চলতি বছরের গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও ৩ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থী নাজমুল হোসেন। কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার তিলাই ইউনিয়নের পশ্চিম ছাঁট গোপালপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম ও ফাহিমা বেগম দম্পতির বড় ছেলে এই নাজমুলসহ পরিবারের দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে।
নাজমুল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে ৮০তম স্থান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে ৪০৭তম স্থান, গুচ্ছভুক্ত ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির পরীক্ষার ফলাফলে ৬৬৬তম স্থান অর্জন করেছে। এ ছাড়া ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছে তার নাম।
মেধাবী নাজমুল ভূরুঙ্গামারী উপজেলার শিলখুড়ি ইউনিয়নের ধলডাঙ্গা উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৪.৫ পেয়ে এসএসসি এবং কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে জিপিএ ৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করে। তার ছোট আরও দুই ভাই লেখাপড়া করে। নাজমুলের বাবা নজরুল ইসলাম একটি দর্জির দোকানে কাজ করেন। মা ফাহিমা বেগম গৃহিনী। দর্জির দোকানে সামান্য মজুরিতে কাজ করা নজরুল ইসলামের পক্ষে পাঁচ সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণের যোগান দেওয়াই কষ্টকর। ছেলের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির খরচ জোগাবেন কীভাবে এ দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার। এ নিয়ে নাজমুলসহ তার মাও রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।
এ বিষয়ে নাজমুল হোসেন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অথবা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছে আছে। কিন্তু অর্থাভাবে সে ইচ্ছে পূরণ হবে কিনা জানিনা। আমাদের একটা গরু ছিলো সেটা বিক্রি করেছি ও এনজিও থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিল মা। কোচিং এর বেতন ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা দিতে যাওয়া আসায় সেই টাকা শেষ হয়ে গেছে। কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা থেকে শিক্ষা বৃত্তি পেলে হয়তো আমার স্বপ্ন পূরণ হতো।
নাজমুলের বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, আমার নিজের কোন জমিজমা নেই। শ্বশুর বাড়িতে থাকি। একটি দর্জির দোকানে কাজ করি। সেখান থেকে যা পাই তা দিয়ে কোনো রকমে চলে ৫ জনের সংসার। ছেলের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন কিভাবে মেটাবো?।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, নাজমুল মেধাবী ছাত্র। সে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেছে।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলার তিলাই ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান বলেন, নাজমুল ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া চালিয়ে আসছে। ওর বাবা একটি দর্জির দোকানে কাজ করেন।। এতদিন অনেক কষ্টে ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছেন। আমাদের সবার প্রচেষ্টা থাকলে নাজমুলের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবে। তাই নাজমুলের স্বপ্ন পূরণে যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসার জন্য আহবান জানাচ্ছি।