কৃষি মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি প্রদানের উপকরণ। বাংলাদেশের কৃষির অগ্রগতির ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে। দেশের দারিদ্র্য নিরসনে কৃষি খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের কর্মসংস্থানের ৪০ শতাংশের বেশি কৃষি খাতে। আয়তনে বিশ্বে ৯৪তম দেশ হলেও বাংলাদেশ অনেক ফসল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ফসল উৎপাদন করা দেশগুলোর তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। কৃষকদের যৌথ প্রচেষ্টায় ফসলের উৎপাদনশীলতা বেড়েই চলেছে। ফলে চাষের জমি প্রতি বছর এক শতাংশ হারে কমার পরেও মোট উৎপাদন বাড়ছে; আমদানি কমছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে। যা গত ৫০ বছরে দেশের প্রধান শস্য উৎপাদন চার থেকে পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের কৃষির এই সফলতার পেছনে কৃষকের অবদান সবচেয়ে বেশি। তবে, আধুনিক বীজ ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য গবেষক এবং উদ্ভাবিত প্রযুক্তি কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ভূমিকাও অনস্বীকার্য। বিশেষ করে সরকারও কৃষিতে ভর্তুকি দিচ্ছে। এতে অনেক ফসল উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ দশে জায়গা করে নেয়ার মতো ফলাফল আমরা পাচ্ছি। এছাড়াও উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক পণ্য আমদানিতেও বাংলাদেশের ব্যয় কমেছে। যদিও ডলার-সঙ্কটের কারণে এখন কিছু পণ্যের আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। তবে এসব আমদানিনির্ভর পণ্য ধীরে ধীরে দেশে উৎপাদনের পরিকল্পনা নিতে হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচাতে হবে। বর্তমানে দেখাই যাচ্ছে, বাংলাদেশের কৃষিতে বেশ রূপান্তর ঘটেছে। তবে এই খবরে বেশি আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই। বরং সরকারের আমদানিনির্ভরতা কমাতে পাঁচ বছর মেয়াদি যেসব বড় প্রকল্পের উদ্যোগ নিয়েছে, তা গুরুত্বের সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে পারলে আরো অনেক ফসলে মাথাপিছু ভোগের হিসাবেও শীর্ষ দশে যেতে পারবে বাংলাদেশ। সে জন্য মোকাবেলা করতে হবে অনেক চ্যালেঞ্জ। দেশে আইন করে শিল্পায়নের ও হাউজিংয়ের জন্য চাষযোগ্য উর্বর জমি ব্যবহার বন্ধ করে আবাদি জমি রক্ষা করতে হবে। কেননা, সমাজের আয়বৈষম্য এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ যা দূরীকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কৃষিকে পূর্ণ যান্ত্রিকীকরণের কোনো বিকল্প নেই। তাই কৃষি চাষাবাদ, কর্তন, প্রসেস করার যন্ত্রপাতি ক্রয়ে কৃষককে কৃষি ভর্তুকির আওতায় সুযোগ দেয়ার পাশাপাশি সহজ শর্তে দীর্ঘমেয়াদি কৃষিঋণের ব্যবস্থা রাখতে হবে। যেহেতু কৃষিই বাঁচিয়ে রেখেছে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে। তাই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি খাতে অবদানকে আরো বাড়াতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।