সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনার ব্যাপকতা যেন কিছুতেই রোধ করা যাচ্ছে না। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন মানুষ। দুর্ঘটনাকবলিত হচ্ছে সড়কে চলাচলকারী সব ধরনের যানবাহনই-তা সে অ্যাম্বুলেন্সই হোক বা যাত্রীবাহী বাস হোক অথবা পণ্য বহনকরী ট্রাক হোক। ঈদুল আজহায় যাতায়াতে দেশের সড়ক-মহাসড়কে ২৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৯৯ জন নিহত ও ৫৪৪ জন আহত হয়েছে। তবে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সম্মিলিতভাবে ৩১২টি দুর্ঘটনায় ৩৪০ নিহত ও ৫৬৯ জন আহত হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে এ তথ্য উঠে এসেছে। সড়কে এভাবে মর্মান্তিক মৃত্যুই যেন আমাদের নিয়তি এখন। ফলে সড়কপথে ভ্রমণ করা হয়ে দাঁড়িয়েছে আতঙ্কের কারণ। প্রশ্ন হলো, এর কি কোনো প্রতিকার নেই? অবশ্যই আছে, তবে প্রতিকারের কার্যকর ব্যবস্থাগুলো বাস্তবায়নে রয়েছে ঘাটতি। বলা যায়, সড়ক দুর্ঘটনা রোধের বিষয়টি সরকারের নীতিনির্ধারক ও কর্তৃপক্ষের কাছে যতটা গুরুত্ব পাওয়া উচিত, তা পাঁচ্ছে না। তাই সড়ক দুর্ঘটনা পরিণত হয়েছে প্রতিকারহীন ঘটনায়। সড়ক দুর্ঘটনার নানা কারণের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো-চালকের অদক্ষতা, চালকের ক্লান্তি, গাড়ির বেপরোয়া গতি এবং গাড়ির ফিটনেস না থাকা। গবেষণায় দেখা গেছে, ৯০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনের অতিরিক্ত গতি এবং চালকের বেপরোয়া মনোভাব। মহাসড়কে যান চলাচলের সর্বোচ্চ গতি বেঁধে দিয়ে এবং গতি পরিমাপক যন্ত্র ব্যবহার করে চালকদের ওই নির্দিষ্ট গতি মেনে চলতে বাধ্য করা হলে দুর্ঘটনা অনেক কমে আসবে বলে মনে করি আমরা। তাছাড়া চালকের দক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে। মহাসড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ করতে হবে সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী। অনেক পরিবহণ মালিক চালকদের পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ দেন না। ক্লান্ত-শ্রান্ত চালক গাড়ি চালালে স্বভাবতই তাতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। বস্তুত এ ঝুঁকিগুলোর কথা গণমাধ্যমে এবং বিশেষজ্ঞ পর্যায় থেকে বারবার বলা হয়। সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে নানা ধরনের পরামর্শ ও সুপারিশও করা হয়। কিন্তু কেউ তাতে কর্ণপাত করেন বলে মনে হয় না। কর্তৃপক্ষও যেন নির্বিকার। ফলে একের পর এক ঘটে চলেছে দুর্ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ২০১৯ সালে একটি আইন কার্যকর করা হলেও এর যথাযথ বাস্তবায়ন আজও নিশ্চিত করা হয়নি। ফলে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা পার পেয়ে যাচ্ছেন সহজেই। দেশে সড়ক দুর্ঘটনা উদ্বেগজনক মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ায় এ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।