বাংলার বাঘিনীরা বিশ্ব দরবারে উড়িয়েছে লাল-সবুজের বিজয় নিশান। অসীম বিক্রমে বজায় রেখেছে মাতৃভূমির সম্মান। যেখানে বাঙালি কখনো ভাবতে পারনি বাংলাদেশের মেয়েরা মাঠে ফুটবল খেলবেন। যে নারীকে পদে পদে হতে হয় নানা বৈষম্যের শিকার, সেই নারীই অদম্য প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে জিতিয়ে এনেছে। এটা আমাদেরকে আবার ভাবতে শেখায় যে নারীকে অবদমিত করে নয়, বরং দ্বার খুলে পূর্ণ স্বাধীনতা দিলে সেও হতে পারে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। শুধু তা-ই নয়, বাংলার এ বাঘিনিরা শুধু ফুটবল খেলা নয়, অন্যান্য খেলায়ও মেয়েরা এগিয়ে চলেছেন। তাঁরাই আমাদের ভরসা। বিশ্বাস করি, ক্রীড়াঙ্গনে তাঁরা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা রুখতে দেবেন না। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বড় ক্রীড়াঙ্গনে এই মেয়েরা যথাযথ সহযোগিতা এবং প্রটেকশন পাঁচ্ছেন না। যদিও ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সাফল্য বেশি এবং আশা করা যায় তারা আরো সফলতা এনে দিতে পারবে।
নারীরা যদি নিয়মিতভাবে বিভিন্ন বড় ক্লাবের অধীনে লীগ এবং অন্যান্য টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পান- এতে তাঁদের সামর্থ্য ও সম্ভাবনা কাজে লাগানো সম্ভব হতো আরো বেশি কার্যকরভাবে। দেশে যদি নারীবান্ধব ফুটবল চত্বর সর্বমহলের সহযোগিতায় সৃষ্টি করা সম্ভব হয়, তাহলে আগামী পাঁচ বছরে পরিবর্তন আরও দেখা যাবে। তবে অবশ্যই পুরুষ ও নারী দলকে ঘিরে বৈষম্য এবং ভেদাভেদ দূর করতে হবে। পাশপাশি পুরুষ ও নারী ফুটবলারদের জন্য পৃথক ফুটবল একাডেমি আবাসিক সুযোগসহ একাডেমি বিল্ডিং নির্মাণ ও পৃথকভাবে এর ‘কার্যক্রম’ শুরু করতে হবে। ফুটবলে নারীদের সাফল্য নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা হলেও বাস্তবতায় এই ফুটবল ও খেলোয়াড়দের পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য এখনো প্রয়োজন অনুযায়ী এগিয়ে আসেনি। তাই নারী ফুটবলের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাহলে দেশের নারী খেলোয়াড়রা আর্থিকভাবে উপকৃত হবেন; যার বড় বেশি প্রয়োজন এই ফুটবলকে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
অনেক নারী ফুটবলার আছেন যাঁরা এখনো ভালো ফর্মে আছেন, সব দিক থেকে তাঁরা খেলার সুযোগের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে। যেখানে একজন নারী খেলোয়াড়কে নানা ধরনের বৈষম্য ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। বর্তমানে নারী ফুটবলাররা যে টাকা বেতন পান, তা দিয়ে নিজের পরিচর্যা করা, নিজেকে ফিট রাখা বা খেলা চালিয়ে যাওয়াই কষ্টকর। জীবনধারণ করা তো অনেক দূরের ব্যাপার। তাই অবশ্যই ক্রীড়াঙ্গনে নারী-পুরুষের আয়ের এই বিশাল বৈষম্য বন্ধ করতে হবে। নারী খেলোয়াড়রা যাতে মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তখনই তারা সামনে এগিয়ে যেতে আরও উৎসাহিত হবেন। অর্থাৎ নারী খেলোয়াড়দের প্রতি রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। পোশাক নয়, কাজেই আমাদের চিন্তার জগতের পরিবর্তন আনতে হবে।