অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি না থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের বার্ন ইউনিট ক্রমেই অকার্যকর হয়ে পরেছে। ন্যূনতম জটিল অগ্নিদগ্ধ রোগী এখানে আসা মাত্রই তাকে ঢাকায় প্রেরণ করা হচ্ছে। যারা ভর্তি রয়েছেন তারাও ধুঁকছে দিনের পর দিন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১ ও ৩ জুলাই ঝালকাঠির সুগন্ধ্যা নদীতে তেলের ট্যাংকারে পর পর দুইবার বিস্ফোরণে দগ্ধ সাতজনকে শেবাচিম হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। এখানে আসামাত্রই সকল দগ্ধ রোগীকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। একইভাবে গত ১১ মে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে তেলের ট্যাংকারে বিস্ফোরণে দগ্ধ তিনজনকে এখানে আনামাত্রই ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছিল। এনিয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্যসচেতন মহলে রীতিমত তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। গোটা দক্ষিণাঞ্চলের অগ্নিদগ্ধ রোগীদের জীবন বাঁচাতে বরিশাল বিভাগের একমাত্র এই বার্ন ইউনিটটির দিকে নজর দেয়ার দাবি জানিয়েছেন সচেতন বরিশালবাসী।
শেবাচিম হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে আধুনিক অপারেশন থিয়েটারসহ গুরুতর অগ্নিদগ্ধ রোগীদের সেবা দেওয়ার মতো উন্নত আইসিইউ কিংবা এইচডিইউ নেই। ফলে ৩০ শতাংশের বেশি দগ্ধ এবং শ্বাসনালীতে আঘাতপ্রাপ্ত রোগীদের শেবাচিমে রাখা যাচ্ছেনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের মার্চ মাসে চালু হওয়া শেবাচিম হাসপাতালের বার্ন ইউনিট চিকিৎসক সংকটের কারণে ২০২০ সালের ১৮ মে বন্ধ হয়ে যায়। ২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর ঝালকাঠিতে যাত্রীবাহি লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর এখানে ৮১ জন দগ্ধ রোগী ভর্তি হলে পুনরায় বার্ন ইউনিট চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ঢাকা ও রংপুর থেকে একজন সহযোগী অধ্যাপক, একজন রেজিস্টার ও একজন জুনিয়র কন্সাল্টেন্ট যোগদান করার পর গত ২৩ মে থেকে পুনরায় চালু হয় এই ইউনিট। কিন্তু ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান সম্প্রতি দুর্ঘটনায় আহত হলে আবার মুখ থুবড়ে ইউনিটটি। এখন রান্নায় দগ্ধ কিংবা চুলার আগুনে ফুস্কা পড়ে দগ্ধ যারা ভর্তি হচ্ছে তাদেরও সেবা এখানে সুনিশ্চিত নয় বলে দাবি করছেন ভূক্তভোগীরা।
সূত্রে আরও জানা গেছে, গত একমাসে শেবাচিম হাসপাতালের বার্ন আউট ডোর ও ইউনিটে মোট ৩২২ জন অগ্নিদগ্ধ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বার্ন ইউনিটে প্রফেসর, রেজিস্টার, দুইজন সহকারি রেজিস্টার ও ইএমওসহ ছয়জন ডাক্তার ও ১০ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদ শূন্য রয়েছে। একইসাথে এখানে কর্মরত ২৩ জন নার্সের মধ্যে ২১ জনেরই কোনো বার্ন প্রশিক্ষণ নেই। নার্সদের পক্ষ থেকে একাধিকবার প্রশিক্ষণের দাবি করা হলেও কোন সুফল মেলেনি।
শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞরা কোনো রোগীকে তার ইউনিটে না রেখে ঢাকায় পাঠাতে চাইলে সেখানে তাদের কিছুই করার থাকেনা। তিনি আরও বলেন, বরিশাল বিভাগের একমাত্র এই বার্ন ইউনিটটিতে শুরু থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ছয় হাজার অগ্নিদগ্ধ রোগী সেবা পেয়েছেন। এরমধ্যে কমপক্ষে দুই হাজার রোগীর অপারেশন করা হয়েছে। অন্যান্য সমস্যরা কথা স্বীকার করে তিনি আরও বলেন, চিকিৎসক, স্টাফ সংকটসহ পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি না থাকার বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। আশাকরছি খুব শীঘ্রই সকল সমস্যা সমাধান হবে।