পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যুদ্ধ ছাড়া আর সবকিছু করেছি। তবে এখনও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সফল হয়নি। শনিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এক প্রশ্নের উত্তরে ড. মোমেন বলেন, ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সব ধরনের চেষ্টা করেছি। যুদ্ধ ছাড়া আর সবকিছুই করেছি। আমরা আলোচনার মাধ্যমে এ সংকটের সমাধান চাইছি। তবে মিয়ানমার কখনও বলেনি যে তারা নেবে না। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ বোঝাচ্ছেন, যাতে তারা ফিরে না যায়। সে কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে পাইলট প্রকল্পেও অনেকে বাধা দিচ্ছে। তবে রোহিঙ্গারা গেলে নিজেদেরই ভবিষ্যৎ ভালো হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকের অংশগ্রহণকে গুরুত্ব দিচ্ছে না সরকার। তারা যদি নির্বাচন পর্যবেক্ষণে না-ও আসে, সেটি দেশের ক্ষতির কারণ হবে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুনিয়ার বড় বড় দেশে নির্বাচন দেখার জন্য কোনো পর্যবেক্ষক যায় না। আমাদের দেশে পর্যবেক্ষক এলো কি এলো না, এতে কিছু যায় আসে? বিদেশি পর্যবেক্ষক যদি আসতে চায়, তবে আমাদের আপত্তি নেই জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষক এলে ভালো, কিন্তু না এলে আমরা পরোয়া করি না। পর্যবেক্ষক না এলে দেশের কোনো ক্ষতি হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশে একটি সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে বিদেশিদের এনে এনে নির্বাচন দেখানোর। আমার মতে, এটি ভবিষ্যতে বন্ধ করা দরকার। আমাদের দেশে অনেক বাড়ন্তি কাজ হচ্ছে এবং এটি বন্ধ করা উচিত। নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রে সংলাপ হয় কিনা প্রশ্ন তোলেন ড. মোমেন। এ সময় জাতিসংঘের প্রস্তাব নিয়েও তিনি কথা বলেন। মোমেনের ভাষ্য, নির্বাচন নিয়ে জাতিসংঘ ভালো কোনো পরামর্শ দিলে স্বাগত জানাই। তাদের প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে। প্রস্তাব নিয়ে আলোচনাও হতে পারে। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে আমরা কোনো সন্ত্রাসীর সাথে কথা বলবো না। আর তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায় সংলাপে কোনো ভালো অর্জন হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতীয় নির্বাচন অনেকেই বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ বলছেন, তারা ইলেকশন করতে দেবে না। আপনারা জানেন, কারা নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে চায়। নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আমেরিকা, ভারতে যায় না। তবে আমরা বিদেশিদের বেশি বেশি পাত্তা দেই। নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক এলে ভালো, তবে না এলেও সমস্যা নেই। ভবিষ্যতেও এটা নিয়ে আমাদের চিন্তা করা দরকার। এ সময় নির্বাচনী সংলাপ প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করে পাল্টা প্রশ্ন করেন ড. আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে আমেরিকায় কেউ সংলাপ করে? যুক্তরাষ্ট্রে কেউ পদত্যাগ করে? যুক্তরাজ্যে কেউ করে? আমেরিকায় নির্বাচনে ২৫/৩০ শতাংশ লোক ভোট দেয়। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক লোক ভোট দেয়। তিনি বলেন, আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আশা করি আগামীতে মডেল ইলেকশন হবে। তবে আমাদের দেশে সন্ত্রাসী দল থাকতে পারে। সন্ত্রাসী দল ইলেকশনে না এলে কোনো সমস্যা নেই। বিদেশি প্রতিনিধি দলের আসন্ন ঢাকা সফর নিয়ে ড. মোমেন বলেন, দেশে বিদেশি কেউ এলে স্বাগত। তবে অতি সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট। আমাদের ইলেকশন প্রসেস কেউ যেন ধ্বংস না করে, সেটা দেখতে হবে। আমরা নিজেদের তাগিদেই সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাই। আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি দেব- আমরা এই নীতিতেই বিশ্বাসী। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ডিকাব প্রেসিডেন্ট রেজাউল করিম লোটাস ও সাধারণ সম্পাদক ইমরুল কায়েস।