বিভাগের সর্বত্র দিন দিন বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ইতোমধ্যে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যুও হয়েছে। ফলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে ক্রমেই বাড়ছে উদ্বেগ। কিন্তু ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশার লার্ভা শনাক্ত এবং ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর প্লাটিলেট আলাদা করার কোনো ব্যবস্থা নেই বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে। যে কারণে ডেঙ্গু আক্রান্তত রোগীরাযেমন ঝুঁকিতে আছেন, তেমনি রোগীর চিকিৎসা নিয়েও রয়েছে জটিলতা।
মঙ্গলবার সকালে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগী দেবব্রত হালদার জানান, স্বরূপকাঠি উপজেলা হাসপাতাল থেকে তাকে বরিশালে পাঠানো হয়েছে। এখানে দুইদিন চিকিৎসার পর কোন উন্নতী না হওয়ায় এখন ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, তার শরীরে প্লাটিলেট দরকার। কিন্তু বরিশালে প্লাটিলেট আলাদা করার মেশিন না থাকায় ঢাকায় যেতে হচ্ছে। দেবব্রত আরও বলেন, শেবাচিম হাসপাতালে আসলে শুধুমাত্র জ¦রের চিকিৎসা হয়। ডেঙ্গু আক্রান্তদের ভালো চিকিৎসা হচ্ছেনা। মনির হোসেন নামের আরেক রোগী বলেন, আমারও প্লাটিলেট কমতে শুরু করেছিল। তখন হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে এই মেশিন তাদের নেই। প্লাটিলেট আরও কমে আসলে আমাকে ঢাকায় যেতে হতো। তবে প্রথম ধাপের চিকিৎসায় আমি সুস্থ্য হচ্ছি।
প্লাটিলেট সেপারেটর মেশিন না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০২২ সালে প্লাটিলেট সেপারেটর মেশিন চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলাম। এখনো কোনো মেশিন পাইনি। ডেঙ্গু চিকিৎসায় প্লাটিলেট সেপারেটর মেশিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, গত বছরের তুলনায় এবছর বেশি ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। আশা করছি খুব শীঘ্রই প্লাটিলেট সেপারেটর মেশিন আমরা পেয়ে যাবো। তখন আর কোনো রোগীকে ঢাকায় পাঠাতে হবেনা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, জেলা ও উপজেলা হাসপাতাল নিয়ে আমরা কাজ করি। সুতরাং প্লাটিলেট মেশিনের বিষয়টি আমাদের নয়। এটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক ডেঙ্গু শনাক্ত ও রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি।
নেই লার্ভা শনাক্তের ব্যবস্থা ॥ শুধু প্লাটিলেট সেপারেট নয়, বিভাগের পৌরসভাগুলো ও একটি সিটি করপোরেশনেও নেই এডিস মশার লার্ভা শনাক্তের মেশিন। উজিরপুর পৌরসভার মেয়র মো. গিয়াস উদ্দিন বেপারী বলেন, এডিশ মশার লার্ভা শনাক্তে আমাদের পৌরসভায় কোনো সরঞ্জাম নেই। তবে নিয়মিত ম্প্রে এবং ঝোপ-জঙ্গল, পরিত্যক্ত পানি ও জলাশয় পরিস্কার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে আমরা সেই ব্যবস্থাও করেছি। পিরোজপুর পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক বলেন, কোনটি সাধারণ মশার আর কোনটি এডিস মশার লার্ভা তা শনাক্তে আমাদের কোনো যন্ত্র নেই। তবে আমরা পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে মশক নিধন অভিযান পরিচালনা করে থাকি। বরিশাল সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, মশক নিধনে আমরা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। প্রতিদিন প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি টিম মশার লার্ভা শনাক্তে কাজ করেন। লার্ভা শনাক্ত হলে সেখানে হ্যান্ড স্প্রে ব্যবহার করে লার্ভা ধ্বংস করা হয়। এ ছাড়া বিকেলে ফগার মেশিন দিয়ে মশক নিধনে স্প্রে করা হয়। তিনি আরও বলেন, এডিস মশার লার্ভা শনাক্তে বরিশালে কোনো ল্যাব নেই। যে কারণে যেখানে যে ধরনের লার্ভাই পাওয়া যাক না কেন, সেগুলো ধ্বংস করা হচ্ছে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. খন্দকার মনজুরুল ইমাম বলেন, বিগত দুইবছর বরিশালে ডেঙ্গুর তেমন প্রকোপ ছিলোনা। এজন্য আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর) থেকেও কোনো প্রতিনিধি এবছর আসেনি। গত দুইবছর যারা এসেছেন তারা বরিশালে এডিসের লার্ভা পাননি। এখন পর্যন্ত যারা ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়েছেন তারা সকলেই ট্রাভেল পেশেন্ট। আক্রান্ত হয়েছেন ঢাকায়। ছুটিতে বাড়িতে এসেছেন। সেখানে অন্যরা সংক্রমিত হয়েছেন। সিটি করপোরেশনের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. রবিউল ইসলাম বলেন, এডিসের লার্ভা শনাক্তে আমাদের ছোট ল্যাব ও কিট দরকার। কিন্তু বরিশাল সিটি করপোরেশন বা অন্য কোনো পৌরসভায় এই ল্যাব বা কিট আছে বলে জানা নেই। ল্যাব ও শনাক্তকরণ কিট খুব ব্যয়বহুল না হলেও আমারা পাচ্ছিনা।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিভাগে গত ২৪ ঘন্টায় মোট ৮৯ জন নতুন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ১ জানুয়ারি থেকে বিভাগে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৫ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন একজন।