যেকোনো দেশে মানুষই সম্পদ। জনসংখ্যায় বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ আমাদের বাংলাদেশ, যদিও আয়তনে বিশ্বে আমরা ৯৪তম। বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৮ কোটির কাছাকাছি। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, গত ৪০ বছরে আমাদের দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। বহুল জনসংখ্যার এই পরিস্থিতিতে দেশে যে সামগ্রিক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, তা মহাদুর্গতির চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। অপরিকল্পিতভাবে ক্রমবর্ধমান এ জনসংখ্যার চাপ দেশের জন্য ভয়াবহ ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তবে এই বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যার কিছু ইতিবাচক অর্জনও আছে। যদিও জনসংখ্যা সমস্যাকে বাংলাদেশের এক নম্বর সামাজিক সমস্যা বলা হয়ে থাকে। এর কারণ বিপুলসংখ্যক মানুষকে আমরা দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে পারিনি। আমাদের জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিণত করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন। গুরুত্ব দেয়া উচিত কর্মমুখী শিক্ষার ওপর। সে ক্ষেত্রে জোর দিতে হবে কারিগরি শিক্ষায়। এ দেশে কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটেনি বললেই চলে। নতুন কোনো কারিগরি প্রতিষ্ঠান সরকারিভাবে যেমন হচ্ছে না, তেমিন বেসরকারি উদ্যোগেও গড়ে উঠছে না। দেশে-বিদেশে প্রচুর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও এই সেক্টরের প্রতি নজর নেই কারও। বিদেশে প্রশিক্ষিত নার্স ও নার্সিংয়ের ওপর ডিপ্লোমা কিংবা উচ্চতর ডিগ্রিধারীদের প্রচুর চাহিদা। এ বিষয়গুলোয় শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিতে হবে। জনসংখ্যা কমিয়ে ফেলাই মূল সমস্যার সমাধান নয়। আজ জনসংখ্যা কমিয়ে ফেললে একসময় তা আবারও বেড়ে উঠবে। তাই জনসংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এমন কিছু প্রকল্প হাতে নিতে হবে এবং এমন কিছু প্রকল্প উদ্ভাবন করতে হবে, যেগুলোর মাধ্যমে জনসংখ্যাকে পরিণত করা যাবে জনশক্তিতে। এর জন্য বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ, পরিকল্পনাবিদদের একত্রে কাজ করতে হবে। আমাদের দেশের বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থা বেকারত্ব ঘোচাতে পারছে না। শিক্ষা খাতে শুধু বরাদ্দ বাড়ালেই হবে না, কর্মমুখী শিক্ষার প্রতি জোর দিতে হবে, বিশেষ করে আইটি ও কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববাজারের চাহিদার ভিত্তিতে বাংলাদেশে বিপুল কর্মক্ষম মানুষকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তাদের কোন ধরনের শ্রমশক্তি প্রয়োজন, তা জানতে হবে। তাদের চাহিদা বুঝে জনশক্তি প্রস্তুত করতে হবে। শিক্ষার বিস্তার কিংবা উচ্চশিক্ষার সুযোগ অবারিত করার বিষয়টির ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেই হবে। শুধু দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রয়োজনেই নয়, বর্তমান বিকাশমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্যও এর কোনো বিকল্প নেই। সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা এবং যুগোপযোগী পদক্ষেপই পারে একটি দেশের জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে। আর এর মাধ্যমেই আমরা গড়ে তুলতে পারব সোনার বাংলাদেশ।