শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে মুক্তিযোদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত
ঐতিহাসিক কাটাখালী ব্রীজ এলাকায় শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল আহসান
পার্ক উদ্বোধন করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে এ পার্কের উদ্বোধন করেন
প্রধান অতিথি শেরপুরের জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার।
এসময় ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক আল মাসুদের
সঞ্চালনায় আলোচনা অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডিসি পতি
প্রকৌশলী মোঃ নাহিদ নেওয়াজ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার নূরুল
ইসলাম হীরু, সদর উপজেলার সাবেক মু্ক্িতযোদ্ধা কমান্ডার এড. মুখলেছুর
রহমান আকন্দ, ঝিনাইগাতী উপজেলার সাবেক ডেপুটি কমান্ডার শামছুল হক,
সাংবাদিক দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান অধ্যপক শিবশংর
কারুয়া ও শহীদ নাজমুল আহসানের বোন রুজিনা তাসনিম।
উল্লেখ্য যে, ১৯৭১ সালের ৫ জুলাই রাতে ‘অপারেশন কাটাখালি' পরিচালনা করে
সফলভাবে ব্রীজটি ধ্বংস করে ফেলার পথে রাত শেষ হয়ে যাওয়ায় পার্শ্ববর্তী
রাঙ্গামাটিয়া গ্রামে আশ্রয় নেন বীর মুক্তিযোদ্ধাগন। ওই গ্রামের জালাল
মিস্ত্রী পাক বাহিনীর স্থানীয় হেড কোয়ার্টার আহাম্মদনগর ক্যাম্পে
মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের খবরটি পৌঁছে দেয়। সংবাদ পেয়ে তিনদিক থেকে
গ্রামটিকে ঘিরে ফেলে পাক সেনারা। শরু হয় প্রচণ্ড যুদ্ধ। এখানেই সম্মুখ
সমরে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কৃতী শিক্ষার্থী অপারেশন কমান্ডার
নাজমূল আহসান এবং তাঁর পরিবারের অপর দুই বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেন
ও আলী হোসেনসহ শহীদ হন ১২ জন। এরপর পাক বাহিনী রাঙ্গামাটি গ্রামে হানা
দেয়। খুঁজে খুঁজেঁ বের করে ৬০/৭০ জন গ্রামবাসীকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ
ফায়ার করলে ঘটনাস্থলেই ৯ জন শহীদ হন। এ ছাড়া গ্রামের বেশ কয়েকজন নারীর ওপর
পাশবিক নির্যাতন চালায় পাক হানাদার বাহিনী।
স্থানীয়দের দাবির মুখে ২০১৭ সালে পুরোনো সেতুটিকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়
জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যেই সেতুটির সংস্কার কাজ সম্পন্ন করেছেন শেরপুর সড়ক
বিভাগ। সেইসাথে শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণে নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন
স্মৃতিসৌধ। পাশাপাশি কাটাখালি ব্রিজ অঙ্গনের এই স্বাধীনতা উদ্যানে
মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর প্রতিষ্ঠা ও অন্যান্য সহযোগী আরও স্থাপনা নির্মাণের
পরিকল্পনা রয়েছে।
জানা যায়, শেরপুর-ঝিনাইগাতী- নালিতাবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কে কাটাখালী
ব্রিজটি পারি দিয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলার আহাম্মদ নগরে ১১ নং সেক্টরের
বিপরীতে পাক আর্মির হেডকোয়ার্টারে যেতে হতো। এছাড়াও কোয়ারিরোড,
রাংটিয়া পাতার মোর, নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাও ও নালিতাবাড়ী এবং
ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার অনেকগুলো ক্যাম্পের সাথে যোগাযোগ ও
সরবরাহ ব্যবস্থার একমাত্র পথ ছিল এটি। কাটাখালী ব্রিজটি ধ্বংস করতে
মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি অভিযান ব্যর্থ হয়। অবশেষে ১৯৭১ সালের ৫ জুলাই
রাতে পরিকল্পনা অনুযায়ী কোম্পানি কমান্ডার নাজমূলের নেতৃত্বে
মুক্তিযোদ্ধারা ডিনামাইট ফিট করে কাটাখালি ব্রিজটি উড়িয়ে দিতে সক্ষম হন।
এর ফলে ১১ নং সেক্টরের বিপরীতে পাক আর্মির হেডকোয়ার্টার আহাম্মদনগর
ক্যাম্প সহ ভারতের মেঘালয় সীমান্ত এলাকায় অনেকগুলো ক্যাম্পের সাথে পাক
আর্মির যোগাযোগ ও সরবরাহ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে
উল্লেখযোগ্য এলাকার যুদ্ধ পরিস্থিতি বদলে যায়।
স্বাধীনতা অর্জনের পর শহীদ নাজমুলের নামে ময়মনসিংহ কৃষি বিদ্যালয়ে একটি
হল, নালিতাবাড়ীতে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের
স্বীকৃতি হিসেবে শহীদ নাজমুলকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়েছে। এর মধ্য
দিয়ে ‘অপারেশন কাটাখালি’ ও রাঙ্গামাটিয়া যুদ্ধের সরকারি স্বীকৃতি মিলেছে।
ইতোমধ্যে রাঙ্গামাটিয়া গ্রামের তিনজন নারীকে সরকার বীরাঙ্গনা
মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়েছে।