১৪ টি লিফটের অর্ধেকই অচল অবস্থায় পড়ে থাকায় প্রতিনিয়ত চরম দুর্ভোগে পরছেন বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে আসা মুমূর্ষ রোগীর স্বজনরা। অচল লিফটের দরজাতেই আহাজারি করছেন জরুরি চিকিৎসা নিতে আসা মুমূর্ষ রোগী। অনেক মুমূর্ষ রোগীকে কোলে নিয়ে স্বজনদের সচল লিফটের দরজায় দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে হাসপাতালের লিফটগুলো বিকল হয়ে আছে। তবে গণপূর্ত অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লিফটম্যান সংকটের কারণে লিফটগুলো নিয়মিত চালানো যাচ্ছেনা। বুধবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, যান্ত্রিক ত্রুটির অজুহাতে হাসপাতালের ১৪টি লিফটের অর্ধেক অচল রয়েছে। যে লিফটগুলো সচল রয়েছে তাতে রোগীদের খাবার ও জরুরি ওষুধ বহন করায় দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। ফলে হৃদরোগে আক্রান্তসহ অন্যান্য গুরুত্বর অসুস্থ রোগীরা দ্রুত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পাশাপাশি চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন তাদের স্বজনরাও। সূত্রমতে, সম্প্রতি চালু হওয়া মেডিসিন ভবনের দুটি লিফটের একটিও অচল। ফলে লিফটের দরজায় মুমূর্ষ রোগীদের ট্রলিতে শুয়ে দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে।
অপরদিকে হাসপাতালের পুরোনো ভবনের জরুরি বিভাগের গেটে রোগীদের জন্য দুটি বড় লিফটের একটি সচল থাকলেও অন্যটি অচল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সচল লিফটি প্রায়ই মাঝপথে আটকে যায়। এ ছাড়া ওষুধ বিতরণ কক্ষের পাশে রোগীদের ব্যবহৃত দুটি লিফটের একটি বিকল। সচল লিফটে রোগীদের ওষুধ ও খাবারের ট্রলি বহনের পাশাপাশি অসুস্থদের নেওয়া হয়। ওই লিফটটি রোগীদের জন্য বরাদ্দ হলেও হাসপাতালের কর্মীদের সাথে একপ্রকার বাগ্যুদ্ধ করে তাতে উঠতে হয়। একইস্থানে চিকিৎসক ও নার্সসহ স্টাফদের ব্যবহৃত দুটি ছোট লিফটের একটি অচল। ফলে একটি মাত্র সংকীর্ণ লিফটে ওয়ার্ডে যেতে চিকিৎসকদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এ ছাড়া পাশের আরও ছোট দুইটি লিফট পুরোপুরি অচলাবস্থায় রয়েছে। হাসপাতালের আউটডোরের কাউন্টারের সামনে একটি বড় লিফটে যান্ত্রিক ত্রুটি থাকায় প্রায়ই দুর্ভোগে পরেন সেবা প্রত্যাশীরা। নতুন মেডিসিন ভবনে স্ট্রোকের রোগী নিয়ে আসা নগরীর বাসিন্দা আলতাফ হোসেন বলেন, কোরবানীর ঈদের আগ থেকে দুটি লিফটের একটি বিকল অবস্থায় পরে রয়েছে। জরুরি মুহুর্তেও অপর সচল লিফটটি চালানো হয়না। পুরো হাসপাতালজুড়ে অব্যবস্থাপনা। তিনি আরও বলেন, কেউ কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেন না। একজন রোগীকে নিচতলা থেকে দ্বিতীয় তলায় তুলতে আধঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। ফলে হাসপাতালে এসে সেবার পরিবর্তে আরও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগীরা।
বরগুনা থেকে আসা রোগীর স্বজন মিজানুর রহমান বলেন, একটি লিফটে মাত্র দুটি ট্রলিতে দুইজন রোগী ওপরে উঠতে পারে। ফলে দীর্ঘসময় ধরে রোগীকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেও লিফটে তুলতে পারিনি। পুরোনো ভবনের লিফটের দরজায় অপেক্ষমাণ রোগীর স্বজন মোজাম্মেল হক বলেন, নির্ধারিত ওয়ার্ডে যাওয়ার জন্য লিফটের দরজায় এসে আটকে আছি। হাসপাতালে প্রবেশের পরপরই চরম দুর্ভোগের মধ্যে পরেছি।
শেবাচিম হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, পুরাতন ভবনের লিফট ৫৫ বছর আগে স্থাপন করা হয়েছে। এরমধ্যে কয়েকটি নতুন স্থাপন করা হয়েছে। লিফটের বিষয়টি পুরোপুরি দেখভাল করে গণপূর্ত বিভাগ। আমাদের এই সমস্যার কথা অনেকবার তাদের জানিয়েও কোন সুফল পাইনি।
বরিশাল গণপূর্ত প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কাজী আবু জিহাদ বলেন, লিফটে যান্ত্রিক ত্রুটির কথা কেউ আমাদের জানায়নি। ত্রুটি থাকলে তা ঠিক করা হবে। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে নতুন-পুরাতন মিলে ১৪টি লিফট রয়েছে। এরমধ্যে পুরোনো লিফট আছে মাত্র পাঁচটি। তিনি আরও বলেন, জনবল সংকটের কারণে ১৮ জন লিফটম্যান দিয়ে তিন শিফটে রোস্টার করে চালানো হচ্ছে।