হাতে ধরি পায়ে ধরি আমাগ রক্ষা করেন, দুইটা বাঁশের বেড়া দিমু হেই ক্ষমতা আমগ নাই, বাড়ি-ঘর ভাইঙ্গা গেলে কই যামু, যাওয়ার কোন জাগা নাই। কান্নাজড়িত কন্ঠে এমন কথাগুলো বলছিলেন পঁয়ষট্টি বছরের বৃদ্ধা রোকেয়া বেগম। গত দুই বছর যাবৎ ধীরে ধীরে ভেঙেছে অনেক বাড়ি-ঘর। এখন বর্ষার মৌসুমে পানি বৃদ্ধি ও স্রোতের চাপ থাকায় ভাঙনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বাঁশের বেড়া ও বালুর বস্তা ফেলেও কোন হচ্ছে না। ভাঙনের কবলে পড়েছে শতাধিক ঘর-বাড়ি, অতি ঝুকিতে রয়েছে প্রায় ৫০ টি পরিবার, এর মধ্যে হিন্দু পরিবার বেশি। তাদের একটি মহাদের মন্দির এখন পাড় ঘেষে রয়েছে, আর ৪/৫ ফুট ভাঙলেই মন্দিরটি বিলীন হবে নদী গর্ভে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বিষয়টি জেলা প্রশাসন উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা বরাবর লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। উপজেলা প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও কোন ব্যবস্থা এখনো হয় নই।
মুন্সীগঞ্জের তালতলা থেকে ডহুরী পর্য়ন্ত খালের (গৌরগঞ্জ খাল) ভাঙনের কবলে সিরাজদিখান, টঙ্গীবাড়ি ও লৌহজং উপজেলার অনেক অংশ। এরমধ্যে এই নদী ভাঙনের কবলে পরে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সিরাজদিখান উপজেলার মালখানগর ইউনিয়নের নাটেশ্বর গ্রাম। বিলীনের পথে মন্দিরসহ শতাধিক ঘর-বাড়ি। আতঙ্কে রয়েছে পাড় এলাকার হাজারো মানুষ। নদীর পানি ও স্রোতের চাপ বৃদ্ধি সেই সাথে বিভিন্ন ট্রলার, বালুবাহী বাঙ্কহেড চলাচলের কারণে ভাঙনের মাত্রা বেড়েছে। গত ১৫ বছরে প্রায় ৫৫ টি পরিবারের বাড়ি ঘর ভেঙে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এ বছর আশঙ্কা করা হচ্ছে এভাবে ভাঙতে থাকলে এক থেকে দুই মাসের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে গ্রামের দক্ষিণ পাড়া। গত ৩ সপ্তাহে ভেঙেছে দৈর্ঘ্যে প্রায় ৩০০ মিটার ও প্রস্থে কোথাও ৩ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত। দ্রুত ভাঙন রোধ করা না গেলে কমপক্ষে ৫০ টি পরিবারের ভিটে মাটির চিহ্ন আর থাকবে না, হারিয়ে যাবে মানচিত্র থেকে।
স্থানীয় মুক্তা রানী দাস, বেদনা রানী দাস, সুজন দাস, আবুল কালামসহ আরো অনেকে জানান, গত ২০/২৫ বছরে তালতলা-ডহুরী-গৌরগঞ্জ খালটি ভাঙতে ভাঙতে পশ্চিমে চলে এসেছে। এতে বিলুপ্ত হয়েছে অনেক বাড়ি-ঘর, অনেক পরিবার এলাকা ছাড়া হয়েছে। বর্তমানে নাটেশ্বর দক্ষিণ পাড়ায় বসবাস করছেন দুই শতাধিক পরিবারের হাজারো মানুষ। তাদের নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। ভয়ে শিক্ষার্থীদের পড়া লেখায় সমস্যা হচ্ছে, তারা সব সময় ভয়ে থাকেন। কখন যে তাদের ভেঙে যায়। তাই তারা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের প্রতি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানান।
মালখানগর ইউপি সদস্য মো. আওলাদ হোসেন জানান, গত বছর মুন্সীগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বরাবর বিষয়টি লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, কেউ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এবছর যদি দ্রুত কোন ব্যবস্থা না নেয় তাহলে অত্র অঞ্চলের কৃষিতে অবদান রাখা ও এই অঞ্চলের মানুষের মাছের চাহিদা মেটানোর মত ভুমিকা রাখা এই গ্রামটি হারিয়ে যাবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শরীফুল আলম তানভীর জানান, আমি গত বছর যোগদানের পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ডহুরী-তালতলা-গৌরগঞ্জ খালের মালখানগর ইউনিয়নের ফেগুনাসার গ্রামে জিও ব্যাগ ভেলে ভাঙন রোধ করেছি। উপজেলা প্রশাসন ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর সুফল ভাঙন কবলিত এলাকার লোকজন পেয়েছে। এখন পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে নাটেশ্বর এলাকায় ভাঙনের প্রবনতা বেড়েছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সাথে দ্রুত যোগযোগ করবো, যাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।