ঢাকা শহরের পরিস্থিতি বড়ই শোচনীয়ই। এবারো বিশ্বের বাসযোগ্য শহরের তালিকার তলানিতে অবস্থান করছে ঢাকা নগরী। এই শহরটি নিয়ে যে ধরনের চিন্তাভাবনা, সচেতনতা ও উৎকণ্ঠা থাকা উচিত বা ভবিষ্যৎ ভাবনা প্রয়োজন, তার কিছুই চোখে পড়ছে না। বরং বাসযোগ্যতার তালিকায় এ বছর ১৭৩টি দেশের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ১৬৬। বৈশ্বিক এ সূচকে রাজধানী এত শোচনীয় অবস্থার প্রথম স্থানেই রয়েছে যানজট। যানজটের কারণে ঢাকা শহর অনেকের কাছে এখন অসহনীয় হয়ে উঠেছে। একদিকে সড়কে যানজট, অন্যদিকে ফুটপাথ দখল। ফলে হাঁটার কোনো জায়গা নেই। এসব রেটিংয়ে ঢাকা মূলত অস্বস্তিকর অবস্থায় ছিল আগে থেকেই। একই সাথে ঢাকা শহরে জনসংখ্যার ঘনত্ব একটি বড় সমস্যা। আমাদের প্রিয় এই নগরীর সমস্যার তালিকা এখানেই শেষ নয়। সামান্য বৃষ্টিতেই এ শহরে তীব্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় এবং পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার ওপর কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, অবৈধভাবে জলাভূমি ও জলাশয় দখল এবং ড্রেনে ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে শহরের বেশিরভাগ রাস্তা সারাদিন পানিতে ডুবে থাকে। এদিকে খোলা জায়গার অভাব, পার্ক, খেলার মাঠ ও গাছপালার স্বল্পতা ঢাকাকে ধূসর ও নিস্তেজ এক নগরীতে পরিণত করেছে। যদিও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ নানা কারণে ঢাকামুখী। এ মানুষের ঢাকামুখী হওয়ার প্রধান কারণ- কর্মসংস্থান। ফলে ঢাকার মতো এত জনঘনত্বের দেশ পৃথিবীতে বিরল। সম্পদের যে ঘনত্ব সে দিক থেকেও অন্যান্য শহরের চেয়ে ঢাকার একই অবস্থা। প্রকৃতপক্ষে জনঘনত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিকল্পনার ঘাটতি রয়েছে ঢাকায়। এজন্য বেশি প্রয়োজন ঢাকার ওপর জনসংখ্যার চাপ কমানো। এজন্য ঢাকামুখী মানুষের স্র্েরাত ঠেকাতে সবার আগে দরকার সারা দেশে উন্নয়ন-বৈষম্য কমিয়ে আনা। একই সাথে রাজধানী ঢাকার আশপাশের শহরগুলোর সাথে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে সংযোগ করা গেলে রাজধানীর ওপর চাপ কমবে এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে বলে আশা করা যায়। তবে বর্তমানে ঢাকার ব্যাপারে সরকারের যে নির্বিকার ভাব, সেটাই সবচেয়ে বেশি আশঙ্কার। কেননা সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ নিয়ে, এর ভালোমন্দ নিয়ে ভাবার লোকজন অনেক থাকলেও ঢাকা নিয়ে ভাবার কেউ নেই। তাই সরকারকে এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা অপরিকল্পিত ও নিয়ন্ত্রণহীন উন্নয়নের কারণে প্রকৃতি একবার ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা শোধরানো কঠিন।