জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক পদ্মা সেতুর সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে মহাসড়কটি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগে বড় পরিবর্তন এনে দিয়েছে। তবে দুঃখজনক হচ্ছে, এই এক্সপ্রেসওয়েতে মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। কিছুদিন পরপরই সেখানে ভয়াবহ দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়। উদ্বোধনের পর থেকে এক বছরে এ সড়কটিতে ২৬০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং মারা গেছেন ৯৪ জন। শুধু একটি সড়কে এক বছরে এত বিপুলসংখ্যক প্রাণহানি খুবই উদ্বেগজনক। বর্তমানে মানুষের মৃত্যুর তৃতীয় বড় কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। সরকারি হিসাবে গত দশ বছরে সড়কে প্রাণ গেছে ২৬ হাজার মানুষের। প্রতি বছর গড়ে আড়াই হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হচ্ছে। তবে বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা আরো বেশি। আর এর জন্য দায়ী মহাসড়কে চলাচল করার ক্ষেত্রে আইন যথাযথভাবে না মানা।
সড়কগুলোতে দেখা যাচ্ছে, আইন না মানার কারণে কিছু জরিমানা করা হলেও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চলাচল বন্ধ হচ্ছে না। তার মানে যে মাত্রায় নজরদারি ও জরিমানা করা হচ্ছে, তা যথেষ্ট নয়। এমনকি উল্টো পথে এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল চলাচল ও প্রবেশ করছে। মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ। তা-ও আবার চলছে উল্টো পথে। শুধু তাই নয়, ভ্যানগাড়িও চলছে এ সড়কে। এছাড়াও সড়কটির এক পাশ থেকে আরেক পাশে যেতে ২১টি পদচারী-সেতু রয়েছে। কিন্তু মানুষ সেসব সেতু ব্যবহার না করে হেঁটে সড়ক পার হন। এমনকি কিছু জায়গায় সড়কের দুই পাশের কাঁটাতারের বেড়াও কেটে ফেলা হয়েছে। বাসগুলো যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো-নামানোর কারণে এমনটি ঘটছে বলে জানান বাসমালিকেরা। তবে এমন যুক্তি মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই।
মহাসড়ক গুলোতে আইন মেনে যদি বাস ও যানবাহন চলাচল করে এবং নির্দিষ্ট স্থানে বাস থামানোর ব্যাপারে যদি তারা অটল থাকে, তাহলে যাত্রীরা তা মানতে বাধ্য হবেন। পাশাপাশি অতিরিক্ত গতি, আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতা, যানবাহনের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণ, মহাসড়কের তদারকি ও সড়ক আইন নিশ্চিত করা, পুলিশ ও সড়ক কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন, এবং মহাসড়কে যারা আইন মানতে চাইবেন না, তাদের আইন মানতে বাধ্য করাসহ জোরদার পদক্ষেপ নিতে হবে। সেই সঙ্গে যাত্রীদের সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম আরও বাড়াতে হবে। তাহলেই সড়ক দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর মিছিল বন্ধ করা সম্ভব হবে।