কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ার জেরে গৃহবধুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যার অভিযোগ উঠেছে লোকমান মুহুরী নামে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। এমনকি গুরুতর আহত অসহায় ওই গৃহবধূকে যেন কেউ চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে না পারে এজন্য তাকে বাড়ির মধ্যে বন্দি করেও রাখা হয়। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের শিবেরকুটি ময়দানেরঘাট এলাকায়।
শুক্রবার (১৪ জুলাই) রাতে এ ব্যাপারে গৃহবধূর স্বামী ছাইদুল ইসলাম বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ করে লালমনিরহাট সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযুক্তরা হলেন, সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের শিবেরকুটি ময়দানেরঘাট এলাকার মৃত কুদরত উল্লার ছেলে ও কুলাঘাট ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের একজন ইউপি সদস্য লোকমান মুহুরী(৫৫), লোকমানের স্ত্রী নাজিনা বেগম নাজি ও তাদের ছেলে মোঃ নাহিদ(২২)।
অভিযোগ সূত্রে জানাযায়, লোকমান মুহুরী একসময় জাতীয় পার্টির রাজনীতি করতেন। বর্তমানে নিজের ক্ষমতার দাপট বাড়ানোর জন্য তিনি সম্প্রতি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার পর পরেই যেন দাপট বেড়ে যায়। এরইমধ্যে তার বাড়ির পাশের এক রিক্সা চালকের সুন্দরী স্ত্রীর দিকে কু-নজর পড়ে লোকমান মুহুরীর। রিক্সা চালক ছাইদুল জীবিকার তাগিদে অর্থ উপার্জনের জন্য রিক্সা নিয়ে বাহিরে গেলেই লোকমান তার বাড়িতে এসে তার স্ত্রীকে কুপ্রস্তাব দিতেন। কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে তার স্ত্রীকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখাতেন এবং বাড়ি থেকে উচ্ছেদের হুমকীও দিতেন।
এরই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) বিকেলে ছাইদুল রিক্সা নিয়ে বাড়ি থেকে বাহির হলে লোকমান মুহুরী চুপিসারে তার ঘরে প্রবেশ করে এবং তার স্ত্রীকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে তার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়। এতে তার স্ত্রী হতবিহবল হয়ে উপায়ন্তর না পেয়ে লোকমান মুহুরীকে ধাক্কা দিয়ে ঘরের বাহিরে আসে এবং চিৎকার করতে থাকেন। উপায় বেগতিক দেখে লোকমান মুহুরী ঘর থেকে বাহির হয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
এর কিছুক্ষণ পর লোকমান মুহুরী ধারালো অস্ত্র সস্ত্রসহ তার স্ত্রী নাজিনা বেগম নাজি ও ছেলে নাহিদকে নিয়ে আবার তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে তার স্ত্রীর উপর আক্রমণ চালায়। একপর্যায়ে লোকমান মুহুরী তার স্ত্রীর পরনের মেক্সি টানাহেচরা করে ছিড়ে ফেলে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকে। এ সময় তার স্ত্রী মাটিতে লুটিয়ে পড়ে বাচাঁও বাচাঁও বলে চিৎকার করলে আশে পাশের লোকজন ছুটে এসে তার স্ত্রীকে উদ্ধার করতে গেলে লোকমান মুহুরী তাদের হুমকী দিয়ে বলে আমি আওয়ামী লীগ নেতা, আমি একজন মেম্বার, আমি মানুষের বিচার শালিস করি দেখি আমার বিচার কে করতে আসে? পরে এলাকার লোকজন একত্র হয়ে এগিয়ে আসলে তারা পালিয়ে যায় এবং তার স্ত্রীকে উদ্ধার করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করায়। বর্তমানে হাসপাতালে তার স্ত্রী মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত লোকমান মুহুরীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পুর্ন মিথ্যা ও বানোয়াট। তার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতেই পরিকল্পিত ভাবে এসব অভিযোগ আনা হচ্ছে।
লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ওমর ফারুক অভিযোগ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বলেন, এ রকম একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।