আমাদের সমাজজীবনে চাঁদাবাজির ঘটনা নতুন নয়, বারবার এ অভিযোগ ওঠে কিন্তু তার কোনো সুরাহা মেলছে না। পরিবহন খাত থেকে শুরু করে ফুটপাতের ব্যবসা-সর্বত্রই চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য। চাঁদাবাজি প্রায় প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেতে চলেছে। এমনকি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর বিরুদ্ধেও পাওয়া যায় চাঁদাবাজির অভিযোগ, বিশেষ করে সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে পরিবহনে চাঁদাবাজির ঘটনা তো ওপেন সিক্রেট। দেশের স্থলবন্দরগুলোতেও বিভিন্ন নামে চাঁদা আদায় করা হয়। সারা দেশে চলাচলকারী পণ্যবাহী ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করা হয়। চাঁদাবাজির কারণে একদিকে যেমন পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের পকেট থেকে বাড়তি পয়সা গুনতে হচ্ছে, অন্যদিকে এই চাঁদাবাজির শেষ পর্যন্ত মাসুল গুনতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকেই। ট্রাকের ভাড়ায় চাঁদাবাজির টাকা যুক্ত হওয়ায় পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। তাই দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পণ্যবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজি বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নেবে-এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এখনতো বাজারে ঢুকতে চাঁদা বাহির হতে চাঁদা, স্ট্যান্ডে দাঁড়ালে চাঁদা, যাত্রি তুললে চাঁদা ইত্যাদি নানা চাঁদাবাজিতে সাধারন মানুষের জনজীবন অতীষ্ট করে তুলেছে চাঁদাবাজরা। কারো কোনো কিছু বলার ক্ষমতা নাই। কারণ এমপি-মন্ত্রী-পুলিশ-প্রশাসন-সন্ত্রাসি আর প্রভাবশালীদের যোগসাজসে এই চাঁদাবাজি এখন একটি কর্পোরেট কালচারে পরিনত হয়েছে। অবৈধ জায়গায় ফুটপাতে দোকান বসিয়ে দিয়ে হাপ্তা উসলি, দিন উসলি চলছে প্রশাসনের চোখের সামনেই। রেল লাইনের দুপাশে উপরে অবৈধ দোকানের কোনো অভাব নাই। মানুষের হাঁটার জায়গা নাই, বসার জায়গা নাই, নিঃশ্বাস ফেলার জায়গা নাই। তারপরেও কেউ কিছুই বলছেনা। কারন, ভাগের টাকা যায় সবার ঘরেই। কোনো রেট চার্ট বা টিকেট ছাড়াই চাঁদা তোলা হচ্ছে। আর যে টিকেটগুলো দেওয়া হচ্ছে সেগুলো ছাপাখানা থেকে বানিয়ে আনা রিসিট। যার সাথে সরকারি নথি-পত্রের কোন সংযোগ নাই। বর্তমানে সিএনজি স্ট্যান্ড, বাস স্ট্যান্ড, রিকশা স্ট্যান্ড সহ সব জায়গায় প্রশাসনের সামনেই চলছে এ অনিয়ম। প্রতিবাদ করলেই বন্ধ করে দেওয়া হয় দোকান, কেড়ে নেওয়া হয় গাড়ি। পুলিশ জানে এলাকায় কারা চাঁদাবাজি করে, তারপরেও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় সবাই। তবে দেশের সাধারন খেটে খাওয়া মানুষের শ্রমের টাকা এভাবে ইজারার নামে লুটে নেওয়া কোনভাবেই সঠিক নয়। প্রয়োজনে ভতুর্কি দিয়ে এই ইজারার নামে চাঁদাবাজি বন্ধ করা প্রয়োজন। তাই প্রশাসনকে তৎপর হতে হবে, নয়তো চাঁদাবাজির এই নয়া সংস্করণ অচিরেই সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে। ফলে এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত পদক্ষেপ নেবে সেটাই কাম্য। চাঁদাবাজ যে বা যারাই হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার পাশাপাশি বাংলাদেশে যেনো কেউ চাঁদাবাজি না করতে পারে সেজন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলেই চাদাবাজি বন্ধ করা সম্ভব হবে।