এক সময় পাট ও চায়ের পরই চামড়া খাতের নাম উচ্চারিত হতো। এখন অবশ্য চামড়ার সেই রমরমা অবস্থা নেই। তবে চামড়া খাতের গুরুত্ব এখনো অস্বীকার করা যায় না। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস এ চামড়া খাত নিয়ে চলছে নানামুখী সমস্যা-সংকট। বাংলাদেশের ছোট-বড় সব শিল্প আজ নানাভাবে সমস্যাগ্রস্ত। তার মধ্যে চামড়াশিল্প অন্যতম এবং কোরবানির মৌসুমে চামড়ার লেনদেন যে আমাদের অর্থনীতির অন্যতম উল্লেখযোগ্য দিক, তা উল্লেখ অনাবশ্যক। তবে কোরবানির ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বকেয়া টাকা পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে চামড়া ব্যবসায়ীদের। বছরের মোট চাহিদার ৫০ শতাংশ চামড়া সংগ্রহ হয়ে থাকে কোরবানির ঈদে।
প্রতি বছর কোরবানি ঈদে ধারদেনা করে মৌসুমি ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা নগদ টাকায় চামড়া কিনলেও ট্যানারি মালিকদের কাছে তা দিতে হয় বাকিতে। এ টাকা পেলেও হয়তো ঘুরে দাঁড়াতে পারতো চামড়া শিল্পের সঙ্গে জড়িত চামড়া ব্যবসায়ীরা। একদিকে লবণের বাড়তি দামের কারণে চামড়া সংরক্ষণ নিয়ে বিপাকে, অন্যদকে খরচ বেড়ে যাওয়ায় চামড়া নষ্টের আশঙ্কায় থাকেন। এমনকি ভারতে চামড়ার দাম বেশি হওয়ার কারণে তৈরি হয়েছে পাচারের শঙ্কা। বর্তমানে পাশের দেশ ভারতে ভালো মানের গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ রুপি এবং খাসির চামড়া ২০-২৫ রুপিতে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে চামড়ার দাম বেশি হওয়ার কারণে এবার চামড়া পাচারের শঙ্কাও বেড়েছে ব্যবসায়ীদের। তবে জানা গেছে ‘সরকারি নির্দেশনার বাইরে কেউ চামড়া পাচার বা পাচারের চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ এবং যাতে ভারতে চামড়া পাচার হতে না পারে, সে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গত দুই মৌসুমে চামড়ার অস্বাভাবিক নিম্নমুখী দাম হতাশ করেছে ব্যবসায়ীদের। এবার বর্তমান চামড়ার দাম সেই হতাশা কাটিয়ে দিতে পারে ব্যবসায়ীদের। যার কারণে মৌসুম শুরুর আগে থেকেই চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তাই এবার চামড়ার দামের পাশাপাশি অতঃপর গোটা শিল্পক্ষেত্রে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে, তা কাটাতে সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে। চামড়াশিল্পসহ অন্যান্য জায়গায় স্বাভাবিকতা ফিরে এলে বেকারত্বেরও ভয় থাকবে না এবং দেশ হবে স্বাবলম্বী ও স্বনির্ভর। এ ক্ষেত্রে সমস্যা-সীমাবদ্ধতা এবং প্রতিবিধানে পন্থা চিহ্নিত হওয়া প্রয়োজন। তাই আমরা আশা করবো এবার চামড়া সন্ত্রাস প্রতিরোধে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিবেন ও কার্যকরভাবে নজরদারি বাড়াবেন। যেন আমরা খুব দ্রুত এর যথার্থ প্রতিফলন দেখতে পারি।