ঔপনিবেশিক আমলে ইন্দোনেশিয়া এবং শ্রীলংকা থেকে লুট করা মূল্যবান ধনসম্পদ ও প্রত্নবস্তু ফেরত দিচ্ছে নেদারল্যান্ডস। এসব প্রত্নবস্তুর মধ্যে রয়েছে রত্ন-খচিত ব্রোঞ্জের একটি কামান এবং লম্বক ধনভাণ্ডার থেকে লুট করা গয়না। ২০২০ সালে একটি উপদেষ্টা কমিটির দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে ৪৮৪টি প্রত্নবস্তু ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নেদারল্যান্ডস। ওই প্রতিবেদনে দেওয়া সুপারিশ অনুযায়ী, সাবেক উপনিবেশ দেশগুলো তাদের লুট হওয়া সম্পদ ফেরত চাইলে তাতে সাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নেদারল্যান্ডস। গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে উপনিবেশিক দাসপ্রথায় নিজেদের কলঙ্কিত ভূমিকার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায় নেদারল্যান্ডস। সাবেক ডাচ রাষ্ট্রের পক্ষে নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুতে এই ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। বেশ কয়েক দশক আগে থেকেই দেশের ঔপনিবেশিক অতীতের জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবি উঠেছিলে নেদারল্যান্ডসে। লুণ্ঠিত শিল্পকর্ম ফিরিয়ে আনা এবং নেদারল্যান্ডসের ক্ষমা চাওয়ার জন্য সাবেক উপনিবেশ দেশগুলোর তরফ থেকেও চাপ আছে। ডাচ রাষ্ট্রের দাসপ্রথার ইতিহাস ২৫০ বছরের। লেইডেন ইউনিভার্সিটির সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৬১২ থেকে ১৮৭২ সালের মধ্যে ডাচদের হাতে সাড়ে পাঁচ লাখ থেকে ছয় লাখ আফ্রিকান নির্যাতিত হয়েছিল। ১৮ শতকে সুরিনাম এবং গায়ানায় ডাচরা ক্রীতদাস কেনাবেচার বাজার সৃষ্টি করে। ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মাধ্যমে ১৭শ শতকে এশিয়ায় দাস ব্যবসা করে ডাচরা। এ সময় অসংখ্য প্রত্নবস্তু ও ধনসম্পদ লুট করে ডাচ সেনারা। লুণ্ঠিত প্রত্নবস্তু ফেরত দেওয়ার প্রসঙ্গে নেদারল্যান্ডসের সংস্কৃতমন্ত্রী গুনে উসলু বলেন, প্রথমবারের মতো আমরা এমন বস্তু ফিরিয়ে দিচ্ছি যেগুলো নেদারল্যান্ডসে কখনই থাকার কথা ছিল না। তবে আমরা শুধু বস্তু ফেরত দিচ্ছি না। আমরা আসলে এমন একটি সময় শুরু করেছি যেখানে ইন্দোনেশিয়া এবং শ্রীলংকার সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে সহযোগিতার সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়ার কাছে ফেরত দেওয়া সংগ্রহগুলোর মধ্যে রয়েছে লম্বক ধনভাণ্ডারের রত্ন, মূল্যবান পাথর, সোনা এবং রুপার গয়না। ১৮৯৪ সালে ইন্দোনেশিয়ার লম্বক দ্বীপের রাজকীয় প্রাসাদ থেকে ডাচ ঔপনিবেশিক সেনারা এসব সম্পদ লুট করেছিল। শ্রীলংকা ফেরত পাঁচ্ছে ১৮ শতকের একটি ব্রোঞ্জ কামান। কামানটি বর্তমানে আমস্টারডামের রিজকসমিউজিয়ামে রয়েছে। ধারণা করা হয়, ১৭৪০ এর দশকে ক্যান্ডির রাজাকে শ্রীলংকার একজন অভিজাত এটি উপহার দিয়েছিলেন। কামানটি ১৭৬৫ সালে ডাচদের হাতে পড়েছিল বলে মনে করা হয়। ওই বছর ডাচ সেনারা শ্রীলংকার রাজ্য ক্যান্ডি আক্রমণ করেছিল। নেদারল্যান্ডসের সংস্কৃতি মন্ত্রী উসলু বলেন, সরকার ঔপনিবেশিক যুগে সংগৃহীত শিল্পের তদন্তকারী ডাচ কমিটির ২০২০ সালের প্রতিবেদনে দেওয়া সুপারিশের ভিত্তিতে কাজ করছে।