হাজার ১৯৮ জনে হ্রাস পেলেও তা চলতি বছরের তৃতীয় সর্বোচ্চ।
এ পরিসংখ্যানে বিভাগের ডায়রিয়া পরিস্থিতির জন্য এখনো কোন সুখকর বার্তা দিচ্ছে না বলেই শঙ্কা প্রকাশ করে স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল মহলসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ সবাইকে বিশুদ্ধ পানি পান করার পাশাপাশি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন খাবার গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। একইসাথে পথ খাবার গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন করারও পরামর্শ দিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বরিশাল নগরীসহ দক্ষিণাঞ্চলের পথে পথে নানাধরনের মুখরোচক খাবারের রমরমা ব্যবসা চলছে। যা মোটেও স্বাস্থ্য সম্মত নয় বলে জানিয়ে চিকিৎসকগণ এসব খাবার শুধু ডায়রিয়া নয়, সবধরনের পেটের পীড়ার অন্যতম কারণ বলেও মনে করছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা. হুমায়ুন শাহিন খান বলেন, গত কয়েকটি বছর করেনার পরে ডায়রিয়া ও ডেঙ্গু নিয়ে বিভাগের সবচিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরন্তর লড়াই করে চলেছেন। পানিবাহিত এ রোগ প্রতিরোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকার কথা জানিয়ে ডায়রিয়া চিকিৎসায় বরিশাল বিভাগে ৪১০টি মেডিকেল টিম কাজ করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। স্বাস্থ্য পরিচালক সকলকে খাবার গ্রহনে অধিকতর স্বাস্থ্য সচেতন হবার পরামর্শ দিয়ে বলেন, চিকিৎসকের কিছু ঘাটতি থাকলেও ডায়রিয়া প্রতিরোধে এ অঞ্চলের সবগুলো সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ও কর্মীরা নিরন্তর কাজ করছেন। এমনকি ডায়রিয়া চিকিৎসায় আইভি স্যালাইনসহ কোন চিকিৎসা সামগ্রীর অভাব নেই দাবি করে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক বলেন, বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে এক হাজার সিসি’র প্রায় ৪৮ হাজার ব্যাগ এবং পাঁচশ’ সিসি’র প্রায় ২৬ হাজার ব্যাগ আইভি স্যালাইন মজুত রয়েছে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সব এ্যান্টিবায়োটিক ক্যাপসুলসহ ওড়াল সাসপেন্সনেরও কোন সংকট নেই।