কিশোরগঞ্জের নিকলী নৌ-ফায়ার স্টেশনের জন্য বরাদ্দ জাহাজ ‘অগ্নিযোদ্ধা’ দিয়ে সচল রাখা হয়েছে ১০ জেলার একমাত্র বরিশাল নৌ ফায়ার স্টেশন। অগ্নিযোদ্ধা জাহাজটি যেকোনো সময় নিকলীতে ফেরত নেওয়া হলে অচল হয়ে যাবে বরিশাল নৌ ফায়ার স্টেশনটি।
অথচ উপকূলের ১০ জেলায় রয়েছে ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার নৌপথ (নদী ও সাগর মোহনা)। যেকোনো নৌ দুর্ঘটনা পরবর্তী উদ্ধার অভিযানের দায়িত্ব পরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের অধীনস্থ বরিশাল নৌ ফায়ার স্টেশনের কিন্তু বিশাল এই নৌ অঞ্চলে স্টেশন রয়েছে মাত্র একটি।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন থেকে এ প্রতিষ্ঠানটি নানামুখী সংকটে জর্জরিত। আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহৃত স্টেশনের একমাত্র জাহাজ ‘অগ্নিঘাতক’ বহুদিন ধরে অচল। ফলে কিশোরগঞ্জের নিকলী নৌ ফায়ার স্টেশনের ধার করা জাহাজ দিয়ে সচল রাখা হয়েছে বরিশাল স্টেশনটি। এছাড়াও এখানে নেই পর্যাপ্ত সাবস্টেশন ও জনবল।
সূত্রে আরও জানা গেছে, বরিশাল নৌ ফায়ার স্টেশনের আওতায় রয়েছে, বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা এবং ঢাকা বিভাগের ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী। ১০ জেলার একমাত্র নৌ ফায়ার স্টেশনটি বরিশালেল কীর্তনখোলা নদীতে অবস্থিত। এই একটি স্টেশন দিয়ে বিশাল জলসীমায় কার্যক্রম পরিচালনা দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোথাও দুর্ঘটনা ঘটলে একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পৌঁছতে কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে যায়। পটুয়াখালীতে একটি সাব-স্টেশন থাকলেও তাদের সম্বল মাত্র দুটি স্পিডবোট। কয়েকটি সাব-স্টেশন স্থাপনের প্রস্তাব থাকলেও অজ্ঞাত কারণে তা বাস্তবায়ন হচ্ছেনা।
বরিশাল নৌ ফায়ার স্টেশন সূত্র জানা গেছে, শক্তিশালী জলযান অগ্নিঘাতক ১৯৯৩ সালে নির্মিত হয়েছিল। এখন জাহাজটির গতি কমে গেছে। শীত মৌসুমে জাহাজটি কুয়াশা ভেদ করে চলার জন্য শক্তিশালী রাডার নেই। ২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাতে ঝালকাঠিতে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ওইসময় যাত্রীবাহি লঞ্চে আগুন লাগার খবর পেলেও বরিশাল নৌ-ফায়ার স্টেশন থেকে ঘটনাস্থলের দূরত্ব ছিল মাত্র ১৭ কিলোমিটার। কিন্তু অগ্নিঘাতক সেখানে পৌঁছতেই সময় নিয়েছে ১২ ঘন্টা। এরপর থেকে জাহাজটি ফায়ার সার্ভিসের অঘোষিত ‘অচল জাহাজ’ হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, অগ্নিঘাতক জাহাজ ব্যবহারের উপযোগী নেই। জাহাজটি মেরামতে দরপত্র আহবানের প্রক্রিয়া চলছে। জলযান সংকটের ব্যাপারে তিনি বলেন, অগ্নিযোদ্ধা জাহাজটি কিশোরগঞ্জের নিকলী নৌ-ফায়ার স্টেশনের জন্য বরাদ্দ। কিন্তু ওই স্টেশনটি পুরোপুরি প্রস্তুত না হওয়ায় অগ্নিযোদ্ধা পটুয়াখালীতে রাখা হয়েছিল। সেটি আপাতত বরিশাল স্টেশনে রাখা হয়েছে। নিকলীর স্টেশন প্রস্তুত হলে অগ্নিযোদ্ধা ফেরত যাবে।
উপ-পরিচালক আরও বলেন, বিশাল জলসীমার জন্য আরও কয়েকটি সাব-স্টেশনের প্রয়োজনীতা দেখা দিয়েছে। পটুয়াখালীর রাঙাবালী ও দুমকী উপজেলা, পায়রা সমুদ্র বন্দর এবং কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রে একটি করে স্টেশন স্থাপনের সুপারিশ আগেই সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আজও তা কার্যকর হয়নি। ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে পরপর তিনটি নৌযানে অগ্নিকান্ডের পর ওই এলাকায় একটি নৌ ফায়ার স্টেশন স্থাপনের জন্য জোর দাবি উঠেছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, অগ্নিঘাতক জাহাজটি দ্রুত সংস্কারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলে আরও কয়েকটি নৌ-ফায়ার স্টেশন প্রয়োজন। স্থানীয় পর্যায় থেকে সুপারিশও এসেছে। এগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।
সম্প্রতি সুগন্ধা নদীতে জ¦ালানিবাহী একই জাহাজে দুইবার অগ্নিকান্ডের পর দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে ঝালকাঠিতে এসে জ¦ালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ নৌ-রুটের পাশপাশি ঝালকাঠিতে একাধিক তেল কোম্পানির ডিপো রয়েছে। এখানে নৌ ফায়ার স্টেশন স্থাপন জরুরি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায়ে সুপারিশ করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।