নদীমাতৃক বাংলাদেশে একসময় জীবন-জীবিকা, যাতায়াত ও যোগাযোগের প্রধান ব্যবস্থা ছিল নদীপথ। যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে নৌপথই ছিল মানুষের নির্ভরতার নাম। সময়ের সঙ্গে সেই নির্ভরতার জায়গা দখলে নিয়েছে সড়ক পথ। যাত্রী পরিবহনে এখনও দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে নৌপথ ব্যবহারের কদর আছে। তবে পণ্য পরিবহনে নৌপথ অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। বর্তমানে অযত্ন-অবহেলা আর দখল-দূষণে বিপন্ন হওয়ার পাশাপাশি নাব্যতা সঙ্কটে দেশের সব নদণ্ডনদীর করুণ দশা। ইতোমধ্যে হারিয়ে গেছে অনেক নদী। রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাটের পার্শ্ববর্তী শ্যামবাজার, বাদামতলি, সোয়ারিঘাটে পণ্য নিয়ে আসা নৌকা ও ট্রলারের শ্রমিক ও মালিকরা রায়েছেন হতাশায়। ২০ বছর আগেও নদীপথে পণ্য পরিবহনে রমরমা অবস্থা ছিল। এখন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জৌলুস হারিয়েছে নৌপথে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা। দেশের বহু অঞ্চল থেকে রাজধানীতে যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম নৌপথ। এ ছাড়া সারা বছর বহু অঞ্চলে নৌপথে যাতায়াত করা যায়। কিন্তু সড়ক যোগাযোগে সরকারের প্রাধান্য দেয়া এবং নৌপথ নিয়ে গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না করায় দিন দিন নদীগুলো নাব্যতা হারিয়েছে। অবশ্য উজানে ভারত অভিন্ন অনেক নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করায়ও আমাদের অনেক নদী মরে যাচ্ছে। এর ফলে বর্ষাকালে পর্যাপ্ত পানি থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে নদণ্ডনদীতে পানি থাকে না। তবে নিয়মিত নদী খননের অভাবও এই সঙ্কটের জন্য বহুলাংশে দায়ী। সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় মানুষ সড়কপথে বেশি যাতায়াত করছে। যেখানে নৌপথে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন এখনো অনেক বেশি সাশ্রয়ী ও সহজ। তারপরেও দেশের ৩১০টি নদীর বেশির ভাগেই এখন নাব্যতা সঙ্কট তীব্র। এর মধ্যে ১৭৭টি বর্তমানে অস্তিত্ব সঙ্কটে। এসব নদণ্ডনদী আংশিক কিংবা পুরোপুরি মৃত। আগামী কয়েক বছরে নদীতে পানিপ্রবাহ থাকবে কি না সন্দেহ। তাই এ অবস্থায় নদণ্ডনদীর নাব্যতা বজায় রেখে যোগাযোগ স্বাভাবিক রাখতে নৌপথ নিয়ে সরকারের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। তা না হলে এ অবস্থার আরো অবনতি হবে।