পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা রুটের তেঁতুলিয়া চৌরাস্তা বাজারে কোন যাত্রী ছাউনি না থাকায় আপামর জনসাধারণের যাতায়াতে দূভোর্গ। পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কের দূরত্ব প্রায় ৬৫ কিলোমিটার। এই রুটে দিনের বেলায় তেমন কোন দূর পাল্লার যাত্রীবাহী মিনিবাস চলাচল করে না। তবে ১৫ মিনিট পরপর বাংলাবান্ধা থেকে ছেড়ে আসা পঞ্চগড়গামী এবং পঞ্চগড়-বোদা ও দেবীগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা বাংলাবান্ধাগামী প্রায় অর্ধশতাধিক মিনিবাস চলাচল করে। এসব গাড়ীতে দেশের দূরদূরান্ত থেকে আগন্তুক পর্যটক, স্কুল-কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রী ও সরকারি-বেসরকারি অফিসের চাকুরিজীবী লোকজন নিয়মিত যাতায়াত করেন। এ ছাড়া স্থানীয় জনসাধারণও এসব গাড়ীতে লোকালভাবে যাতায়াত করে। পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কের একাধিক স্থানে যাত্রীদের বাসে উঠানামার জন্য যাত্রী ছাউনি থাকলেও তেঁতুলিয়া সদরের চৌরাস্তা বাজারে কোন যাত্রী ছাউনি নাই। যদিও পঞ্চগড় জেলা মোটরমালিক সমিতি তাদের নিজস্ব সম্পত্তিতে তেঁতুলিয়া বাস টার্মিনাল নির্মাণ করেছে সেখানে সাধারণ যাত্রীরা খুব বেশি উঠানামা করে না। ফলে তেঁতুলিয়া চৌরাস্তা বাজারের জনবহুল গুরুত্বপূর্ণ চার রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে পঞ্চগড় ও বাংলাবান্ধা রুটে চলাচলকারী মিনিবাসগুলো যাত্রীদের উঠা-নামা করে। যাত্রীদের যাতায়াতে শুস্ক ও উষ্ণ মৌসূমে মিনিবাসে উঠা-নামায় তেমন কোন সমস্যা সৃষ্টি না হলেও বর্তমান বর্ষা মৌসূমে চরম দূভোর্গ পোহাতে হচ্ছে। যাত্রী ছাউনি না থাকায় সাধারণ যাত্রীদের প্রায় সময় রিমঝিম বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে মিনিবাসে উঠা নামা করতে হচ্ছে। এক্ষেতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন অসুস্থ বয়-বৃদ্ধ রোগী ও মা-শিশুরা। কারণ বৃষ্টির মাঝে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ানোর জন্য আশপাশে কোন ঘর বা শেড নাই।
তেঁতুলিয়া সরকারি ডিগ্রী কলেজের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী শাপলা, মনালিসা ও প্রিন্স বলেন, আমাদের বাড়ি বাংলাবান্ধা এলাকায়। সেখানে বাংলাবান্ধা বাস-টার্মিনালে গিয়ে বাসে উঠে কলেজে আসি। কিন্তু এখানে এসে কলেজের ছুটির পর চৌরাস্তা বাজারে গাড়ীতে উঠার জন্য দাঁড়িয়ে থাকব তেমন কোন শেড বা যাত্রী ছাউনি না থাকায বেশ দূভোর্গ পোহাতে হচ্ছে। এই শিক্ষার্থীদের দাবী তেঁতুলিয়া সরকারি ডিগ্রি কলেজের সামনে এবং তেঁতুলিয়া চৌরাস্তা বাজারে একটি যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হলে তাদের মিনিবাসে যাতায়াতে দূভোর্গ লাঘব হবে।
তেঁতুলিয়া কাজী শাহাবুদ্দিন বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২ হাজার ছাত্রী আছে। এদের বেশিভাগ শিক্ষার্থীর বাড়ি বাংলাবান্ধা, তিরনইহাট, সিপাইপাড়া, রণচন্ডি, শালবাহান, মাঝিপাড়া এলাকায়। এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী লোকাল রুটের বাসে স্কুল-কলেজে যাতায়াত করেন। কিন্তু যাত্রী ছাউনির না থাকায় বর্ষার দিনে বই খাতা ও বেগ নিয়ে ভিজে যান এবং দীর্ঘ সময় স্কুল ছুটির আগ পর্যন্ত ভিজে শরীর ও কাপড় নিয়ে ক্লাসে থেকে জ¦র-সর্দিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। একইভাবে তেঁতুলিয়া সরকারি মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রায় ৫ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী একইভাবে কষ্ট করে এসব বাসে যাতায়াত করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, তেঁতুলিয়া চৌরাস্তা বাজারে যাত্রী ছাউনি নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে জেলা পরিষদের জায়গা চাওয়া হয়েছে। জায়গা নির্বাচন হলে আধুনিকমানের একটি যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হবে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদুর রহমান (ডাবলু) বলেন, তেঁতুলিয়া উপজেলা একটি পর্যটন শিল্প নির্ভর এলাকা। এখানে তেঁতুলিয়া চৌরাস্তা বাজারের পুর্বের যাত্রী ছাউনি ছিল। কিন্তু সঠিক স্থানে না থাকায় সেই যাত্রী ছাউনি ভেঙ্গে ভেলা হয়েছে। এখন শুধু জায়গা নির্বাচনের অভাবে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে রাস্তার উভয়পাশে চৌরাস্তা বাজারের জেলা পরিষদের জায়গায় খুব তাড়াতাড়ি একটি আধুন যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হবে। পরবর্তীতে তেঁতুলিয়া সরকারি ডিগ্রী কলেজের সামনেও একটি যাত্রী ছাউনি নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।